ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যারা এতিমের টাকা চুরি করে, আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, তারা যেন আর কোন দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে

ধারাবাহিক সরকার ॥ অর্থনৈতিক উন্নয়নে চাই

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৮ মার্চ ২০১৮

ধারাবাহিক সরকার ॥ অর্থনৈতিক উন্নয়নে চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাতচল্লিশ বছর আগে যেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, ঠিক সেখানেই লাখো মানুষের জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানালেন তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতা বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তাঁর অপর স্বপ্ন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের অঙ্গীকারের কথাও প্রতিক্ষণে উচ্চারিত হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দীপ্ত কণ্ঠে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের তীব্র জনস্রোতের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা এতিমের টাকা চুরি করে, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তারা (বিএনপি-জামায়াত) যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে, তারা যেন দেশকে আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারে- সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধী, খুনী ও জঙ্গীবাদীরা যেন আর কখনও বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের জনতার প্রতি বলব, এই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী, আগুনে পুড়িয়ে যারা মানুষ খুন করে, এতিমের টাকা চুরি করে, দেশের টাকা পাচার করে, এদেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বিশ্বাস করেন, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে বিশ্বাস করেন, তাদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। তারা যেন আর ক্ষমতায় এসে দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যায়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আহ্বান জানাই।’ ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে বিগত সরকারগুলোর কর্মকা-ের তুলনামূলক বিচার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসী আপনারাই একটু বিবেচনা করে দেখুন- একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই দেশের উন্নয়ন হয়, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। আমার প্রশ্ন- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয় কিন্তু তার পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল সেই জেনারেল জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া সরকার তো দেশের উন্নতি করতে পারেনি। কেন তারা পারেনি? তার মূল কারণ একটাই। তারা তো দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করত না। তারা এ দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করত না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কাজ করতেই ব্যস্ত ছিল। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ^াস করে না, ক্ষমতায় থেকে তারা এ দেশের উন্নতি করবে কেমনে? তারা জানে শুধু নিজেদের উন্নতি করতে। জেনারেল জিয়ার রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস ছেঁড়া গেঞ্জি তো জাদুর বাক্স হয়ে গেছে। যার ভিতর দিয়ে ফ্রেঞ্চ শিফন বের হয়। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা করে নাই। তবে আমাদের একটাই লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। আজকে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে। আমাদের যা উন্নয়ন দরকার তা করছি। আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশাল এ জনসভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মুহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, দক্ষিণের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, যুবলীগের হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসার, যুব মহিলা লীগের নাজমা আখতার, শ্রমিক লীগের শুক্কুর মাহমুদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সুফিয়া খাতুন ও ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে নিজের লেখা অমর কবিতা ‘স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ আবৃত্তি করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। সমাবেশ পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অমর ভাষণটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এবারের সাতই মার্চ তাই এক ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভার আয়োজনেও ছিল বড় প্রস্তুতি। যেন সেই একাত্তরের মতোই গর্জে উঠেছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। জনসভা আহ্বান করা হলেও বুধবার স্মৃতিবিজড়িত এই ঐতিহাসিক উদ্যানে তীব্র জনস্রোতে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। উৎসব-আনন্দে বাদ্য বাজনার তালে তালে হাজার হাজার মিছিলের স্রোতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। মুখে জয় বাংলা স্লোগান আর হাতে দলীয় প্রতীক নিয়ে জনসভায় যোগদানের ফলে পুরো আয়োজনটিই নির্বাচনী জনসভার মতো রূপ নেয়। আয়োজকদের দাবি- ৭ মার্চের জনসমুদ্র নিকট অতীতের লোক-সমাগমের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। জনসভা শুরুর আগে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে সমাবেশ মঞ্চে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও দলের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। জনসভার সময় দুপুর ২টায় নির্ধারিত থাকলেও সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ধরে নানা জায়গা থেকে খ- খ- মিছিল আসতে থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ভোর থেকেই সেখানে নির্মিত বিশাল মঞ্চ থেকে জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সাড়াজাগানিয়া দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়। বেলা ১২টার মধ্যেই অসংখ্য মিছিলের তোড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চতুর্দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে আসার প্রায় দেড় ঘণ্টা আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৩টায় যখন জনসভাস্থলে উপস্থিত হন তখন উদ্যান ছাপিয়ে শাহবাগ, মৎস্যভবন, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা কোন রাস্তায় এতটুকু ফাঁকা ছিল না। পুরো এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণে রেখে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই সাজানো হয়েছিল একাত্তরের ৭ মার্চের মতো করেই। বিশাল মঞ্চের পাশেই স্থাপন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আঙ্গুল উঁচিয়ে বজ্রকঠিন সেই ভাষণ প্রদানের আদলে বিশাল প্রতিকৃতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল লেকে ভাসছিল কয়েকটি আসল নৌকা। পুরো ময়দানকেও সাজানো হয়েছিল অপরূপ সাজে। আওয়ামী লীগ জনসভাটি আয়োজন করলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিও সবার নজর কাড়ে। শুধু ঢাকা মহানগরীই নয়, রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জনসভায় উপস্থিত হন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল মিছিলের স্রোত এসে মিশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঢাকা মহানগর প্রায় একশ’টি থানা থেকেই বিশাল বিশাল মিছিল সবার দৃষ্টি কাড়ে। তবে এবারের জনসভায় ইসমাইল হোসেন সম্রাটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার নেতাকর্মী মাথায় ও গায়ে জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজের মিশ্রণে টুপি ও গেঞ্জি এবং হাতে সংগঠনের পতাকা ও প্লাস্টিকের হাজার হাজার নৌকা নিয়ে সুশৃঙ্খল মিছিল ও জনসভার মূল মঞ্চের সামনে বসে দৃষ্টিনন্দন ডিসপ্লে পুরো জনসভাকেই নির্বাচনী আমেজ এনে দেয়। এছাড়া রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিশাল মিছিলও সবাইকে উজ্জীবিত করে। তবে দুপুর থেকেই তীব্র মিছিলের তোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্নস্থানে সৃষ্ট যানজটের কারণে নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বিশাল জনসমুদ্রে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও মাদকের স্থান হবে না। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ সভায় যারা আছেন অথবা গোটা বাংলাদেশের সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকবে এ বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস এবং মাদক-এইগুলো যেন কোনভাবেই আমাদের যুব সমাজকে নষ্ট করতে না পারে। তার জন্য আপনারা সজাগ থাকবেন। শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বিভিন্ন ধর্মগুরু ও অভিভাবকদেরও সজাগ থাকতে হবে কেউ যাতে এই জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস বা মাদকে জড়িয়ে পড়তে না পারে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পুরো চিত্র সারাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে, পাড়া-মহল্লা, গ্রামে-গঞ্জে তুলে ধরার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে উন্নয়নের কথা জানাতে হবে। আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে একটা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আজকের বাংলাদেশ জাতির পিতার সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সারাবিশে^ সম্মান পেতে যাচ্ছি অতি শীঘ্রই। আমরা এই সম্মান পাব। আমরা আজ কারও কাছে মাথা নথ করে চলব না। আমরা বিশ^সভায় মর্যাদার সঙ্গে চলব। জাতির পিতা আমাদেরকে সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু দেশের ১৬ কোটি জনগণকে খাদ্য দিচ্ছি না। মিয়ানমারের প্রায় দশ লাখেরও উপরে মানুষের উপর অত্যাচার হয়েছে। তারা বাংলাদেশের কাছে আশ্রয় চেয়েছে। মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আমরা মানবতার পরিচয় দিয়েছি। তিনি বলেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কারণে ভারতের মাটিতে আমাদের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। সেই কারণে আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আজকে সারা বিশ^ বাংলাদেশের পক্ষে আছে। সারাবিশ^ বাংলাদেশকে আজকে তারা সম্মান জানাচ্ছে। সাধুবাদ জানাচ্ছে। সরকার প্রধান বলেন, আমরা মানবতার জন্য কাজ করি। আর যারা মানবতাবিরোধী কাজ করেছে। যারা এদেশের মানুষকে গণহত্যা করেছে, লুটপাট করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। মা বোনের ইজ্জত লুটেছে, হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান- এই যুদ্ধাপরাধী ও খুনীরা যেন যেন কোনদিন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। এর জন্য সমস্ত দেশের মানুষ, স্বাধীনতায় বিশ^াসী সকল মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ^াস করেন অত্যন্ত তারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। এসময় মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতুসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা প্রত্যেকটি জায়গায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। প্রত্যেকটি মানুষ যেন কিছু জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে। এগুলো লক্ষ্য রেখে সমস্ত বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। সরকারের এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ইনশ্লাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এই বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। সেই হিসেবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ এই ভাষণের আবেদন কখনো শেষ হবে না। এই ভাষণে জাতির পিতার একদিকে স্বাধীনতার কথা বলেছেন। অপরদিকে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা তিনি বলে গেছেন। তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির পথে যখন পা বাড়িয়ে ছিলেন তখনই তাঁকে আমাদের মাঝ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। তাই আজকে আমাদের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে বিশ^সভায় মাথা উঁচু করে চলতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঙালী চলবে, মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না ॥ বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বাঙালী জাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একটা ভাষাভিত্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিতি লাভ করিয়েছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য মাত্র সাড়ে ৩ বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা। এ অল্প সময়ে একটা দেশকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঠিক সেই মুহূর্তে চরম আঘাত আসে। আবেগ জড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী অন্যায় জাতির পিতা করেছিলেন? দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। এজন্য তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের অবৈধ ক্ষমতা দখলের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর যারা খুনী, জিয়াউর রহমান সেই খুনীদের সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেন, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করেন, তাদের যেন বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। একটি দেশে যখন খুন হয়, তখন সবাই বিচার চায়। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে নেই যে রাষ্ট্রপতিকে খুন করা হয়েছে, তার বিচার হবে না এমন আইন প্রণয়ন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে। আমরা দু’বোন বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি, কিন্তু আমাদের বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। জাতির পিতার নামই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। কিন্তু ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ৭ মার্চের ভাষণই তার প্রমাণ। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটিই আজ আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শত জুলুম-নির্যাতনের মুখেও ওই সময় সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সারাদেশে বাজানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ষড়যন্ত্র করে ২০০১ সালে হারানো হয় ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের চরম নির্যাতন, দুঃশাসন ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১টি বছর দেশের মানুষ বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। এরপর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ শুরু করে। ওই পাঁচটি বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। তিনি বলেন, ২০০১ সালে দেশের সম্পদ গ্যাস বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে রাজি হয়নি বলেই ষড়যন্ত্র করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। ওই নির্বাচনে আমরা ভোট বেশি পেলেও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। সেই নির্বাচনে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে বিএনপি জেনারেল জিয়ার পথ অনুসরণ করে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে তাদের হাতে আমাদের লাখো শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। পাঁচটি বছর সারাদেশে দুঃশাসন চালিয়েছে, হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি করে গোটা দেশকেই সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যখন উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছিল, ঠিক সেসময় তিনটি বছর ধরে বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাসসহ দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে তারা পুড়িয়েছে, প্রায় ৫শ’ মানুষকে পুড়িয়ে তারা হত্যা করেছে। বাস-ট্রাক-লঞ্চ- ট্রেন-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ২১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও প্রাণ দিতে হয়েছে তাদের হাতে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ফোর জিতে চলে এসেছি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশকে যেন কারও কাছে ভিক্ষা করতে না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর কেউ না খেয়ে থাকবে না, দরিদ্র থাকবে না। জাতির জনকের স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবই। স্বাগত বক্তব্যে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনসভার কারণে যারা (নগরবাসী) কষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এরপর থেকে কেবলমাত্র জাতীয় দিবসগুলো ছাড়া অন্য সব আয়োজন ছুটির দিনগুলোতে করা হবে। যারা ৭ মার্চ পালন করে না, তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাই দলের নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে, আগামী নির্বাচনে মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজিত করে আবারও বিজয় ছিনিয়ে আনব।
×