ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিজনেস ফোরামের অনুষ্ঠানে ত্রান দাই কুয়াং

বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী ভিয়েতনাম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৭ মার্চ ২০১৮

বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী ভিয়েতনাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং। তিনি বলেন, এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দু’দেশের বাণিজ্য ১৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখে ত্রান দাই কুয়াং। এফবিসিসিআই, ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশে ভিয়েতনাম দূতাবাস যৌথভাবে এ ফোরামের আয়োজন করে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের সরকারী-বেসরকারীখাতের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিজনেস ফোরামের বৈঠক শেষে মঙ্গলবার রাতেই ত্রান দাই কুয়াং ভিয়েতনামের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিন দিনের এই সফরে তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। তাঁর এই সফরে এবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্র প্রকৌশল খাতে সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে ভিয়েতনামের সঙ্গে তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। সোমবার ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দু’দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ দিকে, বিজনেস ফোরামের বৈঠকে অংশ নিয়ে ত্রান দাই কুয়াং জানান, বাংলাদেশের বিদ্যুত-গ্যাস, টেলিকম, কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ভিয়েতনাম। এ লক্ষ্যে ভিয়েতনাম সরকার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ অভিহিত করে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে আমি অভিভূত। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং উন্নয়নে কাজ করছে। মিঃ কুয়াং বাংলাদেশের চামড়া খাত, হিমায়িত খাদ্য খাত এবং তথ্যপ্রযুক্তিসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে ভিয়েতনামের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাও সে দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের এ দেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বক্তব্য রাখেন। বিজনেস ফোরামের এই বৈঠকে চামড়াজাত ও হিমায়িত খাদ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এফবিসিসিআই ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ পর্বে ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মিঃ গুয়েন চি ডাং এবং শিল্প ও বাণিজ্য উপমন্ত্রী মিঃ চাও কুয়োক হাং বক্তব্য রাখেন। আলোচনাপর্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ পর্বে দু’দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভিয়েতনামে রফতানি করে এবং ভিয়েতনাম থেকে ৪১২ দশমিক ২০মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে কৃষিজাত পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ওষুধ সামগ্রী। আর ভিয়েতনাম থেকে মূলত খনিজ দ্রব্য, বস্ত্র ও বস্ত্র সামগ্রী, যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিক উপাদান আমদানি করা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশ হারে অর্জিত হচ্ছে, যা গত দু’বছরে ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অভাবনীয় সাফল্যের পর বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের দেয়া আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে তিনি ভিয়েতনাম ব্যবসায়ীদেরকে কৃষি, খাদ্য-প্রক্রিয়াকরণ, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রনিক্স প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এ ছাড়াও এফবিসিসিআই সভাপতি তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ, চামড়া, পাট, সিরামিক শিল্প এবং কৃষি উপকরণ ও হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে ভিয়েতনামের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি জানান দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নের লক্ষ্যে এফবিসিসিআই এবং ভিয়েতনামের বেসরকারী খাত ‘বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×