ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধিত এডিপি ২০১৭-১৮ ॥ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৬ মার্চ ২০১৮

সংশোধিত এডিপি ২০১৭-১৮ ॥ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা

আনোয়ার রোজেন ॥ শতভাগ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ছিল শুরু থেকেই। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেয়া হয়েছে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। আট মাস পর এডিপি বাস্তবায়নের সেই চ্যালেঞ্জ থেকে সরকার খুব একটা পিছু হটছে না। এরই মধ্যে রেকর্ড ৬২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশের বেশি। ব্যয় কাটছাঁটের পর সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (আরএডিপি) আকার থাকছে দেড় লাখের ঘরেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। নির্বাচনের বছর হওয়ায় ১০ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এই ধারাবাহিকতায় তিন মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হলো- পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প। সংশোধিত এডিপির খসড়ায় এসব বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনটিতে বরাদ্দ বাড়লেও মূল এডিপি থেকে পাঁচটি মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এগুলো হলো- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ এবং সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্প। এগুলো থেকে বাদ যাচ্ছে মোট ৪ হাজার ২৪ কোটি টাকা। তবে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়েছে মেট্রো রেল প্রকল্পে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার সরকারী বরাদ্দে কোন কাটছাঁট না হলেও বৈদেশিক সহায়তা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর বরাদ্দ কমছে। পদ্মা সেতু ছাড়া যেসব মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে, সবগুলোই বিদেশী সাহায্য নির্ভর। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, যে পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যায়, নানা কারণে কোন বছরেই তার পুরোটা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই প্রতি বছর বিদেশী সাহায্যের অংশে কাটছাঁট করা হয়। তবে চলতি বছর বিদেশী সাহায্য ব্যবহারের পরিমাণ আগের বছরগুলোর চেয়ে ভাল। মাতারবাড়িতে বরাদ্দ দ্বিগুণ ॥ সংশোধিত এডিপির খসড়ায় দ্বিগুণ বরাদ্দ বাড়ছে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পে। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৩২২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে মূল বরাদ্দ ছিল ৪০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১৫২ কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা। বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়েছে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রো রেল) প্রকল্পে। এ প্রকল্পের মূল বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সংশোধিত এডিপিতে অপরিবর্তিত রয়েছে। বরাদ্দ কমছে পাঁচ মেগা প্রকল্পে ॥ পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৮২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ৭০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায় মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ১৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৮ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে মূল বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৭৯৮ কোটি ১১ লাখ টাকা কমিয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৮১১ কোটি ৭ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের মোট বরাদ্দের মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এদিকে দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্পে মূল বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৫৬১ কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের মোট বরাদ্দের খরচ হয়েছে ৬২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পে মূল বরাদ্দ ছিল ৮০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৫৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা কমিয়ে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৩৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। নবেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আট মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৩৮ শতাংশ ॥ এদিকে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়নের গড় অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি। অর্থ ব্যয়ের দিক থেকে আট মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় করা গেছে।
×