ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ইশতেহার পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মার্চ ২০১৮

স্বাধীনতার ইশতেহার পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ইতিহাস জানছে খ-িতভাবে। মার্চের ১, ২ ও ৩ তারিখের ঘটনাই ৭ তারিখের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এদের কোন একটি না ঘটলে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হতো না। স্বাধীনতা আসত না। ২ মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে। ৩ মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। কিন্তু এই ইশতেহার আজও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ২ ও ৩ মার্চ পালনের দাবি জানান। একই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখায় সিরাজুল আলম খান, প্রয়াত আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ ও আ স ম আবদুর রবের রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি করেন। স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস উদযাপন কমিটির ব্যানারে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজক কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ‘বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক’ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি আল মুজাহিদী, বেগম রাবেয়া সিরাজ, ছিন্নমূল হকার্স সমিতির আহ্বায়ক কামাল সিদ্দিকী প্রমুখ। শাজাহান সিরাজ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সচিব ব্যারিস্টার শুক্লা সারওয়াত সিরাজ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অসুস্থতার কারণে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাজাহান সিরাজ অনুষ্ঠানে ছিলেন না। অনুষ্ঠানে তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করা হয়। আলোচনা সভায় আ স ম আবদুর রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাজাহান সিরাজ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে লাখো জনতার সামনে স্বাধীনতার যে ইশতেহার পাঠ করেছিলেন তাতে গণতন্ত্র ছিল, সাম্য ছিল। কিন্তু দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। সাম্য নেই। ক্ষমতাসীনরা আইন-কানুন নিজেদের করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দুটি ধারা ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রকাশ্য নেতা আর নিউক্লিয়াসের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খান ছিলেন অপ্রকাশ্য নেতা। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনিই জয় বাংলা স্লোগানের প্রবক্তা । অথচ আজ তারা বিস্মৃত। যাদের শ্রমে-ঘামে এ স্বাধীনতা, তাদের ভূমিকা ও অবদান পাঠ্যবইয়ে নেই। নতুন প্রজন্ম তাদের চেনে না। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ইশতেহারে নির্ভেজাল গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল। সেই নির্ভেজাল গণতন্ত্র এখন হয়ে গেছে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’। গণতন্ত্রে বাক স্বাধীনতা ও বিরোধী মতের অবস্থান না থাকলে এই উন্নয়নের গণতন্ত্র দিয়ে স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য গণমানুষের মুক্তি অর্জন করা সম্ভব হবে না। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে ইতিহাস না জেনে। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর ‘চার খলিফার’ কাউকে চেনে না। এটা দুঃখজনক। ইতিহাসে যার যেটুকু অবদান, তা স্বীকার করতে হবে এবং প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।
×