ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীরব ঘাতক

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১ মার্চ ২০১৮

নীরব ঘাতক

ধুম-ধাড়াকা গানের শব্দে চারদিক প্রকম্পিত। মনে হয় যেন বুক ধড়ফড়-ধড়ফড় করছে। কেউ মনের আনন্দে নাচছে; আবার কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ইদানীং যেন এসব উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেমগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এক সময় বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে নারীরা নিজ কণ্ঠস্বরে গাইতেন বিয়ের গান; আর এখন সেগুলো ভুলে যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হচ্ছি আমরা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গান বাজানোটা এখন অনেকটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সামান্য কোন অনুষ্ঠানেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এসব উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেমগুলো। একদিকে যেমন হচ্ছে শব্দ দূষণ; অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজের ফলে মানবদেহের হার্টও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। কানের উপরও পড়ছে বিশাল প্রভাব। বিশেষ করে ইদানীং তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ যন্ত্র দানব। আধুনিকতার নামে এসব সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার হয়ে উঠেছে মানুষের নীরব ঘাতক! শখের বসে আমরা ঠিকই এসব উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেমের দ্বারা গান-বাজনা শুনছি, কিন্তু আমরা কী একবার ভেবে দেখেছি এ উচ্চ শব্দ আমাদের শরীরের জন্য কতটা ভাল। না আমরা তা ভাবিনি। তাই তো প্রতিনিয়ত ভুল করে চলেছি। কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করলেই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে উচ্চ শব্দের এসব সাউন্ড সিস্টেম।এগুলোতে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে আমরা আনন্দ উপভোগ করছি। একবার ভাবছিও না কতটা ক্ষতি করছি আমরা আমাদের দেহের। আমরাই শব্দ দূষণ নিয়ে বড় বড় কথা বলছি প্রতিনিয়ত। আমরাই প্রতিদিন শব্দ দূষণ ঠেকাতে নিচ্ছি নানা পদক্ষেপ। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না এতে। সচরাচর এখন ছোট-খাটো কোন অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দের গান বাজানোটা আমাদের রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলোতেও এখন সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছে। দুর্ভাগ্য গানগুলোও ভিনদেশী। অনেকটা এমন যে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি! উচ্চ শব্দের ব্যবহার যেন অনেকটা আধুনিকতার মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। আধুনিক সভ্যতার এ যুগে আমার ঠিকই আধুনিক হয়েছি, শুধু ভুলে গেছি আধুনিকতা তামাশার বিষয় নয় কথাটি। সাউন্ড সিস্টেম বাজানোর বিপক্ষে আমার অবস্থান নয়, আমার অবস্থান উচ্চ শব্দে এসব যন্ত্রগুলো যারা বাজায় তাঁদের উপর। আমরা আধুনিক হতে চাই; অসভ্য নয়। আমাদের আধুনিকতা যেন সমাজের কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। আমি অনেকদিন যাবত লক্ষ্য করেছি অনেকে এসব উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেম বড় ধরনের পাবলিক পরীক্ষার সময়ও রাত-বেরাতে বাজাতে থাকে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া হৃদরোগের বড় একটি কারণ এ সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চ শব্দ। এত এত সমস্যা তবু নেই যেন কোন প্রতিকার। প্রতিবাদ করতে গিয়েও ঝামেলা! দুর্ভাগ্য কেউ কেউ হয় হেনস্ত, নয়ত ঢাকার গোপীবাগের বৃদ্ধ নাজিমুল ইসলামের মতো প্রাণও দিতে হয় বিসর্জন! এই তো গত ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার গোপীবাগের একটি এ্যাপার্টমেন্টে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ঘটে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা। উচ্চ শব্দে গান বাজানোটা নিষেধ করায় উত্তেজিত যুবকদল পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবার। পরিবারের দাবি নিহত নাজিমুল ছিলেন হার্টের রোগী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে শব্দ দূষণ করবেন অথচ বারণ করলে তেড়ে এসে মারবেন। এ কেমন বিচার! অচিরেই এসব সাউন্ড সিস্টেমের উপর বিধিনিষেধ আরোাপ করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিহার হোক উচ্চ শব্দের গান, পরিহার হোক শব্দ দূষণ। চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে
×