ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে নকল পণ্যের ছাড়াছড়ি ॥ ক্রেতা প্রতারিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কেরানীগঞ্জে নকল পণ্যের ছাড়াছড়ি ॥ ক্রেতা  প্রতারিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ॥ কেরানীগঞ্জের ফুটপাথে প্রতিদিন নকল পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। এর মধ্যে প্রসাধন সামগ্রীই বেশি। নকল সেন্ট, পাউডার, নেইলপলিশসহ সব ধরনের কসমেটিক্স সেখানে পাওয়া যায়, প্রায় সবই সকল। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, মান্দাইল, কালিন্দী, রুহিতপুর বাজার, কালীগঞ্জ বাজার, আগানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন সকল কসমেটিক্স ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসে। নানা ধরনের দেশী-বিদেশী আকর্ষণীয় বোতলে রংবেরঙের বিভিন্ন সাইজের বোতল যে কাউকে আকর্ষণ করে। সেন্টের বোতলের মধ্যে যে সকল সেন্ট সাধারণত মাঝারি ধরনের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে পাওয়া মুশকিল, সে ধরনের দুর্লভ সকল সেন্টও ফুটপাথে নিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। সেসব দুর্লভ সেন্টের দামও একেবারে হাতের নাগালে। যেসব বিদেশী সেন্টের দাম অর্ধশতাধিক ডলার সেসব সেন্ট আলাদীনের জাদুর চেরাগের মতো মাত্র ৩০ থেকে এক শ’ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবসায়ীদের কম দামে সেন্ট বিক্রির কারণগুলো জানা গেছে। এ ব্যবসায় সঙ্গে তিন ধরনের লোক জড়িত। এক গ্রুপ রয়েছে যারা ঢাকা মহানগরীর অভিজাত সব আবাসিক এলাকায় হেঁটে হেঁটে খালি সেন্টের বোতল কিনে থাকে। সেন্টের খালি বোতলের ক্রেতাদের বেশি আনাগোনা দেখা যায়। বোতলটি মরিচা পড়া না হলে এবং দেখতে ঠিক নতুনের মতো ঝকঝকে হলে ভাল দামে কিনে নেয়। সাধারণত একটি বোতল ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে তারা খরিদ করে। খরিদকৃত বোতল বিক্রি করে দেয় দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে। এ গ্রুপের কাজ হলো অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে বোতলের ছিপিটি খুলে নেয়া। এরপর বোতলে ঢোকানো হয় পরিমাণমতো পানি, কেরোসিন অথবা নি¤œমানের সেন্ট। আর এই বোতলের ওপর স্প্রে করা হয় সুগন্ধিযুক্ত সেন্ট যাতে ছিপি খোলার সঙ্গে সঙ্গে মোহনীয় গন্ধে ক্রেতার মন ভরে যায়। এ কাজগুলো করার জন্য মৌলভীবাজার, কোতোয়ালি, জিনজিরা, শ্যামপুর, শহিদনগর, কামরাঙ্গীচর এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড কারখানা রয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নজরানা দিয়ে এসব কারখানা চালানো হচ্ছে। তৃতীয় গ্রুপের কাজ হলো বোতলের পসরা সাজিয়ে ফুটপাথে, পার্কের কাছে জনাকীর্ণ স্থানে অথবা যে কোন সুবিধামতো স্থানে বসে পড়া। প্রতেক সেন্ট বিক্রেতার সঙ্গে ২-১ জন করে দালালও থাকে। কেউ একটি সেন্টের বোতল দেখতে চাইলেই বিক্রেতা এটি ফ্রান্সের অরজিনাল, একদম ফ্রেশ ৫ দিনেও গন্ধ যাবে না এ ধরনের ছোটখাটো লেকচার দিয়ে দেয়। দালাল বলবে ভাই নিয়ে নেন আমিও কিনেছি। ফ্রান্সের তৈরি একদম খাটি মাল। ক্রেতা সেন্ট দেখার পর অথবা দাম জিজ্ঞাসা করে চলে আসতে চাইলে তাকে বিক্রেতা ও তার দলাল বাহিনীর কাছে অপমানিত হতে হয়। এ ধরনের প্রতারণা আগে গুলিস্তান, মতিঝিল, দেখা যেত কিন্তু এখন কেরানীগঞ্জে অহরহ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় সেন্টের পুরনো বোতল সংগ্রহ, মেরামত, বিক্রি একই ব্যক্তি অত্যন্ত নিপুণভাবে করে থাকে। সেন্টের বোতলে অত্যাধুনিক মোড়কও তারা চাহিদা ও প্রয়োজনমতো বানিয়ে নেয়। সেন্টের বোতলের পাশাপাশি বিক্রি হয় দেশী-বিদেশী উন্নতমানের নামধারী বিখ্যাত কোম্পানির পাউডার। এর রহস্য হিসেবে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খালি পাউডারের কৌটা সংগ্রহ করা হয় এরপর সযতেœ মুখটি খুলে অত্যন্ত নি¤œমানের নকল পাউডার ও চকের গুড়া, চুন ইত্যাদি ভরা হয়। এর পর ভালভাবে লেবেল এটে দেয়া হয়। পরে এগুলোই সাধারণত বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও কসমেটিক্সের দোকানে সাপ্লাই দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে। যেগুলো কসমেটিক্সের দোকানে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না, সেগুলোই ফুটপাথে নিয়ে বসে বিক্রেতারা। সেন্ট ও পাউডারের মতো নেইলপলিশ, বডি স্প্রে, লোশন, ভেসলিনসহ সব ধরনের নকল পণ্যই এখন পাওয়া যাচ্ছে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাথে। এগুলোর কোনটির গায়ে বিখ্যাত সব কোম্পানির লেবেল দেয়া থাকে। কোনটি আবার নামের সামান্য ২-১ অক্ষর পরিবর্তন করে লেবেল দেয়া হয়। কলগেট নামের টুথপেস্ট সেভিং ক্রিমসহ অনেক পণ্যই সে বিক্রেতাদের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জের চড়াইল এলাকার গৃহবধূ আসমা আক্তার জানান, কিছুদিন আগে বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু উপর থেকে বিভিন্ন কসমেটিক্সের পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতার কাছ থেকে ফ্রান্সের তৈরি চ্যানেল কোম্পানির লেভেল লাগানো ১টি সেন্ট খরিদ করি। কিন্তু বাসায় ফিরে সেন্ট গায়ে দেয়ার ৫ মিনিট পরে দেখি সেন্টের গ্রাণ তো নেই বরং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
×