ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালার খসড়া প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালার খসড়া প্রকাশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব ধরনের ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়ায় পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ন্যূনতম ৩৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর পূর্ণাঙ্গ ব্রোকারেজ সেবা দিতে হলে সিকিউরিটিজ হাউসগুলোকেও ন্যূনতম ১৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। সম্পদ ব্যবস্থাপক, তহবিল ব্যবস্থাপক, ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি, ট্রাস্টি, কাস্টডিয়ানসহ বাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এ বিধিমালার আওতায় ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা) বিধিমালা-২০১৮-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক স্টক ব্রোকার ও ডিলারকে ন্যূনতম রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে সাধারণ স্টক ব্রোকিংয়ের ক্ষেত্রে ৫ কোটি, হোলসেল ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩ কোটি, মার্জিন ঋণ পরিচালনার ক্ষেত্রে আরও ৫ কোটি, স্টক ডিলার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আরও ২ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। সার্বিকভাবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সিকিউরিটিজ হাউসকে ন্যূনতম ১৫ কোটি টাকার মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে ন্যূনতম ৩৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু ইস্যু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৫ কোটি, অবলেখনের ক্ষেত্রে ১৫ কোটি, পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১৫ কোটি ও তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকার রেগুলেটরি মূলধন থাকতে হবে। সম্পদ ব্যবস্থাপকদের ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনার জন্য প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধনের অতিরিক্ত ৫ কোটি কিংবা ১০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বড়, সে পরিমাণ রেগুলেটরি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার জন্য আরও অতিরিক্ত ২ কোটি টাকার মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যদিকে যে কোন ফান্ডের উদ্যোক্তা হতে চাইলে নিজের সাবস্ক্রিপশনের সমপরিমাণ অর্থ রেগুলেটরি মূলধন হিসেবেও সংরক্ষণ করতে হবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোকে। বিকল্প বিনিয়োগ বিধিমালার আওতাধীন তহবিল ব্যবস্থাপকদের ক্ষেত্রে বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধনের বাইরে আরও ২ কোটি টাকার মূলধন থাকতে হবে। আর উদ্যোক্তা ও তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা ও তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে সাবস্ক্রিপশনের জন্য আইনে যে ন্যূনতম সীমা নির্ধারিত রয়েছে, তার সমপরিমাণ অতিরিক্ত মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক মূলধনের সঙ্গে আরও ৫ কোটি টাকা যোগ করে ন্যূনতম রেগুলেটরি মূলধন হিসাব করতে হবে। আর ট্রাস্টি, সিকিউরিটিজ কাস্টডিয়ান ও কাস্টডিয়ানের ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধনের ১৫০ শতাংশ অর্থ রেগুলেটরি মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এর বাইরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম রেগুলেটরি মূলধন বিএসইসি নির্ধারণ করে দেবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা কাঠামোর আওতায় সব ইন্টারমিডিয়ারিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট দায়ের ৮ শতাংশ অর্থ অথবা স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের ৪ কোটি, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকদের ৫ কোটি, সম্পদ ব্যবস্থাপক ও তহবিল ব্যবস্থাপকদের ২ কোটি এবং ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোর জন্য ১ কোটি টাকা, যেটি বেশি হবে সে পরিমাণ নগদ মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ন্যূনতম রেগুলেটরি মূলধন ও নগদ মূলধনের বাইরে ইন্টারমিডিয়ারিগুলোকে ব্যাপক ডিসক্লোজারের আওতায় আনারও প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। প্রত্যেক মাস কিংবা প্রান্তিক শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। প্রতিবেদনে সমন্বিত আয়, ব্যাংক ঋণ, অগ্রিম, ঋণ সুবিধা, মোট মূলধন, মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত ও নগদ মূলধনের তথ্য থাকতে হবে। পর্যাপ্ত মূলধন নিশ্চিত করার বিষয়ে কমিশন কিংবা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে লিখিত আকারে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে কমিশন যে কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারবে। এদিকে নির্ধারিত ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে না পারলে কোন ইন্টারমিডিয়ারি তার শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
×