ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুশ্চিন্তায় জ্বালানি বিভাগ

এলএনজি আমদানির সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এলএনজি আমদানির সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সরকার এবং দাতাসংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখনও ঋণের সংস্থান করা সম্ভব হয়নি। এদিকে চলতি বছর থেকে দেশে নতুন জ্বালানি এলএনজি আমদানির জন্য প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জ্বালানি বিভাগ এক চিঠিতে জানিয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী এপ্রিল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হওয়ার কথা। যদিও শেষ পর্যন্ত এই লক্ষ্য ঠিক রাখা সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। পেট্রোবাংলা বলছে ঠিক এপ্রিলে না হলেও চলতি বছরের মাঝপথে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। এরমধ্যেই পাইপ লাইন নির্মাণের কাজও শেষ করবে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এখন মহেশখালীতে এক্সিলারেট এনার্জি, সামিট গ্রুপ ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এছাড়া সাঙ্গুর অবকাঠামো ব্যবহার করে ছোট আকারের জাহাজে দেশে এলএনজি আনা হবে। এক্সিলারেট এবং সামিটের টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা সম্ভব। অন্যদিকে সাঙ্গুর অবকাঠামো দিয়ে আরও দেড় থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি আমদানি করা হবে। জ্বালানি বিভাগ জানায়, এলএনজি আমদানি করতে ১১ হাজার ৮৪২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা প্রয়োজন। সরকার এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে অর্থ চেয়ে জ্বালানি বিভাগ চিঠি দেয়। ডিসেম্বরে এক চিঠিতে জানায়, এলএনজি খাতের অর্থ সংস্থানের বিষয়ে বিইআরসি জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে টাকা দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও পুরো টাকা দেয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় টাকার মধ্যে ছয় হাজার ৩৬০ কোটি ৩২ লাখ টাকার সংস্থান তারা করতে পারবে। কারণ জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে এর চেয়ে বেশি অর্থ নেই। বিইআরসি বাকি টাকা সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে নেয়ার পরামর্শ দেয় জ্বালানি বিভাগকে। ঘাটতি এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৪৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এই ব্যয়ের বিষয়ে ৭ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত অর্থ পাওয়ার বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশে গ্যাসের দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর সরবরাহ করা সম্ভব হবে দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে অন্তত ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের একটি সঙ্কট তৈরি হবে। সরকার আশা করছে এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হলে এই চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে সমাঞ্জস্য আনা সম্ভব হবে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, অর্থসংস্থান করতে ২৪ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব যাচ্ছেন ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সফরকালে এই প্রতিনিধি দল ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড এ্যান্ড ফিন্যান্স কর্পোরেশনের (আইটিএফসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। জ্বালানি বিভাগ বলছে, এলএনজি দেশে আনা হলে তা দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বিক্রি করা হবে। গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়ালেই এই ঘাটতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। কিন্তু আমদানির শুরুতে মূলধনী বিনিয়োগ দরকার। এই বিনিয়োগের অর্ধেকটা হাতে থাকলেও আর অর্ধেক নিয়ে চিন্তায় রয়েছে জ্বালানি বিভাগ। যদিও দেশের গ্যাস বিতরণ এবং উৎপাদন কোম্পানির হাতে এমন হাজার হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে রয়েছে। বিপুল এই অর্থে অন্যরা ব্যবসা করলেও সরকার কেন অর্থ পাচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
×