ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফের শততম জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফের শততম জন্মদিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৃজনশীলতার ভুবনে বহুমুখী প্রতিভায় উজ্জ্বল এক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ। কবিতা রচনায় অনায়াস তার বিচরণ। কড়া নাড়া শব্দের বুনটে পাঠকের চৈতন্যে আলোড়ন তোলে এই কবিতার। তবে সৃষ্টিশীলতার ভুবনে কবিতার পাশাপাশি সমান্তরালে লিখেছেন উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও কিশোরসাহিত্য। সাবলীল ভাষায় লিখেছেন আত্মজীবনী। আর অনুবাদে রেখেছেন অনন্য এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তার মাধ্যমেই প্রথম বাংলায় অনুদিত হয় পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসীর বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ‘শাহনামা’। সেই সুবাদে ‘বাংলার ফেরদৌসী’ নামে অভিহিত করা হয় এই কীর্তিমানকে। আজ মঙ্গলবার প্রয়াত এই কবির শততম জন্মদিন। ১৯১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কিশোরগঞ্জ মহকুমার তাড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন এই কবি। এবার সাড়ম্বরে উদযাপিত হবে কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফের শততম জন্মদিন। শাহনামা-অনুবাদক এই কবির শততম জন্মদিন উপলক্ষে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছে মনিরউদ্দীন ইউসুফ জন জন্মশতবর্ষ উদযাপন পরিষদ। এই পরিষদের উদ্যোগে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি জন্মদিন উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ, প্রবন্ধ, জীবনী, কিশোরসাহিত্য, ছড়া সংকলন, গবেষণা, দিনলিপি, পত্রসাহিত্য ও প্রবন্ধ সাহিত্য ৪১টি গ্রন্থ রচনা করেছেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। ফেরদৌসীর শাহনামার বাংলা অনুবাদ তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। ছাত্রজীবনে লেখালেখির সূচনা করে মনিরউদ্দীন ইউসুফ। ছাত্রাবস্থায় লিখেছেন ছাত্রজীবনে উপয়ন নামে একটি কবিতার বই। পরবর্তীতে তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ ‘রাত্রি নয় কলাপি ময়ূর নয়’, ‘বেতস পাতা জলের ধারা’ ও ‘এক ঝাঁক পায়রা’ ২০১৩ সালে তার কবিতার বইগুলো নিয়ে কবি বলাল চৌধুরী সম্পাদনা করেন কাব্যসমগ্র। মনিরউদ্দীন ইউসুফের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস হচ্ছে ‘ঝড়ের রাতের শেষে’। এতে উঠে এসেছে সমকালীন সামাজিক বাস্তবতার চিত্র। তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপন্যাস হচ্ছে ‘পনসের কাঁটা ও ‘ওর বয়েস যখন এগারো’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের কাহিনীকে উপজীব্য করে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। ২০০৩ সালে আবদুল হাই শিকদার তার রচিত উপন্যাসগুলো নিয়ে উপন্যাসসমগ্র সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। ফারসীর পাশাপাশি ইংরেজী রচনার অনুবাদে বিশেষ পারঙ্গম ছিলেন মনিরউদ্দীন ইউসুফ। ফেরদৌসী ছাড়াও তিনি কবি ইকবাল ও গালিবের কবিতার বাংলায় অনুবাদ করেছেন। তার অনুদিত শাহনামা ১৯৭৭ সালে প্রথম খ- এবং ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় খ-ে প্রকাশিত হয়। তার মৃত্যুর পর ১৯৯১ সালে ছয় খ-ে শাহনামা প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। বাংলা সাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মনিরউদ্দীন ইউসুফ ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদক এ ভূষিত হন। ১৯১৯ সালে জন্ম নেয়া মনিরউদ্দীন ইউসুফের বাবা মিসবাহউদ্দীন আহমদ ও মা সানজিদা খাতুন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে তিনি ১৯৩৮ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লী চলে যান। দিল্লী যাওয়ার পর ইউসুফ চাকরি নিয়ে মুম্বাই চলে যান। নয় মাস থাকার পর ফিরে আসেন দেশে। এরপর কিছুদিন ব্যবসা করেন। ঢাকায় এসে প্রথমে ডেইলি অবজারভার এবং পরে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় চাকরি করেন। পরবর্তীতে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের জনসংযোগ বিভাগে এডিসি পদে যোগদান করেন। তিনি কৃষি উন্নয়নে কর্পোরেশন থেকে প্রকাশিত ‘কৃষি সমাচার’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৭৯ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
×