ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই জার্নালে প্রকাশ পাবে

চাঁপাইয়ের ‘ক্ষীরশাপাতি’ আম জিআই নিবন্ধন পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চাঁপাইয়ের ‘ক্ষীরশাপাতি’ আম জিআই নিবন্ধন পাচ্ছে

ওয়াজেদ হীরা ॥ জামদানি এবং ইলিশের পর এবার ‘জিআই’ (গ্লোবাল ইনডেক্স বা ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত ‘ক্ষীরশাপাতি’ জাতের আম। এ ব্যাপারে গেজেট জারি প্রক্রিয়াধীন। নিবন্ধনের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করেছেন দেশীয় প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট ডিজাইন এ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদফতর (ডিপিডিটি)। খুব শীঘ্রই তা জিআই জার্নালে প্রকাশ করা হবেও জানা গেছে। কোন একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোন একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অর্থাৎ সেই পণ্য শুধু ওই এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও উৎপাদন করা সম্ভব নয়। ক্ষীরশাপাতি ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের আরও দুটি জাত ল্যাংড়া ও আশ্বিনাকেও জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়েছে। ওইগুলো নিবন্ধনের ব্যাপারেও আশাবাদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসন ও ফল বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই আমের মিষ্টতার পরিমাণ, আকার, ওজন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও আদর্শ। এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের আম। সম্ভাবনা বিবেচনা করে ও আমের স্বত্ব (প্যাটেন্ট) সুরক্ষার চিন্তা থেকেই ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আমকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করা হয়। নিবন্ধন পেলে সুস্বাদু জাতের এই আম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম’ নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাসহ বিশ্ব বাজারে পরিচিত হবে। ফলে উপকৃত হবেন জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। দেশে উৎপাদিত মোট আমের প্রায় ২৫ শতাংশই বর্তমানে ক্ষীরশাপাতি জাতের। প্রতি বছর রফতানি আমের মধ্যেও শীর্ষে এ জাতের অবস্থান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ শরফ উদ্দিনের মতে, প্রথমে আমরা আবেদন করেছি। তারা আবার বলছেন, এভাবে একটু দেখেন কিংবা অনন্য বৈশিষ্ট্যটা এমন হওয়া উচিত। এভাবে করতে করতে আমরা প্রায় একবছর ধরে কাজটা করলাম। আমরা আশা করছি, ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমের প্রথম জাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। জানা গেছে, প্রায় ২’শ বছর আগে ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট উপজেলায় গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানে অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো ক্ষীরশাপাতি। এছাড়া ১৯৫৫ সালে স্থানীয় লোকসঙ্গীত আলকাপ গানের বন্দনা ছড়ায় উল্লেখ রয়েছে ক্ষীরশাপাতি আমের কথা। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই জাতটি। ক্ষীরশাপাতি জাতের বিশ্বব্যাপী নিবন্ধনের সম্ভাবনায় জেলার চাষী, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। পেটেন্ট ডিজাইন এ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার (জিআই ইউনিটের দায়িত্বে) মো আজিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি জার্নাল চূড়ান্ত করে এখন বিজি প্রেসে পাঠিয়েছি। ছাপানোর তারিখ থেকে আমরা দুই মাস অপেক্ষা করব, কারও কোন আপত্তি থাকলে সেটা শোনার জন্য। কারও আপত্তি না থাকলে আমরা ক্ষীরশাকে নিবন্ধন দিতে পারব। পূর্বের দুটির ক্ষেত্রে কোন আপত্তি না থাকায় এখানে কোন আপত্তি আসবে না বলেই মনে করেন তিনি।
×