ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সহনশীলতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এই সঙ্কটের অবসান হতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এই সঙ্কট সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপক্ষীয়) কামরুল আহসান, ইউরোপ উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর এবং ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক তাকে স্বাগত জানান। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাত করেন। রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন বরিস জনসন। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে আমরা অবহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এই সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। এ প্রক্রিয়া একেবারে চূড়ান্ত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে বলে জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়ে শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বরিস জনসন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এবং তাদের যে দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছে তা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মানবিক বিপর্যয়গুলোর অন্যতম। এটা একটা মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় যা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সহনশীলতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। এতে বলা হয়, বরিস জনসন বাংলাদেশের পর মিয়ানমার এবং তারপর থাইল্যান্ড সফর করবেন। বিবৃতিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, এই মানুষগুলো যে ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গেছে সেই অভিজ্ঞতা আমি নিজ কানে শুনতে এবং তাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে চাই। এই মানবিক সঙ্কটের সুরাহায় সবাই মিলে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে আমি স্টেট কাউন্সেলর আউং সান সুচি ও অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলব। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েক দশক ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের ওপর গত ২৮ আগস্ট থেকে নতুন করে দমন অভিযান শুরু করে সেদেশের সেনাবাহিনী। সেখানে নিধনযজ্ঞের মুখে এই কয় মাসে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সহিংতার মুখে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা আরও চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। বরিস জনসন আজ শনিবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে যাবেন তাদের কষ্টের কথা তাদের মুখ থেকে শুনতে। সেখান থেকে তিনি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। মিয়ানমার থেকে তিনি থাইল্যান্ড সফরে যাবেন। এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সব ধরনের কার্গো পাঠানোর ওপর ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য সফর করে। ওই সময় দুই পক্ষই একমত হয় যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এখন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে । উল্লেখ্য, বরিস জনসন ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে লন্ডনের মেয়র পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গত এক দশকে প্রথম কোন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এলেন বরিস জনসন।
×