ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

অসাম্প্রদায়িক স্বদেশের প্রত্যাশায় শুরু একুশের অনুষ্ঠানমালা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অসাম্প্রদায়িক স্বদেশের প্রত্যাশায় শুরু একুশের অনুষ্ঠানমালা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফিরে ফিরে ডাক দিয়ে যায় একুশে ফেব্রুয়ারি। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালীর রক্তধারায় বয়ে যায় চেতনার বিচ্ছুরণ। ভাষাশহীদদের রক্তের ঋণে ব্যক্ত হয় সম্প্রীতিময় স্বদেশ গড়ার অঙ্গীকার। বছর ঘুরে আসা সেই ভাষার মাসে উচ্চারিত হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়। একুশের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ো সেøাগানে শুরু হলো একুশের অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুই সপ্তাহব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয় বৃহস্পতিবার। একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান এ আয়োজনে ভাষাশহীদদের স্মরণ করে প্রতিদিন গাওয়া হবে গান, শিল্পিত উচ্চারণে পাঠ করা হবে কবিতা। সেই সঙ্গে পরিবেশিত হবে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বিত নৃত্য, শিশু-কিশোর পরিবেশনা এবং মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বহুমাত্রিক বিষয়ভিত্তিক পথনাটক। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। জোট নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান কবি, আবৃত্তিশিল্পী, নাট্যকর্মীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। এরপর পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। মৌনতা শেষে গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের কণ্ঠে ভেসে বেড়ায় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের সুর। জাতীয় সঙ্গীতের পর গীত হয় একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। ভাষার জন্য প্রাণ সঁপে দেয়া শহীদদের স্মরণে ১৪ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। উদ্বোধনী আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের ফকির আলমগীর, অনুষ্ঠান উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ঝুনা চৌধুরী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, পথনাটক পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য মিজানুর রহমান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য রফিকুল ইসলাম, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান। হাবীবুল্লাহ সিরাজী রচিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ শিরোনামের কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম। ‘আমরা নব্বইয়ের সন্তান’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মানজার চৌধুরী সুইট। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল গান, কবিতা ও পথনাটকে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উদ্বোধনী বক্তব্যে রামেন্দু মজুমদার বলেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। এই সাম্প্রদায়িকতার হাত ধরেই উত্থান ঘটেছে জঙ্গীবাদের। তাই যেসব দল বা গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে যেন কেউ সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দূর হয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। সত্য ও সুন্দরের জয়গান গেয়ে সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গড়তে হবে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বায়ান্নর একুশে আলো বাঙালীকে দিয়েছে পথের দিশা। দীর্ঘ গণসংগ্রামের পর দেশ আজ ফিরেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ তৈরি করছে নানাভাবে। জাতির বিকাশের অমিত সম্ভাবনা বাস্তব করে তুলতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে সৃজনশীল সংস্কৃতির চর্চা ও প্রসারতা। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী বেলায়েত হোসেন ও রেজীনা ওয়ালী লীনা। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বাঙালীর সংগ্রামের প্রেরণাদায়ী গান শুনিয়েছেন সমর বড়ুয়া, আরিফ রহমান ও আবিদা রহমান সেতু। শহীদ মুনীর চৌধুরী রচিত কবর নাটক পরিবেশন করে সময় নাট্যদল। আজ শুক্রবার থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলবে একুশের অনুষ্ঠানমালা। আজ দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে রয়েছে দলীয় ও একক গান, দলীয় ও একক আবৃত্তি, নৃত্য, শিশু-কিশোর পরিবেশনা এবং পথনাটক। পরবর্তীতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে পর্যন্ত আয়োজনটি স্থানান্তরিত হবে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে।
×