ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে কাজ করবে ইইউ

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে কাজ করবে ইইউ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে ব্রান্ডিং করতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সোমবার এক ইইউ রাষ্ট্রদূত সেমিনারে রেঁজে তিরিঙ্ক বলেন, বাংলাদেশের ইমেজকে বহির্বিশ্বে এবং বিশেষ করে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে রি-ব্রান্ডিং করতে হবে। এজন্য বিকেএমইএ’র মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে। ‘স্ট্রেনদেনিং বাই-ল্যাটারাল ট্রেড রিলেশনশিপ বিটুইন বাংলাদেশ এ্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ শীর্ষক এই আলোচনায় ইইউ রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিট সেক্টরের ভূমিকার প্রশংসা করেন। অতীতের মতো ইইউ বাংলাদেশের নিট খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের নিট কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে অবস্থায় উন্নীত হয়েছে তা বজায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, নিট খাতের গ্রিন কারখানাগুলো টেকসই শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিট উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছার বহির্প্রকাশ করে। বিকেএমইএ ঢাকা কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেঁজে তিরিঙ্ক বিকেএমইএ’র সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ। আলোচনায় আধুনিক নিট কারখানা, জিএসপি ইস্যু, আইএলও কোর কনভেনশন, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট, গ্রিন ফ্যাক্টরি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, কমপ্লায়েন্স ইস্যু ও রানা প্লাজা পরবর্তী ইতিবাচক ইমেজ তৈরিতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেঁজে তিরিঙ্ক। আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিটওয়্যারের অবদান, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ের মধ্যে নিটওয়্যার কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক সম্পকর্, এই শিল্পের উন্নয়নে বিকেএমইএ’র গবেষণা, উন্নয়ন সেল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্ভাবনা একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরে। এতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে ইউরোপের দেশগুলাতে নিটওয়্যার রফতানিতে জিএসপি পেয়ে আসছে। যা বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। তবে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে বর্তমানে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) প্রকল্পের আওতায় প্রাপ্ত জিএসপি সুবিধা (বিনা শুল্কে রফতানি) ২০২৪ সালের পরে বাংলাদেশের জন্য থাকবে না। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস (মোট পণ্যের দুই তৃতীয়াংশ শুল্ক সুবিধা পাবে) সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবে। কিন্তু এই সুবিধা পেতে গেলে বাংলাদেশকে আইএও’র ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে যা অনেক কষ্টসাধ্য। তাই বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে ইবিএ সুবিধা আগামী ১২ বছর অব্যাহত রাখতে ইইউ রাষ্ট্রদূতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। সেমিনারে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের এই পর্যায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পিটিএ চুক্তির ব্যাপারে অভিমত প্রদান করা হয়; যা দীর্ঘ মেয়াদে একটি সামগ্রিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এতে আরও বলা হয়, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের প্রথম দুটি স্তর বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে। তৃতীয় স্তরটি যেহেতু ক্রেতাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে সেহেতু বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে তাদের বায়ার ও কনজ্যুমারদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা তৈরির জন্য রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে নন-ট্যারিফ বাধা দূর করার জন্যও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করা হয়। সেমিনারে জানানো হয়, বিকেএমইএ’র তত্ত্বাবধানে ২০২১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২০০টি কারখানাকে গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনায় আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের জন্য ইউরোপিয়ান সহযোগিতা কামনা করা হয়। এক্ষেত্রে ইইউ-এর অনুদানকৃত ‘হরায়জন-২০২০’ প্রকল্পে বিকেএমইএ’কে অন্তর্ভুক্ত করে নিট সেক্টরে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য ইইউ-এর কাছে প্রস্তাব করা হয়। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প, প্রেস ও তথ্য বিভাগের প্রধান কন্সটেনটিনো ভারদাকিস, বিকেএমইএ’র দ্বিতীয় সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, পরিচালক মোস্তফা জামাল পাশা, আশিকুর রহমান, শেখ এইচ এম মোস্তাফিজ, মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, সাবেক সহ-সভাপতি (অর্থ) ও বর্তমান পরিচালক জিএম ফারুকসহ বিকেএমইএ’র উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
×