ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বসভায় বাঙালীর বই

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিশ্বসভায় বাঙালীর বই

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা জাতীয় পর্যায়ে এক অনন্য আয়োজন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবে অভিষিক্ত হয়েছে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনীতে ভাষা সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতির চর্চা বেগবান করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি যথার্থই বলেছেন, বাঙালীর ভাষা শিল্প সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। দিন দিন বইমেলায় পাঠক বাড়ছে। বইমেলাকে কেন্দ্র করে জনপ্রিয় সাহিত্য দিন দিন বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে মৌলিক সাহিত্য, বিজ্ঞান কিংবা অন্য শাখার বই তেমন প্রকাশ হচ্ছে না। শুধু বইমেলা এলেই বই প্রকাশ করতে হবে এটা ঠিক নয়। সারাবছর গুণগত মানের বই প্রকাশ করা দরকার। পাঠকের কাছে ভাল মানের বই পৌঁছে দিতে হবে। বইয়ের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করতে ও বই বিক্রি বাড়াতে দেশব্যাপী গ্রন্থাগার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবার কাছে বই পৌঁছে দিতে বইয়ের সামষ্টিক সংরক্ষণাগার দরকার। গ্রন্থাগার আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে পারলেই আমাদের স্বপ্ন সার্থক হবে। আমাদের গ্রন্থমেলা পাঠক সৃষ্টি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আমরা আক্ষেপ করে বলে থাকি, আমাদের বাংলা সাহিত্যের অন্তত পাঁচ-সাতজন নোবেল পেতেন যদি ভাল ইংরেজী অনুবাদ হতো। বাংলা একাডেমি অনুবাদ সাহিত্যের দিকে আরও মনোযোগী হোক, এটাই প্রত্যাশা। ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় গিয়ে আমাদের প্রকাশনা শিল্পের নেতৃবৃন্দ অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। পৃথিবীর বইমেলায় বাংলাদেশকে ‘থিম কান্ট্রি’র মর্যাদা পেতে হবে। তার জন্য দরকার আমাদের সাহিত্যের সেরা সৃষ্টিগুলো ইংরেজীতে অনুবাদ করে বিশ^সভায় উপস্থাপন করা। জ্ঞানই যদি মুক্তি হয় তাহলে জ্ঞানার্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম এখনও গ্রন্থই মানুষের মুক্তির দিশারী। আর এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই প্রতিবছর নতুন বইয়ের বিরাট আয়োজনে গ্রন্থমেলার যে উৎসবমুখর আবেদন সেটাই দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে। মুখরিত এই বর্ণাঢ্য আবহে দর্শকরা নিজেদের একাত্ম করে নেয়। যা নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ আর আকাক্সক্ষায় পুরো পরিবেশকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। বই হয়ে ওঠে আরও গ্রহণযোগ্য, পাঠের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ। নতুন বইয়ের সম্ভার পাঠককে যেমন প্রাণিত করে একইভাবে প্রকাশকদের নিয়ে যায় আনন্দঘন অনুভবে। বইমেলায় নতুন বইয়ের ভিড়ে মানসম্মত বই নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। ভাষার মাসের বইমেলা অসংখ্য লেখকের প্রতিভাদীপ্ত মননের এক উজ্জ্বল অভিব্যক্তি। ফলে সৃজনশীল লেখকের সঙ্গে থাকে আগ্রহী পাঠক এবং ভক্তবৃন্দ। প্রথমেই সবার দৃষ্টি পড়ে প্রতিষ্ঠিত এবং নন্দিত লেখকদের প্রতি। যাদের কাছ থেকে নতুন কিছু পাওয়ার আশায় পাঠকরা অপেক্ষা করতে থাকে। জ্ঞানপ্রিয় লেখকদের বই মেলায় আসতেই শেষ হয়ে যায়। আবার উদীয়মান এবং নতুন প্রজন্মের লেখা গ্রন্থও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নতুন পাঠক তৈরিতে মেলায় আসা নতুন বইগুলো গুরুত্ব পায়। ফলে সম্ভাবনাময় তরুণ লেখকরাও আপন বৈশিষ্ট্যে নিজেদের স্থান করে নেয়। পাঠক তৈরি করা এবং তরুণ প্রজন্মের সৃষ্টিকর্ম দুটোই একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক। বিশ্বসভায় বাঙালীর বই আলো ছড়াকÑ এটাই প্রত্যাশা।
×