ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীর মায়েদের বিপর্যয়কর অবস্থা বিজ্ঞাপনে ফুটিয়ে তুলতে হবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

জঙ্গীর মায়েদের বিপর্যয়কর অবস্থা বিজ্ঞাপনে ফুটিয়ে তুলতে হবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমন হয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শুুধু র‌্যাব পুলিশ দিয়ে বিপথগামী তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার জঙ্গীদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। পরিবারের প্রিয় সন্তানেরা কিসের মোহে বিপথগামী হচ্ছে, তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ-জঙ্গীর মায়েরা সামাজিকভাবে কতটা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে- সেই চিত্র বাস্তবমুখী বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য গণমাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে ধরতে হবে। সোমবার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে জঙ্গী বিরোধী একটি বিজ্ঞাপন চিত্র (টিভিসি) প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। এতে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী ও এডিশনাল আইজিপি (এন্টি টেররিজম) শফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতির চরম দুঃসময় ২০০৪ সালে জঙ্গীবাদের যখন উত্থান ঘটে তখন র‌্যাবের মতো একটি এলিট ফোর্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারপর থেকে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে র‌্যাব জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। র‌্যাব এখন মানুুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও র‌্যাব জঙ্গী দমন ছাড়াও দেশের মানুষের বিপদ আপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ একটু আগে কিভাবে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদেরকে বিপথগামী করেছে তা তুলে ধরেছেন। সিলেটে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ কিভাবে সাহসিকতার সঙ্গে জীবনবাজি রেখে জঙ্গী দমনে ভূমিকা পালন করে গেছেন তা সবারই জানা। একই সঙ্গে পুলিশ, মিডিয়া ও দেশের মানুষের সহযোগিতাও ছিল প্রশংসনীয়। তিনি জঙ্গী দমনের ওপর সদ্য নির্মিত বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমি চেয়েছিলাম একজন জঙ্গী যখন বিপথগামী হয় তখন তার মায়ের কি করুণ পরিণতি হয় সেটা জাতির সামনে তুলে ধরতে। এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তেমনটিই তুলে ধরা হয়েছে, যাতে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে- সচেতন হতে পারে। সত্যিকার অর্থে আমরা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, পেশাদারিত্বের মাধ্যমে, মিডিয়ার সহযোগিতায়, জনগণের মাধ্যমে কাজ করছি বলেই দেশ আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গী মুক্ত হয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। কেননা আমাদের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছেন। যে কারণে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশের মানুষকে এর বিরুদ্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন, তিনি দেশের পেশাজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে ডাক দিয়েছিলেন। তার ডাকে দেশবাসী সাড়া দিয়েছেন বলেই আজ দেশ এই অভিশাপ থেকে অনেকটাই মুক্ত। সে জন্যই আজ আমরা জোর গলায় বলতে পারি জঙ্গী ও সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে নেই। এমনকি জলদস্যু বনদস্যুরাও আজ একের পর এক আত্মসমর্পণ করায় দক্ষিণাঞ্চলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিজ্ঞাপনটি প্রচারের জন্য দেশের সমস্ত ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে অনুরোধ জানান। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ইসলাম ও কোরানে সন্ত্রাসের স্থান নেই। এ ধরনের তথ্যসংক্রান্ত লাখ লাখ বই পুস্তিকা ও লিফলেট সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ও তাদের অভিভাবকদেরকে সচেতন ও সতর্ক করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে র‌্যাব। সর্বশেষ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও আরও ব্যাপকভাবে জঙ্গীবাদ সম্পর্কে মায়েদেরকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও নতুন করে যাতে কেউ জঙ্গীবাদের না জড়ায়, সেজন্য ৬০ সেকেন্ডের একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করেছি। যা সব গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়াও ইউটিউবে আমরা দুই মিনিটের একটি ভিডিও প্রচার করব, যেন সবাই বিষয়টি ইন্টারনেটের মাধ্যমেও দেখতে পারে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত আইজি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, কোরান ও ইসলামের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদেরকে জঙ্গীবাদে জড়ানো হচ্ছে। জঙ্গীরা সমাজের জন্য কতটা অভিশাপ এটাই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশের অন্যতম লক্ষ্য হলো দেশকে জঙ্গীবাদ মুক্ত করা। শুধুমাত্র অপারেশন করে জঙ্গীবাদ নির্মূল করা যাবে না। যারা জঙ্গীবাদে যুক্ত হতে যাচ্ছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। আর যারা ইতোমধ্যে জঙ্গীবাদে যুক্ত হয়ে গেছে তাদের কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ রয়েছে। জঙ্গীবাদবিরোধী অভিযানে র‌্যাব-পুলিশের অনেক সদস্য মারা গেছেন। তবুও আমরা দমে যাইনি। জঙ্গীবাদবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ির কর্ণধার বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার উপস্থিত ছিলেন।
×