ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁকা চোখের সুশীল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

বাঁকা চোখের সুশীল

সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের দায়িত্ব অনেক। মূলত তারাই সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত অংশ। দলনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে তারা জাতির দুর্যোগ ও আনন্দময় মুহূর্তে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ভূমিকা রাখবে- এটাই প্রত্যাশিত। তাদের সুচিন্তিত মন্তব্য, সুবিবেচনাপ্রসূত অভিমত ও প্রতিক্রিয়া থেকে সারা দেশ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি সরকারও সহায়ক দিকনির্দেশনা লাভ করবে। যদি বলা যায়, একদিকে সরকার এবং অপরদিকে গোটা দেশের সব মানুষের প্রতিনিধি এই সুশীল সমাজ তাহলে ভুল বলা হবে না। তাই সুশীল সমাজের দিকেই তাকিয়ে থাকে শ্রেণীপেশা নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ। সুশীল সমাজের নেতারা থাকবেন সব ভয়ভীতির ঊর্ধে, বলা চলে জাতির বিবেকের ভূমিকায়। তাদের দৃষ্টি হবে স্বচ্ছ, দৃষ্টিভঙ্গি হবে ইতিবাচক, মতামত হবে গঠনমুখী। তাদের কথায় থাকবে যুক্তির সৌন্দর্য, আচরণে প্রাজ্ঞজনের অভিজ্ঞতালব্ধ সুষমা এবং সুস্থিরতা। অথচ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমাদের দেশে বারবার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ বা সুশীল সমাজের নেতারা সচেতন বা অবচেতনভাবে কোন একটি পক্ষের হয়ে কাজ করেন, হয়ে ওঠেন একচক্ষুবিশিষ্ট মানুষ। জীবনানন্দের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ কবিতার বর্ণনার সঙ্গে তাদের কর্মকা- বেশ মিলে যায়। কবি লিখেছেন, অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা; যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন মহিলা সাংসদের একটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সুশীল সমাজের অন্ধত্বের প্রসঙ্গ আনেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কিছু মানুষ আছে, যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির। তাই দেশের এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি তাদের চোখে পড়ে না। তারা জনগণের কাছে যায় না, কারণ তারা ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা ক্ষমতায় যেতে বাঁকা পথ খোঁজে। তারা সব সময় অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় থাকে। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিকে।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করেছেন। সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ২০০৯-১৬ সময়কালে গড়ে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিনি বলেছেন, আমার কেবল একটাই চিন্তা, দেশের মানুষ ভাল আছে কী-না, শান্তিতে আছে কী-না? মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে তাদের জীবনকে উন্নত হিসেবে গড়ে তোলাই লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, আমরা সুশীল সমাজেরই একটি প্রতিষ্ঠান সিপিডির কাছ থেকে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া প্রসঙ্গে বিতর্কিত বক্তব্য পেয়েছি। জাতিসংঘের বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) তৈরি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশকে এক দশকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ সরকার ঘোষিত ৭ বছরের মধ্যে নয়। সিপিডির ওই তৎপরতাকে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের প্রয়াস হিসেবে দেখেছিলেন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা। সিপিডির সমালোচনা করতে গিয়ে স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন, দেশে অর্থনীতির সব সূচকই উর্ধমুখী। শিল্প, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমদানি-রফতানি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সব খাতের উন্নয়নে বিদেশীরা এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সিপিডির এই বক্তব্য ছিল দুঃখজনক। আমরা আশা করব, দেশের সুশীল সমাজ সুশীল বক্তব্য দেবেন, সুশোভন অবদান রাখবেন। সরকারের সমালোচনা নিশ্চয়ই তারা করবেন। তবে সত্যকে অস্বীকার করে নয়। দেশের উন্নয়ন তারা চাইবেন। তাই চোখ থাকতেও হবেন না অন্ধ অর্থাৎ দৃষ্টিহীন।
×