ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের;###;সেমিনারে অর্থমন্ত্রী

অনাকাঙ্খিত দ্রব্য যাতে দেশে আসতে না পারে সেটাই হবে প্রধান কাজ

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

অনাকাঙ্খিত দ্রব্য যাতে দেশে আসতে না পারে সেটাই হবে প্রধান কাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনাকাক্সিক্ষত দ্রব্য যাতে দেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের খেয়াল রাখতে বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুক্রবার রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘আন্তর্জাতিক কাস্টসম দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে ধারণা এসেছে যে উন্নয়নের জন্য ব্যবসা দরকার, ব্যবসার প্রসার দরকার। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে আমরা দেখব অনাকাঙ্থিত দ্রব্য যাতে দেশে না আসতে পারে সেটাই হবে কাস্টমসের প্রধান কাজ। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় হবে গৌণ কাজ। কেননা, ভবিষ্যতে কাস্টমসের আয় আরও কমে যাবে। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কাস্টমস শুল্ক নিরাপত্তার কাজটি করবে। ভ্যাট ও আয়কর রাজস্বের প্রধান খাত হবে। অর্থ পাচাররোধে, অনাকাঙ্থিত পণ্য আমদানি রোধে বাংলাদেশ কাস্টমসের ভূমিকা রাখার কথাও বলেও অর্থমন্ত্রী। মুহিত আরও বলেন, বাজেটে জাতীয় অভ্যন্তরীণ আয়ের (জিডিপি) অবদান তুলনামূলক খুব কম। বর্তমানে জিডিপিতে রাজস্বের হার ১০-১১ শতাংশ। যা আমরা ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ করতে চাই। অর্থমন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। কিছুদিন আগেও ব্যক্তি শ্রেণীতে ১৪ লাখ করদাতা আয়কর দিতেন। বর্তমানে তা প্রায় ৩২ লাখে পৌঁছে গেছে। এক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়ের বেশ ভূমিকা আছে বলেও জানান তিনি। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৮২ দেশ কাস্টমস দিবস পালন করছে। আমাদের দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন আর বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশীদের অর্থের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বতর্মানে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পা দিয়েছি। তবে পুরোপুরিভাবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে রফতানিতে আমাদের কোন প্রভাব পড়বে না বলেও বাণিজ্য মন্ত্রী জানান। তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক শিল্পে রফতানি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত (জিএসপি) সুবিধা স্থগিত রেখেছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেন আমরা এ সুবিধা পাই সেই বিষয়ে কাজ চলছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান এগিয়ে যাবেন বলেও বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, যে নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে অর্থাৎ ডিজিটাল ব্যবস্থার ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও গতি আসবে। ট্যাক্সের অভ্যন্তরীণ পার্থক্য কমানো দরকার বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদন বন্ধ করে নয় বরং উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এনবিআরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এক সময় এই দেশের পরিচিতি ছিল ক্ষুধা ও দরিদ্র দেশ হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দারিদ্র্য দূর করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সারাবিশ্ব তাক লেগে গেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যেরও অনেক প্রসার হয়েছে সেখানে কাস্টমসেরও ভূমিকা আছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে কাস্টমসে আরও সততা ও নিষ্ঠা বাড়ানোর কথা বলেন। একই সঙ্গে কেন সোনার চালান বন্ধ হয় না সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি। এসব সোনার চালান বন্ধ করতে কর্মকর্তাদের জোরালোভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান আব্দুর রাজ্জাক। এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা এমডিজি সফলভাবে অর্জন করেছি এখন এসডিজি অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছি। সরকার যে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে এসব বাস্তবায়নে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। এফবিসিসিআই সভাপতি, হিসেবে অমি মনে করি সরকার ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ দিবেন আর ব্যবসায়ী কমিউনিটি কাজ করবে। কাস্টমস বিষয়ে অবদানের জন্য সেমিনার অনুষ্ঠানে ১৪ ব্যক্তি ও ৬ প্রতিষ্ঠানকে ডব্লিওসিও সার্টিফিকেট অব মেরিট ২০১৮ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার প্রকাশ দেওয়ান আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ আমিনুর রহমান সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য)। কাস্টমস নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। এ সময় এনবিআরসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবন প্রাঙ্গণ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে তা শেষ হয়। ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নিরাপদ বাণিজ্য পরিবেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হয় দশম আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮২টি দেশে একযোগে দিবসটি উদযাপন করছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত রাজস্ব আহরণের মূল কাজ করে বাংলাদেশ কাস্টমস। ২০০৯ সাল থেকে ডব্লিউসিও ২৬ জানুয়ারিকে কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপন রীতি শুরু হয়।
×