ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনের হাল ॥ কাগজে আছে সড়কে নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮

গণপরিবহনের হাল ॥ কাগজে আছে সড়কে নেই

রাজন ভট্টাচার্য ॥ নতুন বাজার থেকে প্রতিদিন মৌচাকে অফিস করেন আরিফুর রহমান। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তিনি। ১০টায় অফিস শুরু। কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা আগে রওনা দেন। মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তার জন্য এত আগের প্রস্তুতি। বললেন, বেশিরভাগ দিন কোন বাসে ওঠতে পারি না। যেদিন ওঠতে পারি আসন তো দূরের কথা, দাঁড়িয়ে থাকাই কষ্ট। বাস না পেলে অটোরিক্সাও মেলানো কঠিন হয়ে যায়। ট্যাক্সি তো একেবারেই সোনার হরিণ। উপায় না পেয়ে রিক্সায় অফিসে যাতায়াত করতে হয়। এরপর যানজটের ধকল তো সকাল বিকাল আছেই। গণপরিবহন সঙ্কটের কারণেই এ পরিস্থিতি বলে মত দেন তিনি। মুগদা থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় অফিস করেন সজল রায়। নয়টার অফিসের জন্য রওনা দেন সকাল সাতটায়। তিনিও গণপরিবহন না পাওয়ার বিড়ম্বনার কথা শোনালেন। বললেন, কবে গণপরিবহন সবার চাহিদা মত রাস্তায় পাওয়া যাবে জানি না। কিন্তু উন্নত শহরগুলোতে গণপরিবহনই মানুষের একমাত্র ভরসা। অথচ আমাদের শহরে এর উল্টো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কাগজেপত্রে ঢাকায় প্রায় ১৩ লাখ রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পরিবহনের মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস-মিনিবাস, অটোরিক্সা, টেক্সি, হিউম্যান হলার মিলিয়ে সড়কে ১৫ হাজারের বেশি গণপরিবহন নেই! অথচ দুই কোটির বেশি মানুষের এ শহরে প্রয়োজন অন্তত ২০ হাজার সচল বাসসহ লাখের বেশি গণপরিবহন। অথচ প্রায় তিনলাখ প্রাইভেটকার চলছে রাজধানীতে। দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পাঁচ লাখের বেশি চলছে মোটরসাইকেল। যদিও প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ আইন করার চেষ্টা করছে সরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রভাবশালীদের চাপের মুখে এই আইন পাস করা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের বক্তব্য, মেয়াদ শেষ হওয়া, বন্ধ থাকা, নষ্ট হওয়া, ডাম্পিংসহ নানা কারণে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পরিবহনের সংখ্যা কমেছে। তাছাড়া যেসব পরিবহনের মেয়াদ শেষ হয়েছে সেগুলো এখনও হিসাবের খাতায় রয়েছে। তাই বিআরটিএর হিসাব দেখলে ঢাকায় গণপরিবহন নেই তা বলা যাবে না। তবে মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে গণপরিবহন বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা। এজন্য বেশি পরিমাণে বাস, টেক্সি, অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশন দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কাগজের সঙ্গে মাঠের মিল নেই ॥ ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২। ডিসেম্বর পর্যন্ত তা হয়ত প্রায় ৩৫ লাখের কাছাকাছি। রেজিস্ট্রেশনকৃত যানবাহনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল! এ সংখ্যা ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৬টি। সারাদেশে বাসের সংখ্যা ৪৩ হাজার ১৫৪ ও মিনিবাসের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭৬৮। একই সময় পর্যন্ত রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৫১টি। বাসের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৯৬। প্রায় ১৪ হাজার বাস ও মিনিবাস রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হলেও রাস্তায় আছে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ হাজার। মালিক সমিতির কর্তারা বলছেন, কাগজের তালিকার সঙ্গে মাঠের চিত্র’র মিল নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনের বিষয়ে বিআরটিএ’র কাগজ আর মাঠের চিত্র এক নয়। কাগজপত্রে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক। কিন্তু রাস্তায় নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন নেয়ার সময় যে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল কাগজে তাই আছে। কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক বাস কোম্পানী বন্ধ হয়েছে। অনেক বাস অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আবার চলাচলের অযোগ্য অনেক বাস। সব মিলিয়ে দিন দিন রাজধানীতে বাসের সংখ্যা কমে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু নতুন বাস কোম্পানী রাস্তায় নেমেছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় সর্বোচ্চ ছয় হাজার বাস চলাচল করছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নামমাত্র বলা চলে। রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় বাসের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, রাস্তায় দাঁড়ালেই দেখা যায় বাসের জন্য মানুষের অপেক্ষা। সাধারণ আয়ের মানুষ বাসের ওপর নির্ভর। কিন্তু বাস তো নেই। অনেক সড়ক আছে যেখানে একেবারেই বাস চলে না। তাহলে উপায় কি। বাস্তবতা হলো সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে বাসের সংখ্যা যে কোন মূল্যে বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রাজধানীতে দোতলা বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সার্বিকভাবে উন্নত শহরের আদলে ঢাকাকে গড়ে তুলতে হলে গণপরিবহন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। আড়াই লাখের বেশি প্রাইভেটকার ॥ ঢাকায় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ। এছাড়া প্রাইভেটকার রয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার ২৬০টি। কাগজপত্রে টেক্সির সংখ্যা ৩৬ হাজারের বেশি হলেও রাস্তায় টেক্সির দেখা মেলা ভার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টেক্সি সার্ভিস বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু হিসাব নবায়ন হয়নি। নতুন করে মাত্র শতাধিক টেক্সি এখন ঢাকার রাস্তায় গলাকাটা ভাড়ায় চলাচল করে। ট্রাস্ট সার্ভিস ও তমা এই দুই প্রতিষ্ঠান এখন টেক্সি পরিচালনা করছে। রাজধানীতে মাইক্রোবাসের সংখ্যা ৭২ হাজার ৪১১টি। অটোরিক্সার সংখ্যা ৯ হাজার ৫৫টি বলা হলেও মালিক সমিতি বলছে সর্বোচ্চ তিন হাজারের বেশি গাড়ি রাস্তায় নেই। সিএনজি অটোরিক্সা মালিক সমিতির নেতা গোলাম ফারুক বলেন, কাগজেপত্রে অটোরিক্সা সংখ্যা রাজধানীতে ১৩ হাজার। কিন্তু সড়কে এত গাড়ি নেই। অনেক গাড়ি চুরি গেছে। কিছু গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেশকিছু অটোরিক্সা এখন বন্ধ। মেয়াদ শেষ হওয়ায় বন্ধ অনেক গাড়ি। সব মিলিয়ে রাজধানীতে চলাচলকারী অটোরিক্সা সর্বোচ্চ তিন থেকে চার হাজারের বেশি হবে না। তিনি বলেন, এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার অটোরিক্সার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ হিসেবে বিআরটিএ নয় হাজারের কিছু বেশি অটোরিক্সা রাজধানীতে চলাচলের কথা বলছে। এদিকে সরকার মালিক-শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনমাস লাইফ টাইম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ আগামী তিনমাস পর অটোরিক্সা সংকটের মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। সংকট সমাধানে দ্রুত নতুন অটোরিক্সা নামানোর তাগিদ দেন তিনি। ইচ্ছেমত ভাড়ায় সড়ক দখল হলারের ॥ রাজধানীর নতুন গণপরিবহন হিউম্যান হলার। এখন গুরুত্বপুর্ণ সড়কগুলোতেও এই পরিবহনটি দেখা যাচ্ছে। মূলত সড়ক দখল করে পরিবহনটি পার্কিং বানিয়েছে সবখানেই। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক ফার্মগেটের রাস্তার একাংশ পুরোটাই দখল হিউম্যান হলারের। গাবতলী বাস টার্মিনালে এসব পরিবহনের অভাব নেই। অবাধে চলছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, মহাখালী কাঁচাবাজার এলাকাতেও। চলতি মাস থেকে এ পরিবহনটি দেখা যাচ্ছে মগবাজার মোড়েও। এখান থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলাচল করে। যা আগে সাতরাস্তা থেকে মহাখালী রেলগেট পর্যন্ত চলাচল করত। আবার মালিবাগ মোড়েও হিউম্যান হলারের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ যাত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিবহন। সড়ক দখল করে যাত্রী ওঠানো, গাড়ি রাখার দৃশ্য এ এলাকায় নিয়মিত। মিরপুর এক নম্বর সড়কজুড়ে দাপট হিউম্যান হলারের। এ পয়েন্ট থেকে অন্তত ২০টি পয়েন্টে এ পরিবহনটি নিয়মিত চলাচল করছে। গেল ৫ ডিসেম্বর থেকে মিরপুর এক নম্বর থেকে চলা সবগুলো রুটে লেগুনার ভাড়া ইচ্ছেমত বাড়ানো হয়েছে। সর্বনি¤œ ভাড়া করা হয়েছে সাত টাকা। সর্বোচ্চ ২৮ টাকা পর্যন্ত। কেন হঠাৎ করেই ভাড়া বাড়ানো হল। মিরপুর এক নম্বর থেকে চলা হিউম্যান হলার, লেগুনা মালিক সমিতির ভাড়া বাড়ানোর একটি নোটিশে বলা হয়েছে, গাড়ির যন্ত্রাংশের অতিমাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি, অতিমাত্রায় গাড়ির সার্ভিসিং বিল বৃদ্ধি, অতিমাত্রায় যানজটের কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর কারণে চালক কিংবা সুপারভাইজারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ না করতে যাত্রীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে নোটিশে। খিলগাঁও রেলগেটের উভয় পাশে এখন হিউম্যান হলারের দৌরাত্ম্য। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সামনের সড়কে এ পরিবনটি রাস্তা দখল করে আছে বছরের পর বছর। এই পরিবহনটি আবার ইচ্ছেমত ভাড়াও আদায় করছে যাত্রীদের থেকে। হিউমেন হলারের ক্ষেত্রে ভাড়া সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের। যদিও সরকারী হিসেবে রাজধানীতে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি এ পরিবহন চলাচল করছে। তবে দ্রুততার সঙ্গে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের রুট পারমিট ছাড়াই এর ব্যাপকতা বাড়ছে। পরিবহন মালিক সমিতি থেকে শুরু করে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরোপুরি রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব পরিবহন বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। যাদের কোন রুট পারমিট নেই। ভাড়া আদায়ও হচ্ছে ইচ্ছেমত। সরকারী তালিকা অনুযায়ী ৩৬ হাজার ৫২৯টি জিপ রাজধানীতে চলাচল করছে। ছয় ভাগ মানুষের জন্য সড়কের বেশি জায়গা ॥ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই) প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ছয় শতাংশ মানুষ ঢাকার ৭৬ ভাগ সড়ক দখল করে আছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোট সড়কের ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ থাকে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। গণপরিবহনের দখলে থাকে ৬ থেকে ৮ শতাংশ। সড়কের বাকি অংশ বিভিন্নভাবে অবৈধ দখল ও অবৈধ পার্র্কিংয়ের দখলে থাকে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান বলেন, ‘এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ সড়ক দখল করে রাখে ব্যক্তিগত গাড়ি। আর গণপরিহন দখল করে মাত্র ৭ শতাংশ রাস্তা। বাকি অংশ দখল করে আছে অন্যান্য গাড়ি, অবৈধ দখল ও অবৈধ পার্কিং। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের এ্যাক্সিডেন্ট রিচার্জ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোঃ সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রতি ১০ স্কয়ার ফুট জায়গাতে মাত্র দু’জন মানুষ চড়তে পারেন। অন্যদিকে, গণপরিবহনে একই পরিমাণ জায়গায় বসে ও দাঁড়িয়ে ১৫/১৬ জন যাত্রী চলাচল করতে পারেন। সেই হিসেবে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি, তা ঢাকার রাস্তার অর্ধেকের বেশি দখল করে। বাকি অংশ থাকে গণপরিবহন ও অবৈধ দখলে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গণপরিবহন বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহনের সার্ভিসের মান সুনিশ্চিত করতে হবে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়িতে নতুন করে সিএনজি সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। সিঙ্গাপুরে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এর বাইরে গাড়ি আমদানিতে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির তেলের দাম কয়েক গুণ বাড়াতে হবে। চীনে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ির মালিককে পেট্রোলের দাম ৭০ শতাংশ বেশি দিতে হয় জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা করা হলে মানুষ খরচ কমাতে গণপরিবহন ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দেবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ট্যাক্স বাড়ানোর কথা জানিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানো এবং কঠিন শর্তারোপ করা যেতে পারে। গণপরিবহনের জন্য রাস্তায় আলাদা লেন তৈরি করা দরকার। মেট্রোরেল, পাতালরেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। এতসব শর্ত আরোপ করা হলে নতুন পরিবার কিভাবে গাড়ি ক্রয় করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি কেন ক্রয় করে। নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য। এটা যদি আপনি গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। তাই আগে গণপরিবহন বাড়াতে হবে এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের আইনটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মতামতের জন্য এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। এরপর আমাদের হাতে আসলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেব। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, যে কোন শহরের জন্য গণপরিবহন সবার আগে জরুরী। কিন্তু নানা কারণে আমাদের ঢাকা শহরে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়নি। এটি যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। দিন দিন গণপরিবহন করে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। এতে নগরে যানজট বাড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচলে অসুবিধাও বাড়ছে। তিনি বলেন, গণপরিবহন নিয়ে নতুন নতুন অনেক চিন্তা হচ্ছে। মেট্রোরেল হয়ে গেলে ঢাকার যোগাযোগের চিত্র একেবারেই বদলে যাবে। পাশাপাশি বাস, অটোরিক্সা, টেক্সিসহ গণপরিবহন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকল্প নেয়ার কথাও বলেন তিনি। সম্প্রতি বেশকিছু নতুন বাস কোম্পানী রাস্তায় নেমেছে বলেও জানান বিআরটিএ এ কর্মকর্তা।
×