ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গল্প ও চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে কাজ করব -ঐন্দ্রিলা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

গল্প ও চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে কাজ করব -ঐন্দ্রিলা

আনন্দকণ্ঠ : ‘আতঙ্ক’ নাটক প্রসঙ্গে বলুন। ঐন্দ্রিলা : কাজী সাইফ আহমেদ ভাইয়ের আতঙ্ক নাটকের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তার পরিচালনায় কাজ করেছি। ‘গল্পটা বেশ চমৎকার। অনেকটা থ্রিলারধর্মী। আমার চরিত্রের নাম চৈতী। বিভিন্ন রকম গল্পে কাজ করতে বেশ ভালই লাগে। নাঈম ভাইয়ের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। আমরা স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে কাজ করছি এটাতে। নাঈম ভাই সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে অনেকটা মানসিক রোগীর মতো। আমি স্ত্রী হিসেবে তার ওই আতঙ্কটা কাটাতে চেষ্টা করি। অন্যরকম একটি গল্প। আমি সব সময় রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করি। সাইফ ভাইয়ের এ নাটকে ভিন্নভাবে দর্শক দেখতে পাবে আমায়। এ ছাড়াও গল্পে বেশকিছু ভিন্নতা আছে যেটা দর্শকদের বেশ ভাল লাগবে।’ আনন্দকণ্ঠ : দীর্ঘ সময় আড়ালে থাকা, কোন কারণে অভিমান কি? ঐন্দ্রিলা : না কোন অভিমান না। মিডিয়া আমার ভালবাসার জায়গা, কাজের জায়গা, আমার সারা জীবনের সাধনার জায়গা। এখানে কোন অভিমানের প্রশ্নই ওঠে না। নিজস্ব ব্যস্ততা ছিল। বাবার চলে যাওয়া ধকলটা কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লেগেছে। তবে নির্মাতাদের আগ্রহে অভিনয়ে ফিরেছি। এই সময়ের অনেক নির্মাতা কাজের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আমার প্রতি তাদের আস্থা দেখে কাজ করার সাহস পেয়েছি। অভিনয়ে ফিরে সবার সহযোগিতা ও উৎসাহে আমি মুগ্ধ। নতুন করে কাজ করার প্রেরণা পাচ্ছি। আনন্দকণ্ঠ : দীর্ঘ বিরতি শেষে অভিনয়ে ফেরা। অনুভূতিটা কেমন? ঐন্দ্রিলা : নিঃসন্দেহে দারুণ। আমার বড় হয়ে ওঠাটা অভিনয়ের আঙ্গিনাতেই। এটা আমার অনেক পছন্দের জায়গা। এতদিন পর এসে মনে হয়েছে আমি যেন আমার পরিবারেই ফিরেছি। সবাই আমাকে এমনভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন, আমি সত্যিই অভিভূত। আমার ফিরে আসায় সবার মধ্যে যে উচ্ছ্বাস, ভাললাগা আমি দেখেছি, তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। নতুন করে আবারও কাজে নিয়মিত হওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করে আসছি। নাচও শিখেছি। যেহেতু আমার বাবা একজন চলচ্চিত্রের মানুষ ছিলেন তাই আমার বেড়ে ওঠাটাও হয়েছে শোবিজের সঙ্গেই। এখানকার মানুষদের অনেক ভালবাসা ও আন্তরিকতা পেয়েছি আমি। এটা আমার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি মনে হয়। আর কিছু বিষয়ে আমি বেশ অবাক হয়েছি। এতটা বিরতির পর ফিরে এসে পূর্ব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সাঁকো টেলিফিল্ম এ্যাওয়ার্ড’ থেকে একটা সম্মাননা পেয়েছি। আমি সত্যিই মুগ্ধ। আনন্দকণ্ঠ : মাঝে বেশ লম্বা সময় বিরতি ছিল আপনার। সেই সময়টা কিভাবে পার করেছেন? ঐন্দ্রিলা : অভিনয় না করলেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ঠিকই জড়িত ছিলাম এই বিরতির সময়টুকুতে। নিজের পড়াশোনা, সংসার জীবন গুছিয়ে নিতেও একটু সময় লেগেছে। এগুলোর পাশাপাশি আমার বাবাকে নিয়ে ‘এক জীবন্ত কিংবদন্তির কথা’ নামে একটি ডকুমেন্টারি আর বাবার জীবনী নিয়ে ‘একজন মহানায়কের কথা’ শিরোনামে একটি বায়োগ্রাফি তৈরি করেছি। বাবাকে নিয়ে এই বায়োগ্রাফি লিখতে আমার তিন বছর সময় লেগেছে। এ ছাড়াও একটা ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন তৈরি করেছি যেটার নাম দিয়েছি ‘বুলবুল আহমেদ ফাউন্ডেশন।’ বাবার সব জনপ্রিয় ছবির গানগুলো নিয়ে ব্লুবেরি হোটেলে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানও করেছি। এ কাজগুলোর মাধ্যমে মনে হয়েছে আমি আমার বাবার সঙ্গেই আছি। বাবাকে নিয়ে আর্কাইভ করার চিন্তা আছে। আনন্দকণ্ঠ : নতুন করে ফেরার পর নিশ্চয়ই অনেক কিছু নতুন লাগছে। আগের সাথে এখনের কতটুকু পরিবর্তন দেখছেন? ঐন্দ্রিলা : অনেক পরিবর্তন। কাজের মান ও ধরনে পরিবর্তন এসেছে। আর টেকনিক্যাল দিকগুলোতেও বেশ পরিবর্তন লক্ষণীয়। সবকিছু আমি পজিটিভভাবেই দেখছি। সব কিছুর নতুনত্ব আমার কাছে ভাল লাগছে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমি ছোট সময়ে যাদের সঙ্গে অভিনয় করেছি তাদের সঙ্গে এখনও অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছি। আমার দাদার সঙ্গে, বাবার সঙ্গে যারা অভিনয় করেছেন আমি তাদের সঙ্গেও অভিনয় করছি। এ ব্যাপারগুলো খুব ভাল লাগে। সমসাময়িক নতুন তাদের সঙ্গেও কাজ করছি। সবই খুব ভাল লাগছে। আনন্দকণ্ঠ : অভিনয়ে ফেরার পর ব্যস্ততা কেমন? ঐন্দ্রিলা : ফেরার পর এরই মধ্যে পাঁচটি নাটকে কাজ করেছি। রুবেল হাসানের ‘বিলাভড’, মাবরুর রশীদ বান্নাহর ‘সাংসারিক ভালোবাসা’ এবং দীপু হাজরার ‘ফেইক লাভ’, কাজী সাইফ আহমেদের আতঙ্ক।’ প্রচুর কাজের অফার আসছে কিন্তু সব গ্রহণ করছি না। তাড়াহুড়া করতে চাই না। আমি অবশ্য এমনটা কখনই করিনি। আস্তে-ধীরে বেছে বেছে পছন্দসই কাজ করতে চাই। সামনেও বেশকিছু কাজ রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোর কিছু কাজ শুরু হবে। আনন্দকণ্ঠ : অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করলেন এ প্রসঙ্গে বলুন। ঐন্দ্রিলা : ‘গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনেকটা সময় পর মডেলিংয়ে ফিরেছি বলা যায়। আর অমিতাভ ভাই নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী ও বড় নির্মাতা। উনার সঙ্গে এর আগে কাজ করার কথা থাকলেও করা হয়ে ওঠেনি। এই বিজ্ঞাপন দিয়েই তার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ করা হলো। তার সঙ্গে কাজটি করে খুব ভাল লেগেছে। এর আগে অনেক বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব এসেছে সে ভাবে ভাল লাগেনি তাই করা হয়নি। এটার প্রস্তাব আসার পর ভাল লাগল। আমি মনে করলাম তার কাজ দিয়ে শুরু করি। গল্পটাও অন্যরকম। অভিনয়ের সুযোগ ছিল। আগের বিজ্ঞাপনে আমাকে গ্ল্যামার চরিত্রে দেখেছে কিন্তু এই কাজটিতে মেকআপ ছাড়া একেবারে ভিন্ন পাবে দেখতে পাবে। ভিন্ন রকম একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। যেটা আগে কখনও হয়নি। অচিরেই এই বিজ্ঞাপনটি প্রচারে আসবে। আনন্দকণ্ঠ : এত লম্বা সময় বিরতির পরও নতুন করে নির্মাতাদের কাছে নিজের এই গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আপনার প্রত্যাশাটা কেমন? ঐন্দ্রিলা : নিঃসন্দেহে অনেক ভাল। দশ বছর পর ফিরে এসে এমন সাড়া পাওয়া তো অনেক বড় তারকাদের বেলাতেও দেখা যায় না। কিন্তু আমি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া। সেটা যেভাবেই হোক আমি উপভোগ করছি। ভাল অভিনয়ের তাগিদ বোধ করছি। প্রতিনিয়ত আমাকে তারা কাজের জন্য নক করতেন। তাদের আগ্রহের কারণেই ফিরে আসা। বিরতি শেষে ফিরে আমি যে পরিমাণ কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি নিশ্চয়ই আমি অনেক বড় সৌভাগ্যবান। আমার প্রশ্ন ছিল তাদের কাছে আমাকে কেন ডাকছেন? তখন তারা বলতেন অনেক নায়িকা আসে কিন্তু আমরা অভিনেত্রী পাই না। আমাদের অভিনেএীর অভাব। সেই কারণেই তাদের শূন্যতা থেকে তারা আমাকে ডাকতেন। তাই তাদের শূন্যতা পূরণ করার জন্য ফিরে আসা। যাদের সঙ্গে এ পর্যন্ত কাজ করেছি তাদের দ্বিতীয় কাজেও আমি আছি। তারা আমার সঙ্গে কাজ করার জন্য আগ্রহী এটার আমার জন্য প্লাসপয়েন্ট। আমার জন্য খুবই ভাল এবং আমি এটা মনে করি তাদের আগ্রহের কারণটা আমার বাবার আশীর্বাদ। আনন্দকণ্ঠ : আপনার বাবা চলচ্চিত্রের মহানায়ক হিসেবে সমাদৃত। ঐন্দ্রিলাকে কি শুধু ছোট পর্দায়ই দেখা যাবে। তার মেয়ে হিসেবে আপনার ইচ্ছে করে না চলচ্চিত্রে কাজ করতে? ঐন্দ্রিলা : বড় পর্দায় কাজ করার জন্য ইচ্ছে রয়েছে। কয়েকটি চলচ্চিত্রের জন্য প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু সেগুলোর গল্প ও চরিত্র আমার সঙ্গে যায় না বলে করছি না। মনের মতো কোন গল্প ও চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে কাজ করব। যে কাজটি করে আমি সন্তুষ্ট থাকতে পারব। এ রকম কাজ হলে অবশ্যই করব। আনন্দকণ্ঠ : এখনকার নাটকের মান প্রসঙ্গে আপনার কি মতামত? ঐন্দ্রিলা : আমি বলব এখন খুব ভাল কাজ হচ্ছে। আমি কাজ ছাড়ার সময় যে পরিস্থিতি ছিল এখন আর তা নেই। অনেকেই পড়ালেখা করে মিডিয়ায় কাজ করতে আসছে। সবকিছুতেই নতুনত্ব আসছে। আমার খুব ভাল লাগছে।
×