ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে ফের সেনা মোতায়েন, যেতে চায় না রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮

রাখাইনে ফের সেনা মোতায়েন, যেতে চায় না রোহিঙ্গারা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় এই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না অনেকেই। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদশে ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার নেপিদোতে দু’দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রতিদিন ৩শ’ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও রাখাইন রাজ্যে ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে প্রথমে ৭ ও পরবর্তীতে আরও ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আবারও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ রাজ্যে আবারও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট রাতে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযান চালানোর পর যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাতে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয় মিয়ানমার সরকার। একপর্যায়ে সেনা অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হয় সে দেশের সরকার। বর্তমানে রাখাইনে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়েছে। ফলে গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে সেনা মোতায়েন হয়েছে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে। ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, আরাকান পতন দিবস উপলক্ষে গত ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি সমবেত বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক অঞ্চলে। সেখানে বৃহস্পতিবারও ধরপাকড় অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। যে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে তারা সকলেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন। এ ঘটনায় আহত ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রাখাইনের রাজধানী সিটওয়েতে স্থানান্তর করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে এখন আবার নতুন করে উত্তপ্ত হওয়ায় এপারে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হতে মোটেই আগ্রহী নয়। বৃহস্পতিবার কুতুপালং ক্যাম্প এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মুখে বর্তমানে একটিই আওয়াজ, সেটি হচ্ছে- ‘আঁরা নযাইয়ুম’ (আমরা যাব না)। না যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, মিয়ানমার অতীতেও কথা রাখেনি। বার বার সামরিক জান্তা বাহিনী হামলে পড়েছে। ফলে দশকের পর দশক জুড়ে রোহিঙ্গারা প্রাণ হারাচ্ছে। গত ২৫ আগস্টের রাতে রাখাইন রাজ্য জুড়ে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। অসংখ্য গণকবর হয়েছে। তারমধ্যে একটি মাত্র গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তদন্তে গণহারে রোহিঙ্গাদের কবর দেয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
×