ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রগতির চার বছর

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১২ জানুয়ারি ২০১৮

অগ্রগতির চার বছর

টানা দ্বিতীয় মেয়াদের পঞ্চম বছরে পা রেখেছে সরকার। সহজ করে বললে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পূর্ণ করল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের চার বছর পূর্ণ করা যে কোন রাজনৈতিক দলের জন্য গৌরবের নিঃসন্দেহে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনোত্তর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা এবং এরপর তাদের টানা ৯২ দিন অসহযোগ আন্দোলনের পর অনেকটা নির্বিঘেœই কেটেছে সরকারের। এ সময় সরকারকে ঘরে-বাইরে নানা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলেও শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে বিজয় এসেছে। রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৌরবময় বহু অর্জন। বিচারের মাধ্যমে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়েছে। নানা বাধা পেরিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। সফলতা এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষা খাতে। কৃষি, কূটনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ঘটেছে সরব বিপ্লব। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ৮৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৫ লাখ সংযোগসহ ৬৫টি নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র চালু হয়েছে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। কঠোর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপে সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ দমন হয়েছে। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের তালিকায় দশম স্থানে ঠাঁই পেয়েছেন শেখ হাসিনা। পেয়েছেন বিশ্বে তৃতীয় সৎ নেতার স্বীকৃতিও। শুধু তাই নয়, মানবিক কারণে মিয়ানমারের লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়-সেবা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব মানবতার জননী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও সরকার সেগুলো সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। রাজপথে বিএনপিকে মোকাবেলা, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ, ১৪ দলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখতে ও দলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা সরকারের বড় সাফল্য। ক্ষমতা গ্রহণের পর স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সিপিএ (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন) চেয়ারপার্সন এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ছিল দেশের এবং সরকারের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। আন্তর্জাতিক আদালতে আইনী লড়াই চালিয়ে বাংলাদেশের সমপরিমাণ গভীর সমুদ্রে বিশাল অঞ্চল আদায় বড় দাগের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিদায়ী বছরের শেষে জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর অনন্য এক উচ্চতার শিখরে পৌঁছল বাংলাদেশ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। চলমান বছরটি নির্বাচনের বছর। তাই সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার পাশাপাশি শেষ বছরে এসে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামীতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে। যদিও চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায় আশানুরূপ হয়নি। আগামী দিনগুলোতে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তার বিশ্বাস। অনেকটা অর্থমন্ত্রীর সুরেই কথা বলেছেন এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান। তিনি তার নতুন পদে যোগদানের পর বলেছেন, রাজস্ব বোর্ড জোর-জবরদস্তি করে কর আদায় করবে না। তিনি জোর দেবেন ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির ওপর। এসব বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব এমনিতেই বাড়বে আর রাজস্ব দরকার জাতীয় বাজেটের খরচের জন্য। তিনি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রক্ষা করে রাজস্ব আদায় করতে চান। তার কথাগুলো খুবই প্রণিধানযোগ্য। এ কথা সত্য যে, মানুষ এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর দিচ্ছেন। এ কারণে রাজস্ব আদায় নিয়ে তেমন কোন সঙ্কট তৈরি হওয়ার কথা নয়। অতীতে লক্ষ্যমাত্রা দেয়ায় তা পুরোপুরি পূরণে দৃষ্টান্ত নেই। তারপরও অনেকটা রীতি মেনে বাজেটে বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর আশাবাদে সবার সমর্থন থাকবে যদি রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণে নতুন করারোপ না হয়। নতুন করে করারোপ হলে এর প্রভাব পড়ে বাজার অর্থনীতির ওপর, সর্বোপরি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দিকে।
×