ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ সপ্তাহে এ দাবি করা হয়েছে

রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আলাদা ইউনিট চায় বাংলাদেশ পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আলাদা ইউনিট চায় বাংলাদেশ পুলিশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবারের পুলিশ সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আলাদা ইউনিট দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ‘কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ইউনিট’ (এপিবিএন) গঠনের প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দফতর। সোমবার থেকে শুরু ৫ দিনের এই পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়কে দেয়া হবে এই দাবির পক্ষে সুপারিশ। এই দাবির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবে পুলিশ। ‘জঙ্গী ও মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’ এ সেøাগানে সোমবার থেকে শুরু পুলিশ সপ্তাহে রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের দাবিটি অন্যতম। মিয়ানমার থেকে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করায় চরম নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে পর্যটন জেলা কক্সবাজার। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর থাকা, খাওয়া, চলাফেরা, অপরাধী কর্মকা-সহ তাদের নিয়ন্ত্রণে ও নিরাপত্তার জন্য তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এই অবস্থায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের মতো একটি ব্যাটালিয়ন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এই প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণেও বলেছেন, বাংলাদেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে। তাদের থাকা-খাওয়া, নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের বিষয়টি ব্যাপক আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসা অর্জন করেছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তাঁকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিহিত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে কক্সবাজার জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ পুলিশ। রোহিঙ্গারা মানবপাচার, হত্যা, চুরি, ডাকাতি, মাদক বিক্রি মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় মোতায়েন এই পুলিশ অপরাধ দমনে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের একাংশের অবস্থান দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশের পক্ষে দীর্ঘকাল রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন অসম্ভব। এ কারণে রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ইউনিট’ গঠনের প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দফতর। দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা আর্মড পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মানবিক কারণে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া কুতুপালংসহ আশপাশের এলাকার মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের কারণে এইডসসহ আশপাশে দুরারোগ্য ব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা কোন নিষেধাজ্ঞা মানছে না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে কেউ, অনেকেই পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষে এদের সামাল দেয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকই মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, তারা আশপাশের গাছ সাবাড় করে দিচ্ছে। কক্সবাজার জেলা এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াও স্থানীয় জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত সামাল দেয়া না গেলে অদূর ভবিষ্যতে তারা দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দূষিত করে ফেলবে। সেখানে দ্রুত আর্মড পুলিশ গঠন করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১ হাজার ২ শ’ পুলিশ কক্সবাজার রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গাদের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, বগুড়া. ময়মনসিংহ, খাগড়াছড়িতে আর্মড পুলিশের ব্যাটালিয়ান কাজ করছে। সুতরাং কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ইউনিট গঠনে আইনগত কোন বাধা নেই। পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য বিবেচনাধীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রস্তাবটি এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবের বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছে। আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট কক্সবাজার জেলায় গঠন করা গেলে রোহিঙ্গাদের সামাল দেয়া সম্ভব হবে বলে পুলিশ সদর দফতরের পাঠানো প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
×