ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জেনারেল কোর্টে ২৫৩ সার্টিফিকেট মামলা বিচারাধীন

ট্রাইব্যুনালে মামলাহীন এক বছর

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

ট্রাইব্যুনালে মামলাহীন এক বছর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও মামলাবিহীন ২০১৭ সাল পার হয়েছে। এ বছরে নতুন কোন মামলা ট্রাইবু্যূনালে যোগ বা স্থানান্তর হয়নি। যাতে মামলার অভাবে এ বছরটির অধিকাংশ দিনই বিচার কাজ ছিল না। যাতে অলস সময় পার করতে হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুন মাসে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে ২৫টি মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ২২টি ও ২০১৬ সালে ৩টি মামলা এসেছে। তবে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে অসংখ্য মামলা থাকলেও ২০১৭ সালে ট্রাইব্যুনালে ১টিও স্থানান্তর হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অদক্ষতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ২৫টির মধ্যে ৬টি মামলার পূর্ণ ও ১টি মামলার আংশিক রায় ঘোষণা হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা না থাকায় ২টি মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত দেয়া হয়েছে ও ২টি মামলা বাতিল করা হয়েছে। আর ১৩টি মামলার পূর্ণ ও ১টি মামলার আংশিক উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। বাকি ১টি মামলার বিচার কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মোট ৫৩৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্টে ২৫৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তবে সার্টিফিকেট মামলাগুলো বিচার প্রচলিত আদালতে হবে। এ হিসাবে এখন পর্যন্ত দায়ের করা আড়াই শ’র বেশি মামলা শেয়ারবাজার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না থাকার কারণে এসব মামলা স্থানান্তরিত হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে ট্রাইব্যুনাল গঠনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। এ কারণে ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলো যাতে স্থানান্তরিত হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। বিএসইসির অপর সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, যদি ট্রাইব্যুনাল মামলা শূন্য হয়ে পড়ে তাহলে এটি শেয়ারবাজারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বর্তমানে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটির শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। যেটি ১৯৯৯ সালে শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ২০০০ সালে কোম্পানিটিসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন উপপরিচালক আহমেদ হোসেন মামলা দায়ের করেন। সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশের ২৫ ধারা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। সিএমএম আদালতের ১৩৬৪/২০০০ নম্বরের মামলাটি ট্রাইব্যুনালে হয়েছে ৩/১৬ নং। এ মামলার আসামিরা হলেন-মার্ক বাংলাদেশ শিল্প এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ও পরিচালক সালমা আক্তার। মামলাটির বিচার কাজ ২০১৬ সালের ২৮ নবেম্বর শুরু হওয়া থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন। ২০১৫ সালের ২১ জুন শেয়ারবাজারের বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর প্রথম রায় ঘোষণা করা হয় ওই বছরের ৩ আগস্ট। ওই রায়ে ফেসবুকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রচারের দায়ে জনৈক মাহবুব সরোয়ারকে ২ বছরের কারাদ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপরে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডের (বর্তমান নাম বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা নুরুল ইসলাম ও ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এনায়েত করিমকে ৩ বছরের কারাদ ও ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল। ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ সালের চিক টেক্স শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির এমডি মাকসুদুর রসুল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদকে ৪ বছর করে কারাদ ও ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। ২৫ অক্টোবর প্লেসমেন্ট কেলেঙ্কারির মামলায় একমাত্র আসামি সাত্তারুজ্জামান শামীমকে ও ৩০ নবেম্বর সাবিনকো শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় কোম্পানির সাবেক এমডি কুতুব উদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। আর ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল সিকিউরিটিজ প্রমোশন এ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানকে ২ বছর করে কারাদ এবং ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় কোম্পানিটিসহ আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, যেগুলো ক্রিমিনাল কেস শুধু সেগুলোই ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। যেসব মামলার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে সেসব মামলা ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা বলেন, শেয়ারবাজার বিষয়ক বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এখন মামলা শূন্য। বিচার কাজের জন্য আসা ২৫টা মামলার মধ্যে ৬টির পূর্ণ ও ১টির আংশিক রায় সম্পন্ন হয়েছে। বিচারকি ক্ষমতা না থাকায় ২টা মামলা ফেরত গেছে। বাকি ১৪টির পূর্ণ ১টির আংশিক মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে।
×