ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাহনী ২-০ শেখ জামাল

শেখ জামালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

শেখ জামালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ধানমন্ডি ডার্বিতে জিতলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেডই। শুধু জিতলোই না, সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের কাক্সিক্ষত শিরোপাটাও। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে তারা কুড়িয়ে নেয় পরিশ্রমলব্ধ জয়। ২-০ গোলে হারায় অপর শিরোপা প্রত্যাশী দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডকে। বিজয়ী দল ম্যাচের প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। পৌষের দিনটা ছিল শীতলতায় পূর্ণ। কিন্তু আবাহনীর শিরোপা জেতায় স্টেডিয়ামে আসা তাদের সমর্থকদের সব শীতবোধ উধাও হয়ে যায়। গ্যালারি থেকে মাঠে নেমে এসে নিজেদের খেলোয়াড়দের কাঁধে তুলে উল্লাসে ফেটে পড়ে তারা। সবমিলিয়ে হাজার পাঁচেক দর্শক উপভোগ করেন খেলাটি। নিজেদের ২১তম ম্যাচে এটা ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’দের ষোড়শ জয়। পয়েন্ট ৫১। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা ‘বেঙ্গল ইয়োলো’দের দ্বিতীয় হার। ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। এখন তারা নিজেদের শেষ ম্যাচে ফরাশগঞ্জকে হারালেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। ফলে রানার্সআপ হওয়ার জন্যই চেষ্টা করতে হবে তাদের। পেশাদার লীগ নাম হওয়ার পর থেকে এবারের আসর নিয়ে বিপিএলে দশবারের মধ্যে ছয়বারই ট্রফি ওঠেছে আবাহনীর ঘরে। আর পেশাদার পূর্ব-যুগ মিলিয়ে এটা তাদের অষ্টাদশ শিরোপা। শেখ জামাল পেশাদার লীগে শিরোপা জিতেছে তিনবার। টানা দু’বার লীগ শিরোপা জিতলো আবাহনী। এ মৌসুমে দুটি ট্রফি জিতলো তারা। এর আগে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে (৩-১ গোলে) মৌসুমের শুরুতে ফেডারেশন কাপ জিতেছিল তারা। মজার ব্যাপারÑ তার আগের মৌসুমেও ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা (আরামবাগকে ১-০ গোলে হারিয়ে)। শুক্রবার ম্যাচে আবাহনীর জেতার কারণ মিডফিল্ডে তাদের আধিপত্য। ফলে সেখান থেকে বলের জোগান পাচ্ছিলেন না জামালের দুই গোলমেশিন রাফায়েল-সলোমন। সব পজিশনেই জামালের চেয়ে এগিয়ে ছিল আলী ইয়াকুবের দল। জাতীয় দলের বয়সভিত্তিক দল থেকে শেখ জামালে যোগ দেয়ার পর এই প্রথম হারের স্বাদ পেলেন মাহবুব হোসেন রক্সি। দ্রাগো মামিচ লীগের মাঝপথে দল ত্যাগ করায় এবং সহকারী কোচ অমলেশ সেনের আকস্মিক মৃত্যুর পরও আবাহনীর এভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে লীগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা নিশ্চয়ই কৃতিত্বপূর্ণ। ম্যাচে তাদের অধিনায়ক ওয়ালী ফয়সাল এবং রুবেল মিয়া কার্ড সমস্যার কারণে খেলতে পারেননি। জামালের ছিলেন গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড মমোদৌ বাও। কারণ মাথায় চোট। এছাড়া কার্ড সমস্যায় খেলতে পারেননি ইয়াসিন খানও। তারপরও দুদলের ম্যাচটি দারুণ জমেছে। কিন্তু গোলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে আবাহনীই। ১৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ইমন মাহমুদের ফ্রি বক্সে ক্লিয়ার করেছে জামালের ডিফেন্ডাররা। ২২ মিনিটে সোহেল রানার কর্নার বক্সে হেড দিয়ে ক্লিয়ার করেন শ্যামল মিয়া। আবারও কর্নার পায় আবাহনী। ২৩ মিনিটে সোহেল রানার কর্নার বক্সে ক্লিয়ার করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। ফিরতি বলে আবারও বল পেয়ে ক্রস করেন সোহেল, দারুণ ব্যাক হেডে জামালের জাল কাঁপান অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার নাসির উদ্দিন চৌধুরী (১-০)। আবাহনী গ্যালারিতে তখন আনন্দের বন্যা। ডিফেন্ডার হয়েও হাফ ডজন গোল করাটা কম কৃতিত্বের নয়। অনেক ফরোয়ার্ডেরই এই অর্জন নেই। ২৭ মিনিটে ডানদিক থেকে সাদ উদ্দিনের সেন্টার। গোলরক্ষক ফ্লাইট মিস করেন। দৌড়ে এসে বল সরিয়ে দিয়ে বিপদমুক্ত করেন খান মোঃ তারা। ৩৯ মিনিটে সহজতম সুযোগ হাতছাড়া হয় জামালের। ডানপ্রান্ত দিয়ে জাভেদ খানের ক্রসে বক্সে বল পেয়ে রাফায়েল ব্যাকপাস করেন সলোমন কিংয়ের কাছে। কিন্তু গোলমুখে বল পেয়েও ব্যর্থ হন এই নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে জাভেদের শট ছিল নিশ্চিত গোল। অভিজ্ঞতার পুরোটা নিংড়ে দিলেন আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। হাত বাড়িয়ে বলের গতিপথ বদলে দিয়ে গোলবঞ্চিত করেন শেখ জামালকে। ৫০ মিনিটে সলোমন কিংয়ের ক্রস নুরুল আবসার বুঝে নিয়ে পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিলে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন আবাহনীর এক ডিফেন্ডার। পরের মিনিটে জাহেদ পারভেজের কর্নার বক্সে পেয়ে সলোমন হেড করলেও বল সরাসরি গ্রিপে নেন গোলরক্ষক। ৮১ মিনিটে বক্সের ২০ গজ দূরে ফ্রি কিক পায় শেখ জামাল। সলোমন কিং কানফর্মের শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ইনজুরি টাইমে (৯০+৫ মিনিট) কোনাকুনি শটে সানডে চিজোবা গোল করলে জয় নিশ্চিত হয় আবাহনীর (২-০)। এটা সানডের ব্যক্তিগত নবম গোল লীগে। লীগের প্রথম লেগে আবাহনী-জামাল ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। গত লীগে হেড টু হেডে উভয় দল মুখোমুখি হয় ২ ম্যাচে। প্রথম লেগে ৩-৩ ড্র করে উভয় দল। ফিরতি লেগে অবশ্য ৩-২ গোলে জিতেছিল আবাহনী।
×