ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়ানডেতে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ ও টি২০তে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পেছনে ফেলে সব ফরমেট মিলিয়ে সম্মানজনক এই খেতাব পেলেন তিনি

আইসিসির ‘রানওয়ে লিডার’ সাকিব আল হাসান

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

আইসিসির ‘রানওয়ে লিডার’ সাকিব আল হাসান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গেল বছর ২০১৭ সালটি সাকিব আল হাসানের জন্য দুর্দান্ত কেটেছে। সেই ফল পেয়েই চলেছেন সাকিব। যেখানেই একাদশ ঘোষণা করা হচ্ছে সেখানেই সাকিবের নাম থাকছে। এবার তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাও (আইসিসি) সাকিবকে বিশেষ এক খেতাব দিয়ে দিয়েছেন। সাকিবকে গেল বছরের ‘রানওয়ে লিডার’ ঘোষণা করেছে আইসিসি। ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই গেল বছর দারুণ সময় কাটানো বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি। টেস্ট ও টি২০তে সেরা অলরাউন্ডার থেকেই বছর শেষ করেছেন সাকিব। তবে অনেকটা সময় নিজের কাছে রাখলেও পাকিস্তানের হাফিজের কাছে ওয়ানডের সেরা স্থানটি হারিয়েছেন। টানা ২৮৪ দিন টেস্ট অলরাউন্ডার সেরা, ২৮৩ দিন ওয়ানডে ও ৩১০ দিন টি২০ সেরার জায়গা ধরে রেখেছেন সাকিব। পুরস্কার তো তার প্রাপ্যই। ২০১৭ সালের অধিকাংশ সময় আইসিসির খেলোয়াড় র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন ফরমেটের সেরা অলরাউন্ডারের জায়গাটি দখল করে রেখেছিলেন তিনি। বছরজুড়েই ক্রিকেটের পথে সমানতালে চলতে থাকার জন্য গেল সোমবার আইসিসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘টেস্টে ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়ানডেতে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ ও টি২০তে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পেছনে ফেলে সব ফরমেট মিলিয়ে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ‘রানওয়ে লিডার’ খেতাব পেয়েছেন।’ বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাকিবের ভেরিফায়েড পেইজ থেকে এ বিষয়ে একটি পোস্টও দেয়া হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘অনবদ্য আরেকটি অর্জন! ক্রিকেটের তিন ফরমেটের অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা হওয়ায় ‘রানওয়ে লিডার’ হিসেবে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নাম ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি)। সাফল্যের এই প্রাপ্তি আসন্ন সিরিজগুলোতেও তাকে আরও ভাল খেলার প্রেরণা জোগাবে অবশ্যই।’ গেল বছর টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরমেটেই সেঞ্চুরি করেছেন ৩০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। আছে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চিরও। টেস্ট ক্রিকেটে দেশের হয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বড় ইনিংসটিও খেলেছেন সাকিব। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে বছর শুরু হয় বাংলাদেশের। সাকিব ২১৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন। যা কিনা দেশের হয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হয়ে গেছে। ভারতের বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এক ইনিংসে ৮২ রান করেন সাকিব। দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান। কলম্বোয় দেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে যে হারায় বাংলাদেশ সেই ম্যাচের এক ইনিংসে ১১৬ রান করেন সাকিব। ইনিংসটি না খেললে কী বাংলাদেশের জেতা সম্ভব ছিল। তামিম ইকবাল তো তাই ম্যাচসেরা সাকিবকেই ভেবে নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে সাকিবের নৈপুণ্যের ধার তো বুঝেছে আসলে অস্ট্রেলিয়াও। এক ইনিংসে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে বড় স্কোর গড়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। এতো গেল টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং। বোলিংটা তো আরও দুর্দান্ত। টেস্টে এ বছর সাকিবই সবচেয়ে বেশি ২৯ উইকেট নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতা টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে তো ম্যাচসেরাই হয়েছেন। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য ছাড়া অসিদের হারানো খুবই কঠিন ছিল। টেস্টে এ বছর ২টি সেঞ্চুরি ও ৪৭.৫০ গড়ে ৬৬৫ রানসহ ২৯ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ড এখনও আছেন সাকিবই। এবার ওয়ানডেতে আসা যাক। একটি সেঞ্চুরিসহ ৩৫.৮৩ গড়ে ৪৩০ রানসহ ৬ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। গত বছরের প্রথম ম্যাচেই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটিতে ৭২ রান ও ১ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ম্যাচ জেতায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ওয়ানডেতে এ বছর আসল কাজটিই সাকিবের ব্যাট থেকে হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে না জিতলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে বাংলাদেশ। এমন মুহূর্তে বিপদে পড়া দলকে টেনে তুলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশও জিতে। ম্যাচসেরাও হন সাকিব। বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস রচনা করে। প্রথমবার বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলে। সাকিবের অসাধারণ ব্যাটিংয়েই তা সম্ভব হয়। টেস্ট ও ওয়ানডেতেই শুধু নয়, দলের জয়ে টি২০তে আসল ভূমিকা পালন করেছেন সাকিব। বছরজুড়ে ৭ টি২০ ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচই জিতে বাংলাদেশ। সেটি জিতে সাকিবের নৈপুণ্যের কল্যাণেই। বছরজুড়ে ১২০ রান ও ৮ উইকেট শিকারি এ অলরাউন্ডার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জেতা ম্যাচটিতে ৩৮ রান ও ৩ উইকেট নেন। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে। ম্যাচসেরা হন সাকিব। একটি টি২০ জিতে বাংলাদেশ। সেটিও সাকিবের দুর্দান্ত নৈপুণ্যেই। বছরের শেষ সিরিজ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ) না খেলা, বিপিএলে ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারা, সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের সমালোচনার তীর হওয়া ছাড়া আর কোন ব্যর্থতাই বছরটিতে সাকিবকে ছুঁতে পারেনি। শুধু সাফল্যই মিলেছে। ব্যক্তিগত সাফল্যে তাই ২০১৭ সালে উজ্জ্বলই সাকিব। সেই উজ্জ্বলতার পুরস্কার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও দিল সাকিবকে। আইসিসির ‘রানওয়ে লিডার’ খেতাব পেলেন সাকিব।
×