ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

মোরসালিন মিজান আরও একটি বছর গত হয়েছে। হারিয়ে গেছে জীবন থেকে। ২০১৭ সালকে বিদায় জানিয়েছে বিশ্ব। এখন নতুন বছর ২০১৮। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকায়ও ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা। বিদায়ী বছরের শেষ দিনটি ছিল উৎসবমুখর। রাত ১২টা বাজার আগেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজি। বিভিন্ন বাসার ছাদে সমবেত হয় তরুণরা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও গোঁ ধরে। বের হয়ে আসে বাসা থেকে। কোন ছাদ থেকে পটকা ফোটানো হয়। কোনটি থেকে ওড়ানো হয় ফানুস। বাকিরা ছাদে ওঠে রঙিন আকাশ দেখেন। এর বাইরে অভিজাত কিছু হোটেলে পাশ্চাত্য ঢংয়ে ইংরেজী নববর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়। তবে রাস্তায় নামতে পারেনি কেউ। একটু ঘুরে বেড়াবেন? আনন্দ করবেন? সেটি সম্ভব ছিল না। এবারও সবকিছুর দখল নিয়েছিল পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দেয়ার নামে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছিল। সিলগালা করে দিয়েছিল সব। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, কারফিউ চলছে শহরে! কেন? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত বাজে অবস্থা তো ছিল না। থার্টি ফাস্ট নাইটে দু’ একটি দুর্ঘটনা কখনও সখনও ঘটেছে। তার মানে কি এই যে, লোক ঘর থেকে বের হতে পারবে না? মানুষের হাসিরাশি আনন্দের উপলক্ষগুলোকে এভাবে হাতকড়া পরাতে হবে? সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার খুব অভাব বোধ করছিলেনÑ এমন নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ নিয়ে শঙ্কা থাকলে তারা সেই শঙ্কা দূর করার জন্য কাজ করবে। কিন্তু কথায় কথায় সব বন্ধ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে কী অর্জিত হচ্ছে আসলে? সাধারণ মানুষ তাই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বলেছেন, থার্টি ফাস্ট নাইটে শহরের সব মানুষ একসঙ্গে মাতাল হয়ে যায় না। চুরি ছিনতাই শুরু করে দেয় না। পুলিশের এগুলো বোঝা উচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর উপরও জোর দেয় সচেতন নাগরিক সমাজ। শীতকাল এখন। রাজধানীজুড়ে চলছে উৎসব অনুষ্ঠান। তবে আলাদা করে বলতে হবে বেঙ্গল ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালের কথা। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের এই আসর এখন শুধু বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের নয়। বাংলাদেশের। অনন্য সাধারণ সঙ্গীতায়োজন সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তারও আগে থেকে মুগ্ধ ঢাকার সঙ্গীতপ্রেমীরা। বিগত দিনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয় এবারের উৎসব। গত ২৬ ডিসেম্বর আবাহনী মাঠে উদ্বোধন করা হয়। চলে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাঁচ রাতের উৎসবে মুখরিত ছিল গোটা এলাকা। সাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পীরা নিজ নিজ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন। সন্ধ্যা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত সুরে অবগাহন করেন হাজার হাজার শ্রোতা। বড় বিশাল মাঠ। চেয়ার-বেঞ্চ পেতে দেয়া হয়েছিল। নির্মাণ করা হয়েছিল অস্থায়ী গ্যালারি। এমনকি শীতলপাটি বিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। যার যেখানে খুশি বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। ছিল সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি। বিশেষ করে নারীদের, তরুণী মেয়েদের প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নারী পুরুষের গায়ে গা লাগা ভিড়। তবুও কেউ কারও সমস্যার কারণ হননি। সকলে মিলে উপভোগ করেছেন। প্রমাণ করেছেন, বাঙালী পারে। বহু কিছু দেখার শেখার এই উৎসব আরও হোক। অব্যাহত থাকুক। সকলের তা-ই প্রত্যাশা। গ্রাফিক ডিজাইন বেশ জনপ্রিয় এখন। দৃশ্যগত যোগাযোগ স্থাপনে মাধ্যমটি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। এই মাধ্যমে সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন শিল্পীরা। আর যারা নবীন, প্রস্তুত হচ্ছেন আগামী দিনের জন্য। কেমন সে প্রস্তুতি? দেখার একটি সুযোগ করে দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে এখানে বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজ করা হয়। সে ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে প্রদর্শনীর আয়োজন করে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ। বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন। সারা বছর তারা শিল্পকর্ম গড়েছেন। ক্লাসে কাজ করেছেন। সেরাগুলো দিয়ে সাজানো হয় জয়নুল গ্যালারি। দেয়ালে ছিল পেন্সিল স্ক্যাচ, বইয়ের ইলাস্ট্রেশন, প্রচ্ছদ, পোস্টার, ফটোগ্রাফি, ক্যালিওগ্রাফি, মোশন গ্রাফিকস, মিক্সড মিডিয়ার কাজ। দেখে আগামী দিনের শিল্পীদের চিন্তা ও শিল্পভাষা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। ২৯ ডিসেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনী ৪ জানুয়ারি শেষ হয়েছে।
×