ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৮টি শেড ভেঙ্গে ২টি ইয়ার্ড হচ্ছে

বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বেনাপোল বন্দরের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এখানে আমদানিকৃত পণ্য রাখার জন্য ৩৬টি শেড ছিল। যার মধ্যে ৮টি ভেঙ্গে ২টি বৃহৎ ইয়ার্ড নির্মাণকাজ চলছে। ২টি শেডে ইতোপূর্বে আগুন লাগার কারণে ব্যবহার বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বন্দরের পণ্য রাখা হচ্ছে মাত্র ২৬টি শেডে। বন্দরে হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে এক থেকে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন পণ্য। অথচ বন্দরের শেডের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন। জায়গা সঙ্কটের জন্য অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। বাইরে যত্রতত্রভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে করে পণ্য চুরিসহ নানাভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরে ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি শেড ভেঙ্গে ২টি বড় ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে। ইয়ার্ড দু’টির নির্মাণকাজ শেষ হলে পণ্যজট কিছুটা কমবে বলে আশাবাদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, শেড নির্মাণকাজে অনিয়ম করা হচ্ছে। সিডিউলে উল্লেখ পণ্যের জায়গায় নিম্ন মানের রড, সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে। ভারত থেকে আসা ১ হাজার থেকে ১২ শ’ পণ্য বোঝাই গাড়ি বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু প্রবেশ করতে পারছে মাত্র ৫-৬ শ’ গাড়ি। এদিকে, প্রতিদিনই প্রায় ৫ শ’ গাড়ি পেট্রাপোল থেকে বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকছে। বর্তমানে পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানিয়েছেন, বেনাপোলে ঢোকার জন্য পণ্যবাহী গাড়ি পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে থাকে বলে সঠিক সময় ওই আমদানি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয়। কোন কোন গাড়ি ১০ দিনও পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে থাকছে। অতিরিক্ত এই টাকা গুনতে হচ্ছে বলেই ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এর সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা পণ্য এবং মূল্যবান সময়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৩ লাখ যাত্রীর যাতায়াত হয় এই বন্দর দিয়ে। এর মাধ্যমে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব জমা হচ্ছে সরকারী কোষাগারে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কিছুই হয়নি বলা চলে। এ কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর অনুপযোগী বন্দরে পরিণত হতে চলেছে। এখানে পণ্যজট অসহনীয়। বন্দরে ট্রাকজটও পীড়াদায়ক। আর পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম (ইক্যুইপমেন্ট) নেই এখানে। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দূর করতে হবে জায়গার সঙ্কট। জায়গা সঙ্কটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না। অনেক পণ্যের প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে গাড়িকে বেনাপোলে প্রবেশের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়। এখনও বেনাপোলে ঢোকার অপেক্ষায় পেট্রাপোলে কমপক্ষে ৫ হাজার গাড়ি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরকে বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের ইক্যুইপমেন্ট। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে বন্দরটির কর্মচাঞ্চল্য কমতে কমতে এটি খুব শীঘ্রই অচল হয়ে পড়বে। বেনাপোল স্থলবন্দরে আসা পণ্য লোডিং-আনলোডিং-এর জন্য মাত্র পাঁচটি ক্রেন ও পাঁচটি ফর্কলিফট রয়েছে। তবে এদের মধ্যে একটি সচল থাকলেও বাকি ৪টি বেশিরভাগ সময় অচল অবস্থায় থাকে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করার জন্য একটি ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকিগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্দরের জায়গা সঙ্কট ও ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন। এই সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ দু’টি ইয়ার্ড নির্মাণকাজ চলছে। এটি চালু হলে বন্দরের ধারণ ক্ষমতা অনেক বাড়বে। চলতি বছরের জুন মাসে ইয়ার্ড দুটির কাজ সমাপ্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী। বন্দরের জন্য আরও ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবানা দিয়েছি। শেড নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ করে দেখা হবে। অনিয়ম পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।
×