ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফোর জি নিলাম, ভয়েস মেইল, এমএনপি ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

ফোর জি নিলাম, ভয়েস মেইল, এমএনপি ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

ফিরোজ মান্না ॥ চলতি বছর টেলিযোগাযোগ খাতে চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। গ্রাহকরা চলতি বছর থেকেই প্রকল্পগুলো থেকে সেবা পাবেন। দৃশ্যমান চতুর্থ প্রজন্ম (ফোর জি) নেটওয়ার্কের নিলাম, ভয়েস মেইল সার্ভিস চালু, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে এই চার বিষয় বাস্তবায়নের জন্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে টেলিযোগাযোগ খাতকে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে কাজ করছি। এ কাজগুলো চলতি বছরেই বাস্তবায়ন হচ্ছে। চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর জি) সেবা চালু, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি), বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেণসহ আরও কিছু কাজ মানুষের কাছে দৃশ্যমান হবে। আমরা জনগণকে কথা দিয়েছিলাম টেলিযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যাব। এ বছর আমরা তা বাস্তবায়ন করে জনগণকে উপহার দেব। এর বাইরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হবে। আইএসপিদের ইন্টারনেট সেবা গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএস দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি কোন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডর (আইএসপি) গ্রাহক পর্যায়ে ৫ এমবিপিএস ডেটা না দেয় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আগে আইএসপিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে এক এমবিপিএস মেগাবাইট পার সেকেন্ড) দিত। কিন্তু দেখা গেছে, তারা এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ না দিয়ে সেটা ভাগ করে আরও কয়েকজন গ্রাহককে দেয়া হতো। এবার আইন করা হয়েছে গ্রাহকরা যাতে কোন অবস্থাতেই ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের কম না পায়। এজন্য বিটিআরসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে নিবিড়ভাবে মনিটর করতে। আমরা ডাক টাকার সফটওয়্যার উদ্বোধন করেছি। চলতি বছর ৩ কোটি টাকার বেশি ডাক টাকার মাধ্যমে লেনদেন হবে এমন টার্গেট নেয়া হয়েছে। চতুর্থ প্রজন্ম (ফোর জি) চলতি বছরের টেলিযোগাযোগে চতুর্থ প্রজন্ম (ফোর জি) এবং লং টার্ম এভিলিউশন (এলটিই) নেটওয়ার্ক চালু হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফোর জি চালু করার তরঙ্গ নিলাম হবে জানুয়ারিতে। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সময়োপযোগী করে নতুন জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফোর জি মাধ্যমে গ্রাহকদের উন্নত টেলিকম সেবা দেয়া হবে। তারা উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এতে ভয়েসের চেয়ে ডেটার ব্যবহার বাড়বে। বর্তমান বিশ্বে ফোর জি টেলিযোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রাহক সেবায় এই প্রযুক্তি আমাদের দেশে অবশ্যই চালু করা হচ্ছে। এই সেবা চালু নিয়ে মোবাইল অপারেটররা অনেক তালবাহানা করেছে। কিন্তু কোন তালবাহানা মানা হয়নি। আমরা জনগণের কাছে কথা দিয়েছি। তাদের এ সেবা পৌঁছে দিতেই হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সারাদেশে উন্নত ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হবে। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। কিন্তু বেশ কিছু কারণে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের মার্চে স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়বে। আমরা মার্চ থেকেই বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ থেকে সেবা পেতে পারি। ইতিমধ্যে কৃত্রিম উপগ্রহটির শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। ইতিমধ্যেই আইটিইউতে ইনোভেটিভ আইসিটি সলিউশন উপস্থাপন, প্রচার এবং সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট তৈরির কৃতিত্বে আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড এওয়ার্ড পেয়েছে স্যাটেলাইট প্রকল্প। গাজীপুরে স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশনের কাজ শতকরা ৯৮ ভাগ শেষ হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এই স্লট। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের খরচ যোগাতে হংকং সাংহাই (এইচএসবিসি) ব্যাংকের কাছে থেকে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ইউরোর ঋণ নিয়েছে বিটিআরসি। ১১ নবেম্বর স্যাটেলাইট তৈরিতে ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালেস এ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে এক হাজার ৯৫১ কোটি টাকার চুক্তি করে সরকার। আমেরিকাতে স্যাটেলাইট নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ বলে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। তবে মার্চে ভাল আবহাওয়ায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে। দেশের টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৪০ ধরনের কাজে স্যাটেলাইটটি ব্যবহার হবে। আগে এসব সেবা বিদেশী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলত। স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে উড়লে এ অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়াও এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটির মধ্যে ২০টি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। এমএনপি সেবা তারানা হালিম বলেন, মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের সুবিধা বা মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চালু হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। এমএনপির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। চলতি বছরেই মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা গ্রাহকরা পাবেন। সূত্র জানিয়েছে, এমএনপি (মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি) সেবা চালুর বিষয়ে বিটিআরসি দীর্ঘ চার বছর আগে থেকে কাজ শুরু করে। এই সেবা চলতি বছর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। এই সেবায় গ্রাহকরা ইচ্ছে করলেই নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে পারবেন। বেশ আগেই এমএনপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন এ সেবা চালু করতে আর কোন বাধা নেই। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এমএনপি সেবার ওপর জোর দেয়ার পর গত গত বছরের শেষ দিকে এমএনপি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সালে জুনে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি। অপারেটরদের ২জি লাইসেন্স নবায়ন করার সময় এই নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সব কারণ দূর করে এমএনপি চালু করার জন্য সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও মোবাইল অপারেটররা বলছে, এই সেবা চালু করলে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। কিন্তু এমএনপি চালুর বিষয়ে বিটিআরসি যত সভা করেছে, সব সভাতেই মোবাইল অপারেটররা উপস্থিত ছিলেন। তারা দু’একটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল। ওই সব আপত্তি পরবর্তীতে সংশোধন করা হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতেই সব কিছু হয়েছে এখন তারাই বেঁকে বসেছে। সরকার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এমএনপি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করবই। ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চালু রয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে পথ চলতে হলে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশেও এমএনপি সেবা চালু করতে হবে। এতে গ্রাহক সেবাও বাড়বে। গ্রাহক সুবিধা ও অপারেটরদের ব্যবসার বিষয়টি মাথায় রেখেই এ সেবা চালু হচ্ছে। ভয়েস মেইল সেবা চালু বহুল প্রতীক্ষিত ভয়েস মেইল চলতি বছরের শুরুর দিকে চালু হচ্ছে। অনেকে মোবাইল কল ধরতে না পারলে ভয়েস মেইল পাঠাতে পারবেন। এজন্য ভয়েস মেইল পদ্ধতি আনা হচ্ছে। একজন গ্রাহক দিনে ২০টা পর্যন্ত ভয়েস মেইল পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ধরা হবে খুবই কম। ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্বল্প খরচে ভয়েস মেইল সার্ভিস চালুর কাজও শুরু করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভয়েস মেইল চালু করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন।
×