ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম শ্রেণীতে আসন খালি নেই একটিও তদ্বির দুই হাজার

ভর্তি বাণিজ্যে বেসামাল মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

ভর্তি বাণিজ্যে বেসামাল মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রথম শ্রেণীতে আসন খালি নেই একটিও অথচ সেখানেই অবৈধ ভর্তির তদ্বির মাত্র দুই হাজার! প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভর্তিবাণিজ্যে জড়িত অসাধুচক্র, কথিত অভিভাবক নেতার অবৈধ ভর্তি তদ্বিরে রীতিমতো বেসামাল দেশের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তির তৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডির কতিপয় সদস্য। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ সভাপতি, অধ্যক্ষসহ গবর্নিং বডির কয়েক সদস্যও রীতিমতো অসহায়। গবনিং বডির এক সদস্যের ‘অন্তত এক হাজার ভর্তি চাই’ এমন ঘোষণায় প্রতিবাদ শুরু করেছেন অভিভাবকরা। গবর্নিং বডির যেসব সদস্য অবৈধ ভর্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। যদিও অভিভাবকদের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হওয়ায় এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে পোস্টার ও লিফলেট বিলি করছেন। এসব ঘটনায় বছরের শুরুতেই মারাত্মক শিক্ষা সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের নামী এ প্রতিষ্ঠানটি। অভিভাবকরা বলছেন, সাবেক এক আওয়ামী লীগ নেতার (দলের বর্তমান কমিটিতে নেই) তদ্বিরের জন্যই সমস্যা জটিল হচ্ছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির গবনিং বডির সদস্য। সভাপতিসহ অন্যরা না চাইলেও তিনি এবং তার কিছু লোকজন ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার অভিভাবকের কাছ থেকে এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন। অবৈধভাবে ভর্তি করাতে একাধিক ব্যক্তি তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছেন অভিভাবকরা। তারা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখায় ব্যানার পোস্টার লাগিয়ে মিছিল প্রতিবাদ করেছেন। আইডিয়ালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রথম শ্রেণীতে সকল শাখায় মোট আসন ছিল ৮০০। ইতোমধ্যেই লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে শিশুরা। ফলে আর কোন আসন খালি নেই। বিষয়টিতে এবার সার্বক্ষণিক নজর রাখছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে তাই বলে বসে নেই ভর্তিবাণিজ্যে জড়িতরা। ইতোমধ্যেই অবৈধভাবে ভর্তির জন্য প্রভাবশালীদের সুপারিশ নিয়ে তালিকা জমা দিয়েছেন কেউ কেউ। একজন সদস্যই এক হাজার ভর্তি করাতে চান বলে চাপ দিয়েছেন। অবৈধ ভর্তির জন্য যে তদ্বির তার সংখ্যা অন্তত দুই হাজার। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সরকারের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোরশেদ খান, অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম ছাড়াও গবর্নিং বডির একাধিক সদস্য অবৈধভাবে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করতে নারাজ। সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষক প্রতিনিধি ও অভিভাবকরা ভর্তিবাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরব অবস্থান নিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন ভর্তির ওয়াদা দিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে আগাম টাকা হাতিয়ে নেয়া গবর্নিং বডির একাধিক সদস্য। যাদের একেকজন ৫০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা। সভাপতি আবু হেনা মোরশেদ খান ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, সরকারের নীতিমালার বাইরে কোন ভর্তি করা যাবে না। অধ্যক্ষ ড. শাহান আরার কাছে তাদের ওপর অবৈধ ভর্তির চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, চাপ আবার নাই? কী অবস্থায় আছি আমরাই জানি। তবে চাপ থাকলেও সরকারের আইনের বাইরে কিছু করতে রাজি নন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও গবর্নিং বডির সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি বলছিলেন, আমার বক্তব্য হচ্ছে সরকার যে ভর্তি নীতিমালা দিয়েছে তার বাইরে নয়। নীতিমালার মধ্যে থেকে যা করার তা করতে চাই। নীতিমালা অনুসারে যদি সামান্য কিছু মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায় কেবল সেটুকুই।
×