ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক প্রকল্পের উৎপাদনে আসার সময় পেরিয়েছে

যেসব সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের অগ্রগতি নেই সেগুলো বাতিল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২ জানুয়ারি ২০১৮

যেসব সৌরবিদ্যুত প্রকল্পের অগ্রগতি নেই সেগুলো বাতিল হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই এমন সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। চুক্তির পরও বেসরকারী উদ্যোক্তারা দিনের পরদিন সৌর বিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন কী বিদ্যুত বিভাগ সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে একটি ছাড়া, অন্য কোনটির বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ দেখতে পাননি। এসব প্রকল্পর কোন কোনটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার সময়ও পেরিয়ে গেছে। সম্প্রতি বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩৭তম বৈঠকে বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস জানিয়েছেন, একটি ছাড়া অন্য কোন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই। তিনি জানান, টেকনাফে ৩০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মালামাল নিয়ে এসেছে। এছাড়া অন্যগুলো কিছু করেনি। সৌর বিদ্যুতের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। গ্রাউন্ডে মালামাল না দেখলে এসব উদ্যোক্তাদের কাজ করতে দেয়া হবে না। তিনি জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রত্যেক প্রকল্পকে চিঠি দেয়া হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত না হলে প্রকল্প বাতিল হবে। প্রযুক্তির দাম কমায় সারাবিশে^ সৌর বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যয় কমে আসছে। সেখানে বাস্তবায়ন না করতে পারা এই সব প্রকল্পের বিদ্যুতের দর অত্যাধিক হওয়াতে কেন এসব প্রকল্প এখনও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে ১৮ থেকে ১৯ সেন্টে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ক্রয় চুক্তি হয়েছে। এখন এই দর ১২ সেন্টে নেমে এসেছে। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি এমন প্রকল্পের কাছ থেকে এখনও অতিরিক্ত দরে বিদ্যুত কেনা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে না। দিনের পর দিন সৌর বিদ্যুতের দাম সারাবিশ্বে কমছে। আমাদের এখানেও কমবে। কাজেই এখন অতিরিক্ত দামের এসব কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা যেতেই পারে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বলা হয়, বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হয়েছে এমন সব প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা যায়। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখে কোন প্রকল্প উৎপাদনে আসতে পারবে কি না তা আগে থেকেই বোঝা যায়। আবার পিপিআর-এর শর্ত অনুযায়ী কোন প্রকল্প বাতিল করতে হলে ২ বছর থেকে ১৮ মাস সময়ের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সুতিয়াখালি-ময়মনসিংহ-৫০ মেগাওয়াট, ধর্মপাশা-সুনামগঞ্জ-৩২ মেগাওয়াট, কক্সবাজার-২০০ মেগাওয়াট এবং কক্সবাজার-২০ মেগাওয়াট প্রকল্প চারটির অগ্রগতি নেই। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ৩৩২ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের অন্যতম শর্ত হিসেবে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের অন্তত ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে অন্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়লেও বাড়ছে না নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদন। সরকারের পরিকল্পনা বলছে দুই হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌর বিদ্যুত এক হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট, বায়ু বিদ্যুত এক হাজার ১৫৩ মেগাওয়াট, বায়োমাস থেকে ৩০ মেগাওয়াট এবং বায়োগ্যাস থেকে আরও সাত মেগাওয়াট। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে এখনও দুই হাজার ৪৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারে কাছেও নেই বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য সাড়ে তিন একর জমির প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে ১০০ মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন হয় ৩৫০ একর। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এত বড় জমি পাওয়া খুবই কঠিন। এর থেকে সারাদেশে ছোট আকারের সৌর বিদ্যুত প্রকল্প গ্রহণ করাকে বাস্তব সম্মত বলে মনে করেন তিনি।
×