ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বেহাল প্রাথমিক শিক্ষা

শিক্ষার প্রথম ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু এ দেশে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতি প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে প্রাথমিক শিক্ষা খাতকে। অরাজকতা নানাভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অথচ শিক্ষা জীবনের প্রথম সিঁড়ি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বেহাল অবস্থা দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা মানবজীবনের শিক্ষার আঁতুরঘরসদৃশ। একটি শিশুকে সুন্দর শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিপক্ব বীজ বপন করে উচ্চশিক্ষার ছাড়পত্র দিয়ে আলোকিত জীবনে পৌঁছার পথ দেখিয়ে দেয় প্রাথমিক শিক্ষা। জীবনজয়ের অনুর্বর মাটিতে ফলন ফলানোর কাজ করে এই শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষার প্রারম্ভকালীন এই সুযোগটা দেশের শিক্ষা প্রাঙ্গণে কতখানি নিরাপদে পা ফেলতে পারছে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। যদিও প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থাটা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে নড়বড়ে অবস্থায়। যেমন তেমনভাবে চলছে। সরকার শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিলেও প্রাথমিক পর্যায়ের এ মাধ্যমটিতে উন্নতির লক্ষ্যমাত্রা তেমন সন্তোষজনক নয়। বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই ও শিক্ষাবৃত্তি, উপবৃত্তি দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছে। কমেছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পাশাপাশি পাসের হার বেড়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার মান অদ্যাবধি আশানুরূপ নয়। অযোগ্য ও অব্যবস্থাপনা প্রাথমিক শিক্ষার বিশুদ্ধ মানকে আটকে দিয়েছে। যদি শিক্ষার গোড়ায় গলদ থাকে; তাহলে উচ্চশিক্ষার ভিত আরও দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য। শিক্ষা সনদ নিয়ে যথেচ্ছ দুর্নীতি চলছে। টাকায় মিলছে ‘জিপিএ-৫’। পরিবর্তন হচ্ছে ‘গ্রেড’। শিক্ষা কর্মকর্তা ও অভিভাবকরা ইচ্ছামতো নম্বর পরিবর্তন করছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের এই ধরনের দুর্নীতিতে জড়ানো হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে নম্বর বা জিপিএ বাড়িয়ে দেয়ার প্রমাণও মিলেছে। শিশুদের এই ধরনের অনৈতিক কাজে নিমজ্জিত করতে ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। বিগত বছরের মতো এবারও এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যাওয়ার ঘটনাও উদ্ঘাটিত হয়েছে। নম্বর ‘টেম্পারিং’-এর জন্য জড়িত কয়েকজনকে কারণ দর্শানো হলেও তারা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহলের তদ্বিরে। দেখা যাচ্ছে, ‘জিপিএ-৫ ও সনদের প্রতিযোগিতার’ কারণেই এক শ্রেণীর অভিভাবক সন্তানদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে দিচ্ছেন। আর অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তারা অর্থের লোভে এই ধরনের আত্মঘাতীপ্রবণতায় সহায়তা করছেন। তাদের কারণেই শিশুরা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে শিখছে। এতে দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমনিতেই পঞ্চম শ্রেণীতে জিপিএ বা গ্রেডনির্ভর পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার কথা জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা নেই। এই জিপিএ এবং সনদ পাওয়ার প্রতিযোগিতার কারণেই অভিভাবকরা সন্তানদের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করছেন। তাই এই কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে পঞ্চম শ্রেণীতে জিপিএনির্ভর সার্টিফিকেট পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। তবে বছর শেষে একটি সমাপনী পরীক্ষা থাকবে যার সনদে কোন জিপিএ থাকবে না। সনদে কেবল উল্লেখ থাকবে ‘উত্তীর্ণ’ হয়েছে। এতে গত কয়েক বছর ধরেই চালু নম্বর টেম্পারিং ও গ্রেড প্রদান বন্ধ হতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, উত্তরপত্র কেলেঙ্কারিসহ শিক্ষাক্ষেত্রে যে নেতিবাচকতা বিরাজ করছে, সে সব নিরসনে শুভবোধসম্পন্ন সবার ঐকান্তিক প্রয়াস জরুরী। শিক্ষাক্ষেত্রে যে কলুষতার ছায়া পড়েছে তা নিরসনে যূথবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া গত্যন্তর নেই।
×