ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের আবাসন খাত

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের আবাসন খাত

রহিম শেখ ॥ টানা কয়েক বছরের মন্দাভাব থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে আবাসন খাত। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায়, ব্যাংক ঋণের সুদহার কমে আসায় এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকের অর্থায়ন চালু হওয়ায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। গত এক-দেড় বছরে অবিক্রীত থাকা ফ্ল্যাটের বিক্রিও বেড়েছে ৫-৭ শতাংশ। এদিকে আবাসন খাতের সংকট কাটাতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট কিনতে ঋণ সহজলভ্য, জটিলতা নিরসন, রেজিস্ট্রেশন সহজকরণ, সরকারী সংস্থা হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের অর্থের যোগান বাড়ানো, বহুজাতিক সংস্থার তহবিলের যোগানসহ নানামুখী পদক্ষেপ। আবাসন ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবারও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালুর চিন্তা করছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসতে পারে। পাশাপাশি ক্রেতাদের ওপর সবচেয়ে বড় বোঝা প্লট ও ফ্ল্যাটের ে রজিস্ট্রেশন ব্যয় কমিয়ে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কোন প্রতিষ্ঠান যেন তাদের সদস্য না হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে। সরকার তাদের দাবিতে সাড়া দিয়ে নির্দেশনা জারির ফলে কমে এসেছে এ খাতের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। জানা গেছে, জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ১৫ ভাগ। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এ খাতে নিয়োজিত রয়েছে। আবাসন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিল্প খাতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ ব্যবসা ছিল রমরমা। আবাসন খাতকে ‘অনুৎপাদনশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল ‘পুনঃঅর্থায়ন’ নামের তহবিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের সঙ্গে সঙ্গে বিধ্বস্ত হয় আবাসন খাতও। ওই বছরের ২১ জুলাই হঠাৎ করে আবাসন খাতে সব ধরনের নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৮ মে পুনরায় এ খাতে গ্যাস সংযোগ চালুর নির্দেশনা দিলেও আবাসন কোম্পানিগুলো ক্রেতার কাছে কোন ফ্ল্যাটই হন্তান্তর করতে পারেনি। ওই সময়ে ফ্ল্যাটের ক্রেতা কমে গিয়েছিল প্রায় ৪২ শতাংশ। এরপর ২০১৫ সালের এপ্রিলে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেন। এর আগে ২০১১ সালে ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রির মন্দাভাবে রীতিমতো দুর্যোগ বয়ে যায়। এ দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। এরপর ২০১৩ সাল পুরোটাই গেছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুখথুবড়ে পড়ে আবাসন খাত। টানা কয়েক বছর এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রাণপণ চেষ্টা ও সরকারের সহযোগিতায় আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে আবাসন খাত। গত এক-দেড় বছরে ফ্ল্যাট বিক্রি আনুমানিক ৫-৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে নিবন্ধন ব্যয় ১৪ শতাংশ থেকে ৬-৭ শতাংশে নামিয়ে আনা ও সুদের হার আরও কমিয়ে আনলে আবাসন খাতের গতিশীলতা পুরোপুরি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। জানতে চাইলে রিহ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি বলেন, আবাসন খাত অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে কিছুটা ভাল অবস্থায় আছে। পূর্বের তুলনায় এ খাতে বর্তমানে ক্রেতাদের আস্থার সঙ্কট কেটেছে। আশা করি সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের সহাবস্থান পেলে সামনের দিনগুলোতে আরও ভাল অবস্থানে যাবে এ খাত। তিনি বলেন, সব ব্যাংক থেকেই কম সুদে ঋণসুবিধা পাওয়া যায় না। এ কারণে মধ্য আয়ের মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। এ জন্যও স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি গৃহঋণ দরকার। এখন কিছু বেসরকারী ব্যাংক এগিয়ে আসছে। আমরা সরকারকে বারবার জানিয়েছি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার জন্য। বিশেষ করে সরকারী ব্যাংক এগিয়ে এলেই বলা যায় সমাধানের পথ পাওয়া যাবে। সূত্র বলছে, আবাসন খাতের স্থবিরতা কাটাতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি নির্দেশনা দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে রিহ্যাবের সদস্য না হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না কোন প্রতিষ্ঠান। ডিসেম্বরেই সার্কুলার জারি করে প্রবাসীদের জন্য গৃহঋণ উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো, রেজিস্ট্রেশন সহজকরণ, জটিলতা কমানো, সরকারী সংস্থা হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের অর্থের জোগান বাড়ানো, বহুজাতিক সংস্থার তহবিলের জোগানসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জানা যায়, বর্তমানে আবাসন খাতের নিবন্ধন ব্যয় সব মিলিয়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে গেইন ট্যাক্স চার শতাংশ, স্ট্যাম্প শুল্ক তিন শতাংশ, নিবন্ধন ফি দুই শতাংশ, ভ্যাট দেড় থেকে সাড়ে চার শতাংশ। অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এ ব্যয় অনেক বেশি। এটি কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশে আনার দীর্ঘদিনের দাবি রিহ্যাব। সংগঠনটির সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে আনলে নাগরিকরা সঠিক দলিল মূল্য দেখাতে আগ্রহী হবেন। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এছাড়া ভবন নির্মাণকালে জমির মালিককে সাইনিং মানির গেইন ট্যাক্স ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করা, নির্মাণসামগ্রী ক্রয়কালে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রদেয় ভ্যাটের চালানপত্র সংগ্রহ করার বিধান থেকে রেহাই দিতে এনবিআরকে উদ্যোগী হওয়া, ফ্ল্যাটের সেকেন্ডারি বাজারকে (প্রথমবারের পর ক্রয়-বিক্রয়) শক্তিশালী করতে নিবন্ধন ফি কমিয়ে তিন শতাংশে আনার দাবি জানান তিনি। সম্প্রতি এক আলোচনাসভায় এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, আবাসন শিল্পে রাজস্ব সংক্রান্ত যে জটিলতা এতদিন ছিল তা আর থাকবে না। ভবিষ্যতে আবাসন শিল্পকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এ শিল্পের আমরা আটটি সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এসব সমস্যা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা হবে। প্রবাসীদের জন্য গৃহঋণ উন্মুক্ত ॥ গত ৬ ডিসেম্বর প্রবাসীদের জন্য গৃহঋণ উন্মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে জারি হওয়া সার্কুলারে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের গৃহায়ন খাতে ঋণ দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ঋণসীমা হবে ৫০ অনুপাত ৫০। অর্থাৎ ৬০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটের জন্য ব্যাংক অর্ধেক বা ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। এর আগে ২০১২ সালে দেশে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য ব্যাংকঋণের সীমা করা হয়েছিল ৭০ অনুপাত ৩০। অর্থাৎ ফ্ল্যাটের নির্ধারিত দামের ৭০ শতাংশ ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে। কমে এসেছে আবাসনে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ॥ ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণের সুদ আরও একদফা কমাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। শীঘ্রই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই এটি কার্যকর হবে। চলতি বছর গৃহনির্মাণ ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণের সুদহার একবার কমানো হয়েছে। গৃহ ঋণ ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ, আর ফ্ল্যাট ক্রয়ের সুদহার ১০ শতাংশ করা হয়। এখন এটি সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়ে ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসিসহ অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৯ শতাংশ বা এর কমে ঋণ দিচ্ছে। সার্বিকভাবে ঋণের সুদহার কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিএইচবিএফসিও ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিএইচবিএফসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঋণের সিলিং ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮০ লাখ এবং ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এ ছাড়া টঙ্গী ও সাভার পৌর এলাকা এবং দেশের সব বিভাগীয় জেলা সদরে ঋণের সিলিং ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬০ লাখে এবং সুদহার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি গৃহনির্মাণে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ এবং ঋণের পরিমাণ ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ খাতের ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে গৃহঋণ দিচ্ছে। এর মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক সাড়ে ৮, সিটি ব্যাংক ৮ দশমিক ৭৫, আইডিএলসি ফিন্যান্স ৯ থেকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। ৮৬৫ কোটি টাকার ঋণ পাচ্ছে হাউস বিল্ডিং ॥ আবাসন খাত চাঙ্গা করতে সম্প্রতি ঋণচুক্তি সই করেছে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (এইচবিএফসি) ও আইডিবি। এই চুক্তির ফলে সরকারী এই সংস্থাটি পাবে ৮৬৫ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা। এ ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশ, যা আগামী ২০ বছরে পরিশোধ করা যাবে। যদিও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (এইচবিএফসি) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে সুদের হার ২ শতাংশ করার আবেদন করেছে। হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (এইচবিএফসি) সূত্র জানিয়েছে, পল্লী জনগণের জন্য বিশেষ আবাসন ঋণ কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। কৃষিজমি রক্ষা করে গ্রামীণ আবাসন সমস্যা সমাধানে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে হাউস বিল্ডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ পল্লী ও উপশহর আবাসনে অর্থায়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৮৫৬। দেশের শহরতলী ও পল্লী এলাকায় এক হাজার ৪৬ বহুতল আবসিক ভবন নির্মাণ করবে, যাতে আবাসিক ইউনিট থাকবে ৭ হাজার ৯৭৬। পল্লী এলাকার জনগণ এখান থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিতে পারবে। এ ছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আবাসন ঋণ কর্মসূচী নিয়েছে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। তিন বছর বিদেশে অবস্থান করলে, বৈধ কাগজপত্র ও আয় থাকলে এই ঋণ পাবেন যে কোন প্রবাসী। এজন্য কোনো প্রবাসীকে দেশে আসতে হবে না। দেশের ভেতর একজনকে নমিনি করে দিলে হবে। এ প্রকল্পে আগে ৫০ : ৫০ ঋণ দেয়া হতো। এটিকে আরও সহজ করে ৭০ : ৩০ করা হয়েছে। রিহ্যাবের সদস্য ছাড়া ব্যবসা নয় ॥ এক সময় রিহ্যাবের সদস্য ছিল এক হাজার ২০০ এর মতো। নানা অভিযোগে বর্তমানে এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৩। জানা গেছে, একই জমি কয়েকবার বিক্রি করা, সময়মতো প্লট ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করা, চুক্তির পরে বেশি টাকা দাবি করা, ফ্ল্যাটে যেসব সুবিধা দেয়ার কথা তা না দেয়াসহ হাজারো অভিযোগ আবাসন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। আবার জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ঝামেলা ও ক্রেতার সঙ্গে আবাসন প্রতিষ্ঠানের মনোমালিন্য যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই যেসব আবাসন প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্য নয় তাদের বিরুদ্ধে। তাই রিহ্যাবের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কোন প্রতিষ্ঠান যেন রিহ্যাবের সদস্য না হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে না পারে। সরকার তাদের দাবিতে সাড়া দিয়ে বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ১৩ (১) ধারার বিধানমতে সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে রিহ্যাবের সদস্য পদ আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে পরিপত্রে সকল ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে রিহ্যাবের সদস্য পদ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। রিহ্যাব সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, রিহ্যাব সদস্য ছাড়াও অনেকে কোম্পানি লাইসেন্স পেয়েছে। তাদের জন্য আবাসন খাতে বদনাম হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে আমরা সেগুলো নিষ্পত্তি করতে পারি না। সরকারের নতুন এ নিয়মের ফলে এ খাতে শৃঙ্খলা আসবে। জবাবদিহিতা বাড়বে। বিদেশে সেকেন্ড হোমের নামে টাকা পাচার বন্ধের দাবি ॥ দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান উপেক্ষা করে বাংলাদেশী অনেকেই মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচার করছেন। দ্রুত এ অর্থ পাচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, পাচারকৃত অর্থ এ দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতো। দেশের নানা শ্রেণীর মানুষ কাজের সুযোগ পেত। দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে যারা বিদেশে অর্থ পাচার করছেন, তাদের তালিকায় রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আছেন। তবে বেশি অর্থ পাচার করা হচ্ছে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে। পাচারকৃতদের তালিকায় কালো টাকার মালিকও আছেন। মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া তথ্যানুসারে গত এক যুগে সেখানে সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন ৩ হাজার ৫ বাংলাদেশী। তাদের প্রত্যেককে মালয়েশিয়ায় ১০ বছরের জন্য নন-মালয়েশিয়ান হিসেবে ভিসা নিতে কমপক্ষে প্রায় ১ কোটি টাকা করে মালয়েশিয়ার ব্যাংকে জমা রাখা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় করতে হয়েছে। সে হিসেবে শুধু মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিহ্যাবের পরিচালক কামাল মাহমুদ জানান, গত এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফ্ল্যাটের দাম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। দাম কমায় ও ঋণসুবিধার আওতা বাড়ায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ এখন বেড়েছে। তবে সরকার অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিলেও অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ রেখেছে। এ কারণে এখনো ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যয় করতে ভয় পাচ্ছে অনেকে। বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে এই খাতে গতি ফিরবে বলে তিনি মনে করেন। রিহ্যাব মেলায় ব্যাপক সাড়া ॥ সোমবার শেষ হয়েছে এ বছরের শীতকালীন আবাসন মেলা। গত পাঁচ দিনে রিহ্যাবের আবাসন মেলায় অন্তত ২৫ হাজার দর্শনার্থী সাধ্যের মধ্যে পছন্দের ফ্ল্যাট ও প্লট খুঁজেছেন। মেলায় প্রায় প্রতিদিনই ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। আগের তুলনায় প্লট ও ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা কমে আসায় আগের তুলনায় বিক্রিও বেড়েছে। বিক্রেতারা জানালেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক ক্রেতা পাওয়ায় খুশি তারাও। অন্য সব বছরের চেয়ে এবার মেলায় ভিড় অনেক বেশি। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে প্লট ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন। আবার অনেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
×