ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান শীত কোথায়? সাধারণত নবেম্বর থেকেই ঠান্ডা অনুভূত হতে শুরু করে। এবার একমাস পর ডিসেম্বরে গরু খোঁজা হচ্ছে। না, শীত নামের গরুটি নেই কোথাও! অনেকেই অবাক। বলছিলেন, সব ওলটপালট হয়ে গেছে। আসলেই তো চরিত্র বদলেছে ষড়ঋতুর। এখন শীত-গ্রীষ্মের হিসাব মেলা ভার। শহর ঢাকার অবস্থা আরও খারাপ। তথৈবচ। অধিকাংশ সময় গরম। আর যখন বৃষ্টি নামে, দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এ অবস্থায় বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার মানুষ শীতের ভক্ত। এমনিতেই বাঙালীর প্রিয় ঋতু শীত। হেমন্তকাল শীতের বাহন হিসেবে কাজ করে। তবে এবার সেটি তেমন মনে হয়নি। হেমন্ত নিজের রূপ কিছুটা বদলে নিয়েছিল। গরমে গা ঘেমেছে। এখন শীত। পৌষের প্রথম দিন থেকেই মোটামুটি ঠা-া অনুভূত হচ্ছিল। এ পর্যায়ে এসে প্রকোপ বেড়েছে। ঢাকাবাসী টের পাচ্ছেন, শীত এসেছে। দুদিন ধরেই শীতল বাতাস গা কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মুখ লুকিয়েছে সূর্য। অনেক দেরি করে ঘুম ভাঙছে তার। ভরদুপুরেও উত্তাপ নেই। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে একচিলতে রোদ এসে পড়েছিল শহুরে বাড়ির বাড়ান্দায়। বিকেল গড়াতেই ঠান্ডা বেড়ে যায়। এখন রাতে শিশির। ভোরে কুয়াশা। কেউ দুই হাত পকেটে পুরে হাঁটছেন। কারও হাত বুকের ওপর ভাঁজ করা। গায়ে মোটা কাপড়। শীতকাল যেহেতু, বেশ শুষ্ক সময়। শরীরের ত্বক টান টান। রুক্ষ। এর পরও শীত এসেছে ভেবে অনেকেই খুশি। উপভোগ করতে ব্যস্ত। ফ্যাশনটাও বদলে গেছে। মোটা সোয়েটার, ব্লেজার, চাদর ইত্যাদি গায়ে উঠেছে। মাথার চুল অবধি ঢাকা। গরম টুপি পরে নিয়েছেন ঢাকাবাসী। শীত একই সঙ্গে পিঠেপুলির। শহর ঢাকার এখানে ওখানে চুলো বসে গেছে। ভাপা পিঠা, চিতই, তেলের পিঠা হচ্ছে চোখের সামনে। পথ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে থামছেন পথচারী। পিঠা কিনে খাচ্ছেন। আর আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পৌষমেলা। সকালে তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। শহুরে নতুন প্রজন্মকে শেকড়সন্ধানী করতেই এমন আয়োজন। পৌষমেলায় থাকছে প্রায় অর্ধশত স্টল। এসব স্টল ঘুরে খাওয়া যাবে পছন্দের পিঠাপুলি। মঞ্চে থাকছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, পুঁথিপাঠ, বাউলগান, সংযাত্রা, যাত্রা, নৃত্যনাট্য উপভোগ করতে পারবেন শহরবাসী। আয়োজক পৌষমেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেদিন। তিনি বলছিলেন, পৌষমেলা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এর সঙ্গে তৃণমূল মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির বিশেষ যোগ রয়েছে। রাজধানী শহরের ছেলেমেয়েদের আমরা যতটুকু সম্ভব তা জানাতে চাই। এ কারণেই পৌষমেলার আয়োজন। শুক্র থেকে রবিবার প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত নযটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা। শুক্র ও শনিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্ব বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। একই রকম আয়োজন থাকবে রবিবার বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। সময় আছে হাতে? সময় বের করে নিন। ঘুরে আসুন পৌষমেলা। ছায়ানটের আয়োজনটির কথা বলতে হবে। বাঙালীর গর্বের প্রতিষ্ঠান প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজন করেছে শুদ্ধ সঙ্গীত উৎসবের। দুই দিনব্যাপী আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় বৃহস্পতিবার। ধানম-ির ছায়ানট ভবনে চমৎকার আয়োজন। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে চলে রাত দশটা পর্যন্ত। পুরোটা সময় সুর নিয়ে খেলা। রাগ মধুবন্তী, ঝিনঝুটি, শ্রী, জয়িতকল্যাণ, ভিন্নষড়জ, মালকোষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শোনেন শ্রোতা। প্রকৃত শ্রোতাদের জন্য সত্যি অন্যরকম আয়োজন। চলবে কাল শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত। শেষ করা যাক রেল দুর্ঘটনার খবর দিয়ে। ঢাকার ভেতরে আবারও ট্রেনে কাটা পড়েছে মানুষ। রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিং ও বনানী রেলস্টেশনের কাছাকাছি স্থানে বৃহস্পতিবার দু’দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মহাখালী রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়েন এক নারী। এক পুরুষ মারা যান বনানী রেল স্টেশনের উত্তরপাশে। রেললাইন ধরে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়েন তিনি। নির্মম মৃত্যু। কিছুদিন পর পরই ঘটছে। এর পরও সতর্ক হচ্ছেন না পথচারী। রেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলাও লক্ষ্য করার মতো। এভাবে চলছে। কতদিন আর চলবে? উত্তর জানা নেই কারও।
×