ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জে ইঁদুরে ক্ষতি বছরে ১১ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

রূপগঞ্জে ইঁদুরে ক্ষতি বছরে ১১ কোটি টাকা

মীর আব্দুল আলীম, রূপগঞ্জ ॥ হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা নেই, নেই সেই বাঁশির সুরও। তাই বেড়ে গেছে ইঁদুরের উপদ্রব। ইঁদুর ছোট হলেও ক্ষতি করে বিশাল। শুধু ক্ষতি বললে বোধ হয় ভুল হবে। ইঁদুরের মাধ্যমে প্রায় ৬০ প্রকার রোগজীবাণু ছড়ায়। প্রতিবছর ইঁদুরের কারণে রূপগঞ্জে ২৮০ টন ফসলের ক্ষতি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া বাসা-বাড়ি, শিল্প কারখানা, বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি করে ইঁদুর। উপজেলার ৩৫৬ টি পোল্ট্রি শিল্পের ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলার কারণে বছরে ক্ষতি হয় প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় ইঁদুরের কারণে বছরে প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে। ইঁদুর নিধন মাস উপলক্ষে গত অক্টোবরে ৬০ হাজার ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সেমিনার-সিম্পোজিয়ামসহ নানাভাবে লোকজনদের উদ্বুদ্ধ করার কারণে চলতি বছরে ইঁদুরের উপদ্রব কিছুটা কমে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উপকণ্ঠ রূপগঞ্জে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত ৫ বছরে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৫ ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। চলতি বছরের ইঁদুর নিধন অভিযান মাস উপলক্ষে ৬০ হাজার ৫৮২ ইঁদুর নিধন করা হয়েছে। তবে বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা ৪ লাখের উপড়ে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ। ফসলের ক্ষতির বাইরে ইঁদুর গ্রামীণ অবকাঠামো, বিশেষ করে বেড়িবাঁধ ও গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি করে। তবে টাকার অঙ্কে তা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও খাদ্য বিভাগ ইঁদুরের কারণে তাদের তৈরি করা অবকাঠামো ও সম্পদের ক্ষতির বিষয়টি সামনে এনেছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে ইঁদুর সাধারণের ফসলের ক্ষেতে ও গ্রামীণ এলাকার বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে সেখানে অবস্থান করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নিম্নভূমি প্লাবিত হলে এবং ফসলের জমিতে বৃষ্টির পানি পড়লেই ইঁদুর গিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, ক্ষতি করে এটা ঠিক, কিন্তু কি পরিমাণ ক্ষতি হয় সে তথ্য নেই। বছরে একটি ডালের দোকান বা গুদামে ৬৫ হাজার টাকার ডাল ইঁদুরের পেটে যায় অথবা বিনষ্ট হয়। এই হিসাব অনুযায়ী, ৫০ টি দোকান বা গুদামে বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪ লাখ টাকায়। এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে অন্তত ৫ লাখ টাকার বস্তা কেটে বিনষ্ট করে ইঁদুর। ব্যবসায়ীদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দোকানের প্রায় ১২ হাজার কেজি চাল ইঁদুরের পেটে যায় অথবা বিনষ্ট হয়। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের গড় মূল্য দুই হাজার টাকা হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৬ লাখ টাকা। আর বস্তা কাটার কারণে ক্ষতি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওই বাজারগুলোতে মুদি দোকানের সংখ্যা ২ হাজারের উপড়ে। এর মধ্যে জরিপের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ২৭ টি দোকান। এসব দোকানে বছরে অন্তত ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার পণ্য ইঁদুর বিনষ্ট করে। একইভাবে পশু খাদ্যের দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, ওষুধের দোকান, কাপড়ের দোকান, বিপণি-বিতান ও বাসাবাড়িতে ইঁদুরের আক্রমণে লাখ লাখ টাকার পণ্য, বইপত্র, আসবাবপত্র বিনষ্ট হয়। পাঁচটি হোটেলে বছরে ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায় ৮৫ হাজার টাকা। জানা গেছে, রূপগঞ্জে ছোট-বড় প্রায় ৩৫৬ পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে। ইঁদুর এসব মুরগির খামারে গর্ত করে মুরগির ডিম ও ছোট বাচ্চা খেয়ে ফেলে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ইঁদুর প্রতিটি মুরগির খামারে বছরে ১৮ হাজার টাকার ক্ষতি করে। সে হিসেবে ৩৫৬ টি খামারে বছরে ইঁদুর বিনষ্ট করে প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি খামারি সোলায়মান মিয়া বলেন, ইঁদুরের কারণে প্রতি মাসেই ক্ষতি হয়। এদিকে, ইঁদুরের কারণে প্লেগ, জন্ডিস, টাইফয়েড, চর্মরোগ, রিকেটস, আমাশয়, জ্বর, কৃমিসহ প্রায় ৬০ ধরনের রোগজীবাণু ছড়ায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ইঁদুরের কারণে প্লেগসহ নানা ধরনের রোগ ছড়ায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, ইঁদুরের কারণে বছরে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ কারণে কৃষি অফিসের উদ্যোগে সচেতনতা বাড়াতে নারী-পুরুষের মাঝে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। আগের চেয়ে এখন ইঁদুরের উপদ্রব কিছুটা কমে এসেছে।
×