ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মর্মান্তিক!

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

মর্মান্তিক!

কুলখানির মতো শোকানুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের প্রচন্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে ১০ জনের করুণ মৃত্যু এবং ৫০ জনের বেশি আহতের ঘটনা নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। ‘চট্টল বীর’ হিসেবে খ্যাত আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুশোক অতিবাহিত না হতেই সোমবারের এই ঘটনা আপামর চট্টগ্রামবাসীর মতো শোকবিহ্বল করে দিয়েছে সমগ্র দেশকে। একজন জনপ্রিয় ও প্রাণপ্রিয় নেতার কুলখানিতে জনতার ঢল নামবে এমনটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। প্রয়াত নেতার কুলখানি উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দেড় লক্ষাধিক লোকের জন্য ১৪টি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, ১৩টি সেন্টারের আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও জামাল খানের রিমা কনভেনশন সেন্টারে সনাতন ধর্মানুসারীদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ভবনটিতে প্রবেশের পথ ছিল সরু ও ঢালু। একপর্যায়ে একই সঙ্গে কয়েক শ’ লোক প্রবেশ করতে গেলেই ঘটে পদদলনের ঘটনা। এও জানা যায় যে, একজন ব্যক্তির পড়ে যাওয়া মোবাইল তুলতে গিয়েই পেছনের প্রচন্ড ভিড়ের চাপে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে মুহূর্তেই। শোকানুষ্ঠান পরিণত হয় আরও গভীর শোকসাগরে। প্রকৃতপক্ষে এত মৃত্যুর কোন সান্ত¡না নেই বললেই চলে। মর্মান্তিক ও শোকাবহ এই ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক, সান্ত¡না জানানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। দেশে এবং বিদেশেও পদদলিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় লাঙ্গলবন্দে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ৭ নারীসহ মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে ১০ জনের। এর বাইরেও বিভিন্ন সময় জাকাতের কাপড় বিতরণে পদদলিত হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সমাবেশে বিশেষ করে জনাকীর্ণ স্থানে এ জাতীয় ঘটনার খবর পাওয়া যায়। কুলখানি, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানসহ যে কোন ধর্মীয় সমাবেশ ও অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেই অনুষ্ঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এও সত্য যে, এসব অনুষ্ঠানের সঙ্গে সাধারণ মানুষের আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি জড়িত থাকে। সে ক্ষেত্রে কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস ও অসংযত আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটতে পারে। অনেক সময় রকমারি গুজবও ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়ে জনারণ্যে। আর এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হয় মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। চট্টগ্রামের ঘটনা আমাদের এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অধিক জনাকীর্ণ যে কোন সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়। জীবন অত্যন্ত মূল্যবান এবং বেঁচে থাকা সর্বদাই আকর্ষণীয়। আমরা চট্টগ্রামের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।
×