ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ১৩ ডিসেম্বর ॥ বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবির বাগজানা ইউনিয়নের ভূইডোবা গ্রাম সংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা পাঁচবিবি হয়ে জয়পুরহাটে প্রবেশ করেন। তারা পাঁচবিবি থানা ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জয়পুরহাটে এসে ডাকবাংলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই সময় মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ করে জানানো হয় বিজয়বার্তা। মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে বিজয়ের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত ঘোষণা হওয়ার পর পরই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মুক্তিকামী বাঙালীরা বিজয়ের আনন্দে নেমে পড়েন। আসাদুজ্জামান বাবলু ডাকবাংলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরই সদর থানায় এসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সাভার নিজস্ব সংবাদদাতা সাভার থেকে জানান, আজ ১৪ ডিসেম্বর। সাভার মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে পশ্চাদপসারণকারী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার জিরাব এলাকার ঘোষবাগ-গঙ্গাবাগ গ্রামে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের এক গেরিলা গ্রুপের সম্মুখযুদ্ধের মাধ্যমে সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। ওই যুদ্ধে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু নামে এক অকুতোভয় অসীম সাহসী কিশোর শহীদ হন। তাঁর লাল রক্তে সাভারের লাল মাটি রঞ্জিত হয়ে সেদিন সাভার হয়েছিল শত্রুমুক্ত। ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পাকবাহিনীর সদস্য এবং তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিভিন্ন এলাকায় নাস্তানাবুদ হচ্ছিল। তাই তারা পিছু হটে ঢাকার দিকে ফিরছিল। এ সময় ঢাকা উত্তর গেরিলা ইউনিটের প্রধান শহীদ রেজাউল করিম মানিকের গেরিলা গ্রুপটির মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকার উত্তরাঞ্চলের কোথাও সেতু উড়িয়ে দিয়ে, ব্যারিকেড দিয়ে অথবা রাস্তা কেটে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শত্রুবাহিনীর যোগাযোগ বা চলাচলে বিঘœ ঘটানো। এমনই এক অভিযানে ধামরাইয়ের কালামপুরের অদূরে ডাউটিয়া সেতুটি ডিনামাইটের সাহায্যে ধসিয়ে দেয়ার অপারেশনে গ্রুপ কমান্ডার মানিকসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ১৩ নবেম্বর শহীদ হন। এরপর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়া পর্যন্ত গ্রুপটির কমান্ডার ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। নাসিরউদ্দিন ইউসুফের গেরিলা গ্রুপের সঙ্গে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটু ৮ ডিসেম্বর সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়নের তৈয়বপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে অবস্থান নেয়। ১৪ ডিসেম্বর সকালে পাক হানাদার বাহিনীর একটি দল টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত হয়ে ঢাকার পথে জিরাব এলাকার ঘোষবাগ গ্রামে এসে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সে খবর পৌঁছে যায়। শীতের সকালে সোজা পথে না গিয়ে বড় একটি জলাশয় সাঁতার কেটে পাড়ি দিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘বাচ্চুর বিচ্ছু’ বাহিনী। শুরু হয় প্রচ- যুদ্ধ। এ সম্মুখযুদ্ধে পাকসেনাদের কয়েকজন নিহত হয় এবং কয়েকজন পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। আমতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী বরগুনা থেকে জানান, ১৪ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি-মুজিব বাহিনী যৌথভাবে এবং জাগ্রত জনতা “জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে থানার প্রথম ফটকে প্রবেশ করে। এ সময় ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া ও তার বাহিনী অস্ত্র তুলে আত্মসমর্পণ করে। পরে আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ওসি রইস উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের আটক করে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। আমতলী মুক্ত দিবস (১৪ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আমতলী রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সান্তাহার নিজস্ব সংবাদদাতা সান্তাহার থেকে জানান, ১৪ ডিসেম্বর বগুড়ার সান্তাহার রেল জংশন শহর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। পাকি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে অবরুদ্ধ সান্তাহার জংশন শহরকে মুক্ত করেন। পাকি পক্ষ ত্যাগ করা তৎকালীন মেজর আব্দুল হাকিম, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এলকে আবুল হোসেন, আজিজার রহমান মোল্লা নান্টু, মনছুর রহমান, ফজলুল হক এবং আমজাদ হোসেনসহ কয়েক কমান্ডারের নেতৃত্বে ৪ শতাধিক গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সান্তাহার শহরের দক্ষিণ, উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে খ- খ-ভাবে সান্তাহার শহরে অবস্থিত পাকি হানাদারদের ওপর হামলা চালিয়ে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিকের রেল লাইন উপড়ে দিয়ে শত্রুদের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ১২ ডিসেম্বর আদমদীঘি থানা সদর মুক্ত করার পর সান্তাহার শহরের প্রবেশ পথ কায়েতপাড়ার নিকট রেল লাইন উপড়াতে গিয়ে সুজিত নামের এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৪ ডিসেম্বর। তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচ- আক্রমণের মুখে এই দিন পাকি হানাদাররা সান্তাহার শহর ছেড়ে নওগাঁর দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
×