ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ নবমের চেয়ে বেশি ভোট পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ নবমের চেয়ে বেশি ভোট পাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নবমের চেয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশি ভোট পাবে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবেই। জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগের ধারে কাছেও কোন দল নেই। একটি জরিপ করে দেখেছি আওয়ামী লীগ অনেক বেশি জনপ্রিয়। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও ভাল করবে। আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো কোন দলই নেই। সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জয় এসব কথা বলেন। ষড়যন্ত্র আছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র আরও বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি বিএনপি আগুন দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করাই একটা চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তো ষড়যন্ত্র লেগেই আছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের কেবল নজর রাখতে হবে, বিএনপি আবারও ওই রকম কিছু যাতে করতে না পারে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাকে হারাতে পারবে না। মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মতামত শুনেন জয়। নেতাদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন জয়। এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় বিকেল ৩টায় ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় পরিদর্শনে এলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর কার্যালয়টি ঘুরে ঘুরে দেখার পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন জয়। পরে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসহ সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলকে সাংগঠনিকভাবে কিভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়- তা নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদ দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবেই। দেশের মানুষের বিশ্বাস ও সমর্থন আমাদের প্রতি চলে এসেছে। আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো দল বাংলাদেশে নেই। আওয়ামী লীগে কিছু গ্রুপিং-লবিং থাকে; তবে আন্দোলন বা নির্বাচনের সময় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে যায়। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় বলেন, ‘আমি প্রার্থী হচ্ছি না। এটি আপনাদের আগাম জানিয়ে রাখছি। আমার উদ্দেশ্যে দলকে ক্ষমতায় আনা। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভ আমার নেই। গত নির্বাচনের মত এবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্যে দলের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালাবেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে তাঁর প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি বড় কথা নয়। নির্বাচনটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হচ্ছে কিনা, সেটিই বড় কথা। আমরা কাউকে নির্বাচনে আসতে বাধ্য করতে পারি না। কেউ যদি নির্বাচনে না আসতে চায়- তাদের কিছু করারও নেই। ওই জরিপটি কিভাবে হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে জরিপ করানো হয়েছে। এতে আমিও জড়িত ছিলাম। আমি মনে করি, এটি ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট এ্যাকুরেট জরিপ’। বিজ্ঞানভিত্তিক এই জরিপ অন্যতম নির্ভুল জরিপ। প্রতিবছরই জরিপ করা হয়। তাই আগামী নির্বাচনে দলটির পক্ষে ল্যান্ডসলাইভ (ভূমিধস) বিজয় হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতেই মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এতদিন নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে দেখভালের পাশাপাশি সিআরআই (আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান) এর কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এই কারণে অনেকদিন ধরেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়নি। সেজন্যই নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসেছিলাম। তিনি বলেন, তাঁরা মতবিনিময়কালে মূলত দুইটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যেসব কাজ করছে, দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে- সেগুলোর ব্যাপক প্রচারের জন্য নেতাদের তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। আরেকটি সুখবর দিয়েছেন তাদের। সেটি হচ্ছে জরিপের ফলাফল নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই দলে গ্রুপিং-লবিং থাকে। তবে আন্দোলন বা নির্বাচনের সময় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে যান। তাই আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন বিরোধ সৃষ্টি হবে না বলেই তিনি মনে করেন। বরং দল থেকে যাকে প্রার্থী করা হবে- তার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। নির্বাচন ও আন্দোলনে আওয়ামী লীগ খুব ঐক্যবদ্ধ একটি দল মনে করেন তিনি। সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের ১২শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব সম্প্রতি বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, এখানেই তো প্রমাণ হয়, তারা কিভাবে মিথ্যাচার করছেন। খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও কোকোর বিরুদ্ধে এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে, তারা কিভাবে অর্থপাচার করেছেন। তাদের দুর্নীতির টাকা দেশে ফেরত এসেছে। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে জিয়া পরিবারের অবৈধ সম্পদের খবর বিদেশী মিডিয়ায় এসেছে। এরপরও মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপি নেতারা কিভাবে বলেন, তাদের কোন দুর্নীতি নেই? এক প্রশ্নের জবাবে কালিয়াকৈরে আইসিটি পার্ক নির্মাণসহ আইসিটি খাতে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতিও তুলে ধরেন জয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ফেসবুক ও টুইটার একাউন্ট খোলার কথা তাঁদের চিন্তা-ভাবনায় আছে বলেও জানান তিনি। বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী এক বছরে বিএনপি-জামায়াত জোট যেন কোন নাশকতা করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান সজীব ওয়াজেদ জয়। সেই সঙ্গে সরকার অনেক ভাল কাজ করছে জানিয়ে সেগুলো মানুষের কাছে ব্যাপক প্রচার করার পরামর্শও দেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা এত ভাল করি, কিন্তু জনগণের মধ্যে সেগুলো তেমনভাবে প্রচার নেই। আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা অনেক ভাল। অন্যদিকে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ভঙ্গুর হলেও তারা মিডিয়াতে সরব রয়েছে। আমাদেরও মিডিয়া বান্ধব হতে হবে। দলের প্রচার বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রচার করলেই আমাদের পক্ষে জনসমর্থন আরও বেড়ে যাবে। তিনি নেতাদের জানান, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আমি নির্বাচনী প্রচারে মাঠে থাকব। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই যাব। মতবিনিময় বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মাহবুবউল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, একেএম এনামুল হক শামীম, ড. হাছান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শম রেজাউল করিম, আবদুস সবুর, প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, মারুফা আখতার পপি, শাহে আলম মুরাদ, হারুনুর রশিদ, মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, পংকজ দেবনাথ এমপি, শুক্কুর মাহমুদ, খন্দকার শামসুল হক রেজা, নাজমা আখতার, অধ্যাপিকা অপু উকিল, সাইফুর রহমান সোহাগ, এসএম জাকির হোসাইন প্রমুখ।
×