ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর ‘প্যাড়াসন্দেশ’ যাচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭

নওগাঁর ‘প্যাড়াসন্দেশ’ যাচ্ছে বিদেশেও

শত বছরের সুখ্যাতি রয়েছে উত্তরের নওগাঁ জেলার ‘প্যাড়া সন্দেশের’। রসনাবিলাস এই প্যাড়া সন্দেশের জনপ্রিয়তা এখন বাংলাদেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও কদর বাড়ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বেশক’টি দেশে এই সুস্বাদু প্যাড়া সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এই প্যাড়া সন্দেশ না হলে এখানকার যেন কোন অনুষ্ঠানই সার্থক হয় না। বর্তমান বাজারে ভাল মানের প্যাড়া সন্দেশ ৩৫০ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঠিক কখন থেকে নওগাঁয় প্যাড়া সন্দেশ তৈরি শুরু হয়েছে, তা জানা না গেলেও মিষ্টির কারিগরদের ধারণা, অন্তত একশ’ বছর আগে থেকেই নওগাঁয় প্যাড়া সন্দেশ তৈরি হয়ে আসছে। প্রথমদিকে এই প্যাড়া সন্দেশ বিভিন্ন পুজোম-পে দেব-দেবীর ভোগ-রাগের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হলেও এখন তা বাড়ি বাড়ি অতিথি আপ্যায়ন এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উপঢৌকন হিসেবে বেশ মর্যাদার প্রতীক হয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। নওগাঁর মিষ্টান্ন জগতে প্যাড়া সন্দেশ একটি বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে ইতোমধ্যেই। নওগাঁ শহরের মিষ্টি তৈরির কারিগররা জানান, শহরের বুড়া কালিমাতার পুজো ম-পের প্রধান গেটের সামনের দোকানে যেটি এখনও ভোগের দোকান হিসেবে পরিচিত, সেই দোকানে প্রথম তৈরি হয় এই প্যাড়া সন্দেশ। সেখান থেকে এই প্যাড়া সন্দেশ কিনে পূজারীরা বুড়া কালি মাতার ম-পে ভোগ নিবেদন করতেন। এখনো এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেবীর ভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছে সকল পারিবারিক অনুষ্ঠানেও। সুস্বাদু আর পুষ্টিগুণে ভরপুর এই প্যাড়া সন্দেশ হয়ে উঠেছে এলাকার বিখ্যাত মিষ্টান্ন। জনশ্রুতি রয়েছে, নওগাঁ শহরের কালিতলার মহেন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে এই প্যাড়া সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। পরে তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব পান। সে সময় বিমল কুমার মোহন্ত নামে মিষ্টি তৈরির এক কারিগরের হাতের স্পর্শে প্যাড়া সন্দেশের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ভোগের ওই দোকানটি কয়েকবার হাতবদলের পর বর্তমানে সুরেশ চন্দ্র মোহন্ত দোকানটি পরিচালনা করছেন। তিনি দোকানে নতুন মিষ্টির কারিগর হিসেবে নারায়ণ চন্দ্র প্রামাণিককে নিয়ে আসেন। সেই থেকে নারায়ণ চন্দ্র প্যাড়া সন্দেশ তৈরি করে আসছেন। তবে বর্তমানে শহরের প্রায় সকল মিষ্টির দোকানেই প্যাড়া সন্দেশ পাওয়া যায়। নওগাঁ শহরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ব্যবসায়ী ‘দাস মিষ্টান্ন ভা-ারের’ স্বত্বাধিকারী নারায়ণ চন্দ্র দাস জানান, প্যাড়া সন্দেশ তৈরির প্রথম ধাপে তরল দুধ কড়া করে জ্বাল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ক্ষীরের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিতে হয়। একপর্যায় চিনি মিশ্রিত ঘন ক্ষীর হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় হাল্কা ঘিয়া রঙের প্যাড়া সন্দেশ। প্রতিটি প্যাড়া সন্দেশ ন্যূনতম আধা ইঞ্চি চওড়া ও ২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এক কেজি সন্দেশ তৈরি করতে প্রয়োজন পড়ে সাত লিটার তরল দুধ। দুধ আর চিনি ছাড়া অন্য কোন উপকরণ থাকে না এই প্যাড়া সন্দেশে। আর সে কারণেই প্যাড়া সন্দেশ প্রায় ১০-১২ দিন স্বাভাবিকভাবে রাখা যায়। তবে কৃত্রিম উপায়ে অন্তত মাসাধিককাল স্বাভাবিক রাখা যায়। এ জন্য বিদেশ থেকে যারা আসেন, বিশেষ করে ভারত থেকে যারা আসেন বা এখান থেকে যারা ভারতে যান, তারা নওগাঁর এই সুস্বাদু প্যাড়া সন্দেশ নিয়ে যেতে ভুলেন না বলে জানান তিনি। আর সে কারণেই প্যাড়া সন্দেশ দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও স্থান করে নিয়েছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×