ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জার্সি নিয়ে ফিফা প্রণীত আইন মানছে না শেখ রাসেল!

চট্টগ্রাম আবাহনী শেখ রাসেল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ ড্র

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রাম আবাহনী শেখ রাসেল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ ড্র

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। ফলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের খেলা অনেকটাই হয়ে পড়েছিল পানসে। তবে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত খেলায় তাদের রুখে দিয়ে পেশাদার লীগ আবারও জমিয়ে তুললো শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেড। স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম খেলায় তারা ২-২ গোলে ড্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে। খেলার শুরুতে উভয় দলই ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে। খেলার প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ১-১। প্রথম লেগে (গত ১২ আগস্ট) প্রথম মোকাবেলায় চট্টগ্রাম আবাহনী জিতেছিল ৩-১ গোলে। কিন্তু ফিরতি লেগে এবার আর জিততে পারলো না তারা। নিজেদের পঞ্চদশ ম্যাচে এটা চট্টগ্রাম আবাহনীর তৃতীয় ড্র। ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা রয়ে গেছে আগেই শীর্ষ অবস্থানেই। তবে তাদের দুই পয়েন্ট খোয়ানোতে লাভবান হলো শেখ জামাল (৩৩), ঢাকা আবাহনী (৩০) এবং সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব (২৭)। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা রাসেলের পঞ্চম ড্র। ২০ পয়েন্ট নিয়ে তারাও আছে আগের পঞ্চম স্থানেই। খেলার সময় মাঠের বাঁ দিকের বাইরের কোণায় দেখা গেল মাটি থেকে অবিরাম ধোঁয়া উড়ছে। ব্যাপার কী? একটু পরেই রহস্য উন্মোচিত হলো, ময়লা-আবর্জনা জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। আর তার ধোঁয়া কখনও মাঠে খেলা অবস্থানরত ফুটবলার-রেফারি এবং কখনও বা গ্যালারির দর্শকের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। ফলাফলÑ চোখ জ্বালাপোড়া এবং অশ্বস্তি। প্রেসবক্সের একজন মজা করে বললেন, ‘কালে কালে আরও কত কিছুই না দেখবো বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে!’ এতদিন হয়ে গেল, তারপর এখনও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র তাদের ফুটবলারদের অস্পষ্ট জার্সি নম্বরের সমস্যা দূর করতে পারলো না! ফিফার নিয়ম অনুযায়ী জার্সিতে নির্দিষ্ট মাপের সংখ্যা বসানো এবং স্পষ্ট রং ব্যবহার করার আইনটি তারা থোড়াই কেয়ার করছে। গত ১৫ নবেম্বর তারা ১-০ গোলে হারিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাকে। সেই ম্যাচে রাসেল নতুন জার্সি পরে মাঠে নামে। কিন্তু এর ফলে ভীষণ ঝামেলা পোহাতে হয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের। কেননা জার্সির নম্বর চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে। নীল-সাদা জার্সির পিঠে নম্বর বসানো হয় লাল রংয়ের। কিন্তু সাদা-নীলের আধিক্যে লাল রং সংবলিত জার্সি নম্বর কেউই পরতে পারছিলেন না। এমনকি টিভির ধারাভাষ্যকাররা পর্যন্ত হিমশিম খেয়েছেন। বারবার ভুল করছিলেন তারা। তাছাড়া দু’দলের খেলোয়াড়দের কেউই তেমন তারকা নন, কাজেই তাদের চেনার উপায়ই ছিল না জার্সি নম্বর দেখে। সেখানেও কিনা এমন গ-গোল। সেদিন ম্যাচ কমিশনার আবদুল হান্নান মিরন বলেন এ বিষয়ে বাফুফের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই রিপোর্টে যে কিছুই হয়নি তারই প্রমাণ হচ্ছে মঙ্গলবারের ম্যাচেও রাসেলের একই কা-! এদিন তারা নামে লাল-সাদা জার্সি পরে। কিন্তু আগের মতোই জার্সির নম্বর অস্পষ্ট। প্রেসবক্সে বসা এক সাংবাদিককে দেখা গেল বাইনোকুলার নিয়ে এসেছেন। অথচ তিনি সেটা ব্যবহার করেও রাসেলের ফুটবলারদের জার্সি নম্বর উদ্ধার করতে পারছেন না! ম্যাচ কমিশনার রকিবুল আলম জানান, ‘আমি অবশ্যই এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দেব।’ কিন্তু কথা হচ্ছে তাতে আদৌ কিছু হবে কী? এক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ছোট দল হলে শাস্তি অবধারিত থাকে, কিন্তু বড় দল হলে তাদের প্রভাবে-চাপে শাস্তি দিতে গড়িমসি করে বাফুফে। শেখ রাসেলের বেলাতেও হয়তো তাই হবে! ম্যাচের ৬ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় একবারের লীগ চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল। নিজেদের সীমানায় চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানার কাছ থেকে বল কেড়ে নেন রাসেলের মিডফিল্ডার মোনায়েম খান রাজু। দেরি না করে তিনি বক্সের প্রায় ৫-৬ গজ দূর থেকে চলতি বলে ডান পায়ের চমৎকার কৌণিক ও মাপা শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। আবাহনী গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ডাইভ দিয়ে ও আপ্রাণ চেষ্টাতেও বল ধরতে পারেননি। বরং পড়ে গিয়ে কোমরে বেশ ব্যথাও পান। কিন্তু তা দেখতে বয়েই গেছে লীগে ব্যক্তিগত প্রথম গোলের সন্ধান পাওয়া রাজুর, তিনি তখন সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মত্ত (১-০)! তবে প্রথমার্ধের শেষদিকে এই অগ্রগামিতার আনন্দ ধরে রাখতে পারেনি ‘বেঙ্গল ব্লুজ’রা। সমতায় ফিরে ক্ষমতা দেখিয়ে দেয় বন্দরনগরীর দলটি। ম্যাচের বয়স তখন ৪৩ মিনিট। রাসেলের সীমানায় ফ্রি কিক পায় এখনও কোন লীগ শিরোপার মুখ না দেখা চট্টগ্রাম আবাহনী। মিডফিল্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্র উঁচু ফ্রি কিকটি রাসেলের বক্সের ভেতর গিয়ে পড়ে। সেই চলতি বলেই অপূর্ব দক্ষতায় ডান পায়ের জোরালো প্লেসিং শটে রাসেল গোলরক্ষক জিয়াউর রহমানকে বোকা বানান আবাহনীর হাইতিয়ান এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও ৩২ বছর বয়সী লিওনেল সেইন্ট প্রিয়ক্স (চলতি লীগে এটা তার প্রথম গোল, চট্টগ্রাম আবাহনীতে যোগ দেন মধ্যবর্তী দলবদলে, হাইতি জাতীয় দলের হয়ে ৪১ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল)। খেলায় ১-১ গোলে সমতা আনে চট্টলার দলটি। দ্বিতীয়ার্ধেও সমানতালে খেলে দু’দল। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ডানপ্রান্ত থেকে রাসেলের বক্সের ভেতর ক্রস ফেলেন আবদুল্লাহ্। সেই বল ড্রপ হেডে জালে পাঠিয়ে আবাহনীকে এগিয়ে নেন দলনায়ক-মিডফিল্ডার জাহিদ হোসেন (২-১)। লীগে এটা তার চতুর্থ গোল। তবে এর ৫ মিনিট পরই আবাহনীর এই আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। ৮৮ মিনিটে রাসেলের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার উত্তম কুমার বণিক লম্বা থ্রো করেন আবাহনীর বক্সে। সেই বল দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে উঠে হেড করে গোল করে রাসেলকে সমতায় ফেরান হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রাঙ্কোয়িস জ্যাকুয়িস (২-২)। শেষ পর্যন্ত ওই স্কোরলাইনেই খেলা শেষ হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই মাঠ ছাড়তে হয় সাইফুল বারী টিটু এবং শফিকুল ইসলাম মানিকের শিষ্যদের।
×