ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল সঙ্কট ॥ ৩০ বছরেও হয়নি আর এস জরিপ

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭

জনবল সঙ্কট ॥ ৩০ বছরেও হয়নি আর এস জরিপ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ নজিরবিহীন জনবল সঙ্কটের কারণে ১৯৮৬ সাল থেকে কচ্ছপ গতিতে চলছে জেলা জোনাল সেটেলমেন্টের বি আর এস জরিপ কার্যক্রম। যে কারণে দীর্ঘ ৩০ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি জনগুরুত্বপূর্ণ আর এস জরিপ। চার জেলার ২১ উপজেলার যশোর জোনে ৪২৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদমঞ্জুরির বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৭০ জন। চূড়ান্ত প্রিন্টের আগে জরিপ যথাযথ যাচাই-বাছাই করা যাঁচ মহরার ৪২টি পদের সবকটিই শুরু থেকেই শূন্য। জনবল স্বল্পতা থাকায় ২ হাজার ৮৫০ মৌজার ভূমি জরিপ, রেকর্ড, প্রিন্ট হস্তান্তরসহ জোনের সার্বিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুরুতে পাঁচ বছরের মধ্যে জরিপ শেষ করার কথা থাকলেও সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ হোঁচট খেয়ে আসছে। ১৯২৬ ও ১৯৬২ সালের ভূমি জরিপের রেকর্ড প্রিন্ট পরচা ও ম্যাপ দিয়ে মূলত ভূমি সেক্টর পরিচালিত হয়ে আসছে। পুরনো ওই জরিপের পর ধানি, ডাঙ্গা, মাঠ, বিল, নদী-নালা, খাল, বিল, হাওড়, বাঁওড়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সরকারী সম্পত্তি, শত্রু সম্পত্তিসহ বিভিন্ন ভার্সনের সম্পত্তিতে সময়ে সময়ে পরিবর্তন আসে। দেশ স্বাধীনের পর সরকার একটি হালনাগাদ চূড়ান্ত ভূমি জরিপের উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা জোনাল সেটেলমেন্টের আওতায় যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল জেলার ২১ উপজেলার ২ হাজার ৮৫০টি মৌজায় কাজ শুরু হয়। ১৯৮৬ সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে ১৯৯১ সলের মধ্যে জরিপ সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যয় ও প্রস্তাবনা থাকলেও দীর্ঘ ৩০ বছরেও তা চূড়ান্ত হয়নি। এটেস্টেশন, অবজেকশন ও আপীলের কাজ এগিয়ে গেলেও বি আর এসের চূড়ান্ত প্রকাশনা হতে আরও সময় লাগবে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, এতে আরও ৪ থেকে ৫ বছর সময় লেগে যেতে পারে। তবে যশোর জোন যদি ডিজিটাল জরিপের আওতায় আনা হয় তাহলে দ্রুত এ সুফল পেতে পারেন এ অঞ্চলের মানুষ। আর এস জরিপে দীর্ঘ সময় লাগার ব্যাপারে সেটেলমেন্টের কর্মকর্তারা চরম জনবল সঙ্কটকে দায়ী করেছেন। বিশেষ করে যাচাই-বাছাই করতে মঞ্জুরিকৃত সেই যাঁচ মহরার ৪২টি পদই শূন্য রয়েছে কাজের শুরু থেকেই। যশোর জোনে ৪২টি উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। এর মধ্যে দুজন বরিশাল জোনে সংযুক্ত আছেন। ২১ উপজেলায় ২১ জন পেসকারের পদ থাকলেও সেখানে একজনও নেই। ভারপ্রাপ্ত ও অন্য কোন পদের লোক বসিয়ে কোনরকম কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার ৪টি পদে লোক নেই। ড্রাফটসম্যান ৭টি পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে চার্জ অফিসারের ২টি পদই শূন্য। এভাবে কারিগরি উপদেষ্টা, স্টোনোগ্রাফার, হিসাব রক্ষক, নাজির, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, গাড়ি চালক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, রেকর্ড কিপার, বেঞ্চ সহকারী, প্রসেস সার্ভেয়ার, খারিজ সহকারী, চেইনম্যান, কম্পিউটার অপারেটরসহ আরও কয়েকটি পদে লোকবল শূন্য রয়েছে। সবমিলিয়ে এখানে পদমঞ্জুরির এক-তৃতীয়াংশ কাজ করছেন। ওই সব পদে মোট ২৩৪টি পদ শূন্য আছে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আরও ১৪ জন কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের বিপরীতে কর্মরত লোকসংখ্যা একেবারেই কম। জোনের কালীগঞ্জ, হরিনাকুন্ডু, মনিরামপুর ও শালিখা উপজেলায় সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা না থাকায় কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খাতাকলমে কর্মরতদের মধ্যে আবার ৫০ জনের মতো বাইরের জোন ও জেলায় কর্মরত আছেন। সবমিলিয়ে বিশাল জনবল সঙ্কটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগুচ্ছে জোনাল সেটেলমেন্টের ২১ উপজেলা। এ ব্যাপারে জেলা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা এএসও এসএম খালিদ হোসেন জানান, স্বল্প জনবলে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে শুরুতেই যে বিশাল জনবল সঙ্কট চলে আসছে তা না হলে আরও আগে জরিপ শেষ হয়ে চূড়ান্ত প্রিন্টের কাজও শেষ হয়ে যেত। তিনি জানান, বিশেষ করে জরিপ চূড়ান্ত করতে যাঁচ মহরারদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪২ যাঁচ মহরার পদ মঞ্জুরি হলেও ৪২টি পদই শূন্য। যে কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে সমন্বয় করে কাজ চলছে। যশোর জোনকে ডিজিটাল জরিপের আওতায় আনা গেলে এ অঞ্চলের মানুষ দ্রুতই সুফল পাবে।
×