ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিপুল রাজস্ব ফাঁকি

রাজশাহীতে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজশাহীতে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে রেজিস্ট্রি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে কম মূল্যে রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে। এর পেছনে রয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একটি সিন্ডিকেট। জেলার পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে একের পর এক জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়েছে। গত এক বছরে সমিতির ১৬ জন সদস্য মোট ৩৭টি দলিলের বিপরীতে সরকারের ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন শুধু ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন দেখিয়ে। ইতোমধ্যে বিষয়টি রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাবেত আলীর নজরে এসেছে। প্রাথমিক তদন্তে এর সত্যতাও মিলেছে। বিষয়টি তদন্তের পর মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারকে নির্দেশনাও দিয়েছেন। বসতবাড়ি ধানি জমি হিসেবে দেখিয়েও রেজিস্ট্রি করা হয়েছে জমি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ৩৭টি দলিল সম্পাদন করা হয়েছে পবা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। সম্প্রতি এসব দলিলের খারিজ (নামজারি আবেদন) করতে গিয়ে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি পবা উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো হাবিবুল ইসলামের কাছে ধরা পড়ে। তিনি সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকদের খারিজের আবেদন নাকচ করে দেন। এরপর জমির শ্রেণী পরিবর্তন ও রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন। তদন্তে সত্যতা পেলে হাবিবুল ইসলাম বিষয়টি পবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলমগীর কবীরকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর কানুনগো তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সরকারী রাজস্ব অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রি না করে কম মূল্যে রেজিস্ট্রি হয়েছে। আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) রেকর্ড অনুযায়ী জমির শ্রেণী উল্লেখ করা হয়নি। এক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কম মূল্যের জমির শ্রেণী উল্লেখ করে দলিলগুলো রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। মূল দলিলে জমির শ্রেণী একরকম এবং খারিজের সময় দাখিলকৃত দলিলের জাবেদা কপিতে শ্রেণী অন্যরকম করা হয়েছে। শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল রেজিস্ট্রি করায় সরকার প্রায় ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৯ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অবগত হবার একদিন পরেই ১৩ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলমগীর কবীর বিষয়টি রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাবেত আলীকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। সহকারী কমিশনারও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সিং মং থোয়াইকে নির্দেশ দেন। জানা গেছে, রেজিস্ট্রিকৃত দলিলগুলো অধিকাংশই কাটাখালী পৌরসভা এলাকায়। এ এলাকাটি রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে এবং রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন। এ এলাকায় জমি বা বাড়ির দাম অনেক বেশি। এ কারণে দলিল লেখকরা বাড়িকে জমি দেখিয়ে বা বাড়ির স্থানে ডোবা পুকুর দেখিয়ে শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আয়নাল হক চারটি দলিলের বিপরীতে দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৬১, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ হোসেন দুইটি দলিলের বিপরীতে ৫৪ হাজার ৩১৮ এবং কোষাধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান চারটি দলিলের বিপরীতে সাত লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৭ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়া বেশি রাজস্ব ফাঁকির তালিকায় রয়েছেন, লুৎফর রহমান তারেক। তিনি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৪, আবু বাক্কার পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৭৮৩ এবং মাহাবুল ইসলাম তিন লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৭ টাকা। জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এসএম আয়নাল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত না। সাব-রেজিস্ট্রার এখনও তাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের প্রতিবেদন অল্প সময়ে মধ্যে পাওয়া যাবে। রাজস্ব ফাঁকির সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শককে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া বিষয়টি ইতোমধ্যে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
×