ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগে ভালবাসুন নিজেকে

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

আগে ভালবাসুন নিজেকে

ভালবাসা কি শুধু অন্যকে দেয়ার জন্য, নিজের জন্য কি আমরা কখনও ভেবেছি? নিজেকে কখনও ভালবেসেছি? প্রিয় বন্ধুটির কোন ভাল খবরে পার্টি দেই আমরা। নিজের কোন কৃতিত্বের জন্য কি কখনও নিজের জন্য কোন গিফট্ কিনেছি? অন্যকে ভালবাসতে হলে নিজেকেও ভাল থাকতে হবে। নিজের জীবনের অর্জনগুলোকে উদযাপন করতে হবে। লিখেছেন-- টুটুল মাহফুজ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এডুকেশনাল সাইকোলজির সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টিন নেফ জানিয়েছেন, নিজের প্রতি সমবেদনা-ভালবাসা দেখানোর সবচেয়ে ভাল উপায় নিজের সঙ্গে কথা বলা। অর্থাৎ, বিপদে কিংবা কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে বোঝানো যে এ রকম সময় সব মানুষের জীবনেই আসে। আত্মকরুণা আপনার জীবনে বিভিন্নভাবে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে প্রাণোচ্ছল জীবন অনেকের জীবনে বেকারত্ব বা কর্মজীবনে নানা রকম ব্যর্থতা আসে। এখন আপনি যদি এ রকম পরিস্থিতির জন্য নিজেকে দোষারোপ করতে থাকেন, তাতে কী অবস্থান কোন পরিবর্তন হবে? হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ইনস্ট্রাক্টর ক্রিস্টোফার জারমারের মতে, ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের পথে ফিরে আসার জন্য নিজেকে সহানুভূতি দেখানোটা জরুরী। তিনি আরও জানিয়েছেন, এর ফলে মানুষ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। সম্পর্কের উন্নয়ন নিজেকে ভালবাসলে আপনার নিজের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে অন্যদের সঙ্গেও আপনার সম্পর্কে ভাল হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে এতে মানুষের সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এতে আপনি অনেক বেশি বিচক্ষণ হয়ে উঠবেন, যা আপনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। একটু কম পারফেকশনিস্ট গবেষকরা দেখেছেন, যে যত পারফেকশনিস্ট, সে নিজেকে তত বেশি কম করুণা দেখায়। নিজেকে পারফেক্ট করার চেষ্টা আপনার চিত্তের এবং জীবনের অনেক শান্তি নষ্ট করে। পারফেক্ট হতে গিয়ে মানুষ নিজের ওপর নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। তাই নিজেকে দয়া করুন, এটা আপনাকে অন্যের প্রতি দয়াশীল হতেও সহায়তা করবে। শারীরিক সুস্থতা যারা শারীরিক কারণে মানসিক চাপ কিংবা হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তাদের জন্য নিজের প্রতি ভালবাসা দেখানোটা খুব জরুরী। এটা শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি দারুণ পদক্ষেপ। যেমনÑ যেসব নারী তাদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তারা নিয়মিতভাবে নিজেকে ভালবাসা-সংক্রান্ত কাউন্সেলিং পেলে এ বিষয়ে মানসিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন। নিজেকে বিচার নয় নিজেকে ভালবাসা মানে অনুপ্রেরণা নয়। এটা নিজেকে অনুভব করা, নিজেকে মূল্যায়ন বা বিচার করা নয়। এটা নিজের ভাল-মন্দ বিচার নয়। এসব মূল্যায়ন হয় সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব করতে গিয়ে কিন্তু নিজেকে ভালবাসতে হবে এ হিসাব থেকে মুক্ত থাকতে। জীবন উপভোগ যারা নিজেকে ভালবাসেন, তারা জীবনকে উপভোগ করেন। তারা গান শোনেন, বই পড়েন, মাছ ধরেন, সাইকেল চালান, ছবি আঁকেন। অর্থাৎ, তারা জীবনের আনন্দ ও সৌন্দর্যকে গ্রহণ করেন, নিজের প্রতি যত্নবান হন। নিজের মিত্র নিজেকে ভালবাসলে নিজেকে নিজের পাশে পাবেন। তখন আপনি নিজের সমালোচক থেকে সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে আবির্ভূত হবেন। বন্ধু যখন বিষণ্ন থাকে, তখন আপনি তাকে প্রেরণা দেয়ার চেষ্টা করেন। একইভাবে নিজেকে ভালবাসলে নিজেই নিজেকে প্রেরণা দিতে পারবেন। আনন্দময় জীবন জীবনকে আনন্দময় করতে চাইলে নিজেকে ভালবাসুন। এতে নিজের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে। জীবনের নানা বাঁকে লুকিয়ে থাকা আনন্দের সন্ধান পাবেন। বেড়াতে যান কয়েকদিন হয়ত কাজ করে হাঁপিয়ে উঠেছেন, কিছুটা সময় নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে পারেন যে কোন জায়গায়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা নিঃসঙ্গতা কাটাতে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করতে পারেন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে। কোথাও আড্ডা হয়ে যাক না একদিন সবাই মিলে, এই ভাল সময়ের স্মৃতিটাই চাঙ্গা রাখবে বেশ অনেকদিন। রান্না করতে ভাললাগে? বিশেষ কোনদিন শুধু নিজের জন্য পছন্দের আইটেমগুলো তৈরি করুন। এরপর অতিথি এলে যেভাবে পরিবেশন করেন, সেভাবে সাজিয়ে আগে একটি ছবি তুলুন। এত রান্না করলেন, বন্ধুদের দেখাতে হবে না? এবার নিজেও একটু তৈরি হয়ে বাতি নিভিয়ে একটি মোম জ্বালিয়ে খেতে শুরু“করুন। এই আয়োজন করতে করতেই দেখবেন নিজের মনে ভাললাগা তৈরি হয়েছে। জন্মদিন যেন কবে? সেদিন প্রিয়া বলছিল, কতদিন কোন উপহার পাই না। কেন মন খারাপ করছেন? আপনার সাধ্যের মধ্যে সুন্দর কোন উপহার কিনুন। আর নিজেকেই গিফট করুন। জন্মদিন বা যে কোন উৎসব, কোন অর্জন সবই সেলিব্রেট করুন, ছোট ছোট উপহারে।
×