ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারকদের চাকরিবিধি গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

 বিচারকদের চাকরিবিধি  গেজেট প্রকাশে আরও  এক সপ্তাহ সময়  পেল রাষ্ট্রপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদনের পরিপেক্ষিতে আদালত আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের চাকরি রাজস্ব খাতে (সরকারী) অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং তাদের ৪র্থ শ্রেণীর স্কেলের সমপরিমাণ বেতন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার, অর্থ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ৩২ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রবিবার আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতে সময় আবেদন করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, শৃঙ্খলাবিধির খসড়া চূড়ান্ত করে সুপ্রিমকোর্টকে দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফেরত এলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুিপ্রমকোর্টে জমা দেয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানবিচারপতি। শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নবেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি আপিল বিভাগে উঠলে দুই দফায় ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। গত ১৬ নবেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধানবিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে। মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নি¤œ আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত বছর ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিমকোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেই সঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। এরপর দফায় দফায় সময় দেয়া হলেও সরকারের সঙ্গে আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে থাকে। গ্রাম পুলিশের বেতন নিয়ে রুল ॥ গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের চাকরি রাজস্ব খাতে (সরকারী) অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং তাদের ৪র্থ শ্রেণীর স্কেলের সমপরিমাণ বেতন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার, অর্থ, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ৩২ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ৪৬ হাজার গ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৫ জনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার ও আইনজীবী রাসেল। অন্যাদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। গত ২৭ নবেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের টুপিরবাড়ির হাটকুশারা এলাকার বাসিন্দা গ্রাম পুলিশ লাল মিয়াসহ ৫৫ জন গ্রাম পুলিশ এ রিট দায়ের করেন। বর্তমানে প্রায় ৪৬ হাজার গ্রাম পুলিশদের একজন দফাদার বেতন প্রায় তিন হাজার চারশ এবং মহালদার পান তিন হাজার টাকা। পরে হুমায়ুন কবির বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ বাহিনী বিভিন্ন আইনের অধীনে কাজ করে আসছে। সর্বশেষ স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ সালের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ আইনের অধীনে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) গ্রাম পুলিশ বাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা ও চাকরির শর্তাবলি সম্পর্কিত বিধিমালা তৈরি করা হয়। কিন্তু এ বিধিতে তাদের কোন শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়নি। এদিকে এক দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রাম পুলিশদের ৪র্থ শ্রেণীর স্কেল নির্ধারণে অর্থ বিভাগকে চিঠি দেন। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো সিদ্ধান্ত তারা না নেয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয় বলে জানান হুমায়ুন কবির পল্লব।
×