ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. চিত্তরঞ্জন দাশ

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

(পূর্ব প্রকাশের পর) টম উয়িলসনের প্রথম প্রেম ‘লেক লুইস’ কিকিং হরস্ রিভার ভ্যালি দেখতে গিয়ে আমরা মূল গাড়ি বহর থেকে ছিটকে পড়েছিলাম। তবে এই অঞ্চলের মোটামুটি সব পথঘাট শ্রীমান কিশোর সোম এবং শ্রাবন্ত চৌধুরীর একছত্র চেনা জানার তালিকায় স্থায়ী আসন করে নিয়েছে সেটা বুঝতেই পারা যায়। সুযোগ পেলেই এই দুটি মানিকজোড় যে ভাল ঘুরতে পটু সেটা বুঝতে খুব বেশি সময় ব্যয় করতে হয়নি। প্রথম পরিচয়ে তাদের বাক পটুতায় সেটা বোঝা গিয়েছিল। বাক পটুতায় তারা কেউ হার মানতে রাজি নয়। কিশোর গাড়ি চালাতেও কম পটু নয় তবে কোন কোন সময় অসাবধানতা বশত হঠাৎ ব্রেকে পায়ের প্রেসারটা বেশি হয়ে যায়। হাসি ঠাট্টা গল্প স্বল্পে লেক লুইস আসতে সময়টা কেমনে যে চলে গেল বুঝতে পারলাম না। এখানেও সহজে পাকিং পাওয়া গেল না। পর্যটন মৌসুমের একেবারে শেষ সময় তারপরও আমাদের মতো শেষ ফেরিতে উঠতে যাত্রীর সংখ্যা কমার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা হাঁটার ব্যবস্থা অন্যথায় লুইস সুন্দরীর সাক্ষাৎ পাওয়া দুষ্কর। সাক্ষাৎ প্রার্থীর সংখ্যাটাও নিতান্ত কম নয়। সারিবদ্ধভাবে শূন্য পাত্র হাতে তারা যাচ্ছে। সাক্ষাত শেষে মনের বাসনা পূর্ণ করে ভর্তি পাত্রে ফিরে আসছে। আমরাও নিশ্চয় খালি পাত্রে ফিরব না। যত বড়, যত খালি পাত্রই আসুক না কেন, অফুরন্ত ভা-ার কোন কিছুতেই কমবে না ফুরাবে না। যা ছিল তাইই থেকে যাবে। এই হলো লেক লুইস্রে অনন্ত অসীম ভা-ারের গভীরতা। লেক লুইস্ সুন্দরীর পাদদেশে গিয়ে নত শিরে তাকে বার বার প্রণাম জানালাম। রূপ তার কবেকার হারাতে পায় না দিশা। কোন দিকে তাকাব, তার দিকে, নাকি ডাইনে, বাঁয়ে, নাকি পিছনে যে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিয়ে রেখেছে তার দিকে। না বিশেষ কোন দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। এক পলকে সবাইকে চমকে দেওয়া যায়। চমকে দেওয়া যায় নাকি নিজে চমকে উঠতে হয়! আসলে নিজেই চমকানোর মতো একটা ব্যাপার। লেকের নীল-সবুজাভ জল রাশি, ডাইনে বাঁয়ে আকাশ চুম্বী পাথরের মনুমেন্ট, পিছনে দুই পাহাড়কে আড়াল করে ঘাড়টা একটু নিচু করে এক রাশ সাদা বরফের আস্তরণ মাথায় নিয়ে উঁকি মারছে আর একজন। কাকে ফেলে আপনি কাকে পছন্দ করবেন? কাউকেই ছাড়ার নয়। একই সঙ্গে সকলকে নিয়েই বাঁধলাম সুখের এ ঘর। লেক লুইস্ আইসফিল্ড পার্কওয়ের সব থেকে দক্ষিণে সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন শহর। বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল লেকের পাড়ে বসে, একটার পর একটা বিভিন্ন কৌনিকে ছবি তুলে, তবু যেন মন ভরে না। লেকের ধারে এত বেশি পর্যটকদের আগমন দেখে যেন মনে হচ্ছে আজ মার্কেট ডে তাই এত ভিড়। শান্তিতে থাকার উপায় নেই। তবে অভিজ্ঞ জনের অভিমত হলো লেক লুইস্ সংলগ্ন পর্বত মালায় একটি বারের জন্য হলেও হাইাকং যাওয়া, না হলে প্রকৃতপক্ষে এর কিছুই দেখা হলো না। হাইকং এ গেলে নরম সুমিষ্ট আবহাওয়ায় অবগাহন করার পাশাপাশি পর্বত শিখরে বন্য পরিবেশে ইংলিশ চা ঘরের এক কাপ চা পান করার অনিন্দ সুন্দর মুহূর্তটা উপভোগ করা যাবে না। তবে হাইকিংয়ের উত্তম পথ হলো ভিক্টোরিয়া গ্লোসিয়ারের দিক থেকে, তাহলে লেকের পিছনের দিকের ভিউটা উপভোগ করে জনম স্বার্থক হবে। এবারে আর জনম স্বার্থক করা গেল না। ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাকল জনম স্বার্থক করার অভিপ্রায়। (চলবে)
×