ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ প্রকল্প

দেশের জনসংখ্যার অর্ধাংশ নারী। তার ওপর অসহায়, নির্বিত্ত এবং সুবিধাবঞ্চিত এই গোষ্ঠী বিভিন্ন সামাজিক আবর্জনার জালে আটকা পড়ে আছে। সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত মৌলিক অধিকার অর্জনে নারীরা আজও নিজেদের সঠিক স্থানে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। সংখ্যায় অপ্রতুল কিছু নারী তাদের সম্মান এবং স্বাধীনতাকে আয়ত্তে আনলেও সিংহভাগ গোষ্ঠীই এখনও যে তিমিরে সেই তিমিরেই। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো ৫টি নৈতিক দাবি মেটানো আজও অনেক নারীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অন্ন, বস্ত্র কিংবা বাসস্থান যদিও বা জোটে শিক্ষাকার্যক্রমে পড়ে পিছিয়ে। এক সময় অনেক টানাপেড়েনে শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারলেও চিকিৎসাসেবা হয়ে যায় সুদূরপরাহত। সুতরাং সব অধিকার একই সঙ্গে জীবনের অনুষঙ্গ করা সত্যিই এক অকল্পনীয় ব্যাপার। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো জরুরী বিষয়গুলো অবহেলিত হলে বিপাকে শুধু নারীরাই পড়বে না দেশ ও জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মও সঙ্কটময় অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। একটি সুস্থ এবং শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে পারেন একজন যোগ্য এবং সচেতন মা। সুতরাং মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে আছে একজন শিশুর আগামী দিনের ভবিষ্যত। মা যদি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং সবল না থাকেন তাহলে গর্ভকালীন অবস্থা থেকে শুরু করে, সন্তান প্রসবপরবর্তী শিশু প্রতিপালন সবই বিপন্ন হতে সময় নেবে না। তবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাংলাদেশ এখন নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। যেমন মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানো থেকে শুরু করে গর্ভকালীন সময়ে ভাতা প্রদান এবং শিশুর বিশেষ সেবা প্রদানে নানা রকম আর্থিক অনুদান সরকার থেকে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে। নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির আর একটি বিশেষ বিপজ্জনক পর্যায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া। একদম প্রথম অবস্থায় এ রোগ চিহ্নিত করা গেলে নিরাময় হতেও সময় লাগে না। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি এমন এক মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে গ্রামবাংলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণে। মহিলা সমিতির সহ-সভানেত্রী ড. মারুফী খান স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় এই পিছিয়ে পড়া গোকর্ণে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টির জন্য হরিদাসী উইম্যান এন চাইল্ড কেয়ার এ্যান্ড নিউট্রিশন সেন্টারের শুভ উদ্বোধন করেন। ২০১১ সাল থেকে এর শুভযাত্রা শুরু হয়। উদ্দেশ্য হতদরিদ্র, অসচেতন, অশিক্ষিত এবং মূর্খ নারী ও শিশুদের পর্যাপ্ত পুষ্টির ওপর বিশেষভাবে নজর দিয়ে এই নতুন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এখানে গর্ভবতী মা এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সন্তান সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখলেও পরবর্তীতে মায়ের স্বাস্থ্য পরিচর্যাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে এই কল্যাণমূলক সেবা কেন্দ্রটি নারী ও শিশুর পুষ্টিকর খাবার এমনকি দুগ্ধ পানের মতো প্রয়োজনীয় আহারও সরবরাহ করে থাকে। নিয়মমাফিক গর্ভকালীন মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে এই মহতী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। শুধু তাই নয় মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন স্তন ক্যান্সার কিংবা জরায়ুর নানা মাত্রিক জটিলতা সবকিছুই এখানকার ল্যাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বিশ্ব ব্রেস্ট ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই রক্ষণশীল গোকর্ণ গ্রামে স্তন ক্যান্সার ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত এই ক্যাম্পে ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকসহ চারজন ডাক্তার এই স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্যাম্পটি পরিচালনা করেন। এসএ ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রকল্পের ডাক্তার লুৎফুন্নেসা ও ডাঃ মেহেরজাবীন উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী এই কার্যক্রমের আওতায় নারীদের স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে বিশেষ সচেতনতা বৃদ্ধিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপরও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ২৭ অক্টোবরের এ অনুষ্ঠানে প্রায় ১০৯ জন মহিলাকে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. মারুফী খান আগত নারী ও শিশুদের সচেতনতা তৈরি করতে তার গুরুত্বপূর্ণ ও জোরালো মন্তব্য উপস্থাপন করেন। এ ছাড়াও উপস্থিত মহিলাদের জরায়ুর মুখে ক্যান্সার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জনের জন্য মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র পুস্তিকা মূদ্রণও বিতরণ করা হয়। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×