ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টফোনে ডেটা নিয়ে আর নেই ভাবনা- গুগল চালু করল ‘ডেটালি’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ ডিসেম্বর ২০১৭

স্মার্টফোনে ডেটা নিয়ে আর নেই ভাবনা- গুগল চালু করল ‘ডেটালি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মার্টফোনে ডেটা সাশ্রয়ের দিকে সকলেরই নজর। তবুও কি আমরা সাশ্রয় করতে পারি! বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনেকটা হিসেব করেই ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার করেন। বিশেষ করে মোবাইল কোন এ্যাপ কত ডেটা খরচ করছে কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন এ্যাপ ডাটা খরচ করছে কী না তা জানেন না অনেকেই। এজন্য গুগল ৩০ নবেম্বর থেকে বাংলাদেশে অবমুক্ত করল ডাটা কন্ট্রোল ও সেভিং এ্যাপ ‘ডেটালি’। এই এ্যাপ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য মোবাইল ফানের ডেটা বুঝতে পারা এবং তা কন্ট্রোল ও সেভ করার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক। ডেটালি যেকোন এ্যান্ড্রয়েড ৫.০ (ললিপপ) বা আরও আধুনিক সংস্করণের মোবাইল ফোনেই ব্যবহারের উপযোগী। গুগল দাবি করছে স্মার্টফোনে এই এ্যাপ ইনস্টল করলে ৩০ শতাংশ মোবাইল ডেটা সেভ করা যাবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ্যাপটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য অবমুক্ত করার ঘোষণা দেন গুগলের এশিয়া প্যাসিফিকের ইন্ডাস্ট্রি হেড গোলাম কিবরিয়া। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গুগলের এশিয়া প্যাসিফিকের মার্কেটিং কনসালটেন্ট হাশমি রাফসানজনি। গুগলের এশিয়া প্যাসিফিকের ইন্ডাস্ট্রি হেড গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘গুগল তাদের সাতটি এ্যাপ দিয়ে ইতোমধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি আরও এক বিলিয়ন ইউজার তৈরি করতে চায়। এজন্য বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। বিশেষ করে এসব দেশের মানুষকে ইন্টারনেটে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দিতে ডেটা সেভিং এ্যাপ ডেটালি অবমুক্ত করল। যার মধ্যে ইন্টারনেট ডেটা কন্ট্রোল ও ডেটা সেভ করা যাবে। এছাড়া, গুগল বাংলাদেশে আইসিটি ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করছে। ইতোমধ্যে এদেশে গুগল বাস, গুগল এ্যাডসেন্স এবং গুগল স্ট্রিট ভিউ চালু করেছে। সেইসঙ্গে গুগল চাইছে এদেশে ইন্টারনেট ইউজার বাড়ুক। এজন্যই ডেটা সেভিং এ্যাপ ডেটালি অনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করা হলো। ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৯ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই বিপুল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য নিত্যনতুন সেবা আনতে গুগল কাজ করছে।’ গুগলের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ডেটালি নামের এ্যানড্রয়েড এ্যাপটি গুগল প্লে-স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। এ্যানড্রয়েড ৫.০ কিংবা তারও বেশি উন্নত এ্যানড্রয়েডের উন্নত সংস্করণের যে কোন স্মার্টফোনে এটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ইনস্টল করা যাবে। শুধু বাংলাদেশ নয় যেসব দেশের ব্যবহারকারীরা প্লে-স্টোর ব্যবহারেরর সুযোগ পান তারাও এ্যাপটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। ডেটালি নামের নতুন এ্যাপটির মাধ্যমে জানা যাবে কোন এ্যাপ কত ডেটা খরচ করছে। ব্যাক গ্রাউন্ডে কোন এ্যাপ ডেটা খরচ করছে কী না তাও জানা যাবে। এছাড়াও ডেটা কন্ট্রোলের জন্য বিশেষ ফিচার রয়েছে এ্যাপটিতে। ফলে যে কোন এ্যাপে ডেটা খরচ বন্ধ করে রাখারও সুযোগ আছে। সারাবিশ্বে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ডেটা ব্যবহারে বড় সমস্যায় পড়েন এবং এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। এই সমস্যার দুর্দান্ত সমাধান দেবে ডেটালি। দুনিয়া জুড়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ওপর গুগলের পরিচালিত ব্যাপকভিত্তিক এক গবেষণায় ওঠে আসে যে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অনেকেইে তাদের স্মার্টফোনে ডেটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিয়ে সমস্যায় পড়েন এবং উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। বিশেষ করে স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নবাগতরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন, যারা ‘নেক্সট বিলিয়ন ইউজার’ নামে পরিচিত। স্মার্টফোনে নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা শুধু যে ডেটা ব্যবহারে ভারসাম্য রাখা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন থাকেন তাই নয়, বরং তাদের স্মার্টফোন থেকে ডেটা কখন কীভাবে কোথায় চলে যায় সেটিও বুঝতে পারেন না। কারণ কোন এ্যাপ্লিকেশনে (এ্যাপ) কীভাবে ডেটা রাখতে হবে তা তারা জানেন না বলে নিয়ন্ত্রণও করতে পারেন না। এসব সমস্যার সমাধানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের ডেটালিতে রয়েছে চারটি বিশেষ ফিচার বা বৈশিষ্ট্য। বৈশিষ্টগুলো হচ্ছেÑ ডেটা সেভার ॥ ডেটালিতে ডেটা সেভার এ্যাপ থাকায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা যখন-তখন ডেটা ব্যবহার এবং কনটেন্ট ও ইনফরমেশন বা তথ্য আপডেট তথা হালনাগাদ করে নিতে পারবেন। ডেটালির ডেটা সেভারটিতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এ্যাপ-বাই-এ্যাপ অর্থাৎ এ্যাপ অনুযায়ী ডেটা কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে। এর ফলে একজন ব্যবহারকারী যে এ্যাপে ডেটা রাখতে চান সেখানেই থাকবে বা ডেটা সেভ হবে। যেসব ব্যবহারকারীরা ডেটালি এ্যাপটি টেস্ট করা সুযোগ পেয়েছেন তারা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মোবাইল ডেটা সেভ করেছেন। ডেটা সেভার বাবল ॥ ডেটালিতে রয়েছে ডেটা সেভার বাবল। যখন একজন ব্যবহাকারী কোন এ্যাপে যাবেন বা ঢুকবেন তখন ডেটালির এই ডেটা সেভার বাবল দেখা যাবে। ফলে ওই ব্যবহারকারী সহজেই ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন। আবার যখন ওই এ্যাপে ডেটা ব্যবহার করা হবে তখন ডেটা সেভার বাবল ডেটা ব্যবহারের কারেন্ট রেট বা অবস্থা দেখাবে। এর ফলে একজন ব্যবহারকারী সহজেই ওই এ্যাপের ডেটা কি করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কিংবা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। মোবাইল ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডেটা সেভার বাবল একটি স্পীডোমিটারের মতো কাজ করবে। পারসনালাইজড এ্যালার্ট ॥ ডেটালি এ্যাপে আছে পারসনালাইজড এ্যালার্ট। এর ফলে কোন এ্যাপে প্রচুর পরিমাণে ডেটা ব্যবহার শুরু হলে, অর্থাৎ কী পরিমাণ ডেটা ব্যবহার হয়েছে সেটি দেখা যাবে। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে এই এ্যালার্ট দেখা যাবে। ওয়াই-ফাই ফাইন্ডার ॥ ব্যবহারকারীরা কখনও কখনও অধিক পরিমাণে ডেটা ব্যবহার করতে চান। এ ধরনের মুহূর্তে ব্যবহারকারীদের একটি পরিকল্পনা থাকতে হয়, যেমন- কখন তারা এইচডি ভিডিও দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে হাই-ব্যান্ডউইথ বা উচ্চগতিসম্পন্ন পাবলিক ওয়াই-ফাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য ডেটালিতে রাখা হয়েছে ওয়াই-ফাইন্ডার, যা ডেটালি কমিউনিটির পরিচালিত নিকটস্থ নেটওয়ার্কের খোঁজ বা তথ্য জানিয়ে দেবে। তখন একবার নেটওয়ার্ক পেয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা নিজেরাই তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক রেট করতে পারবেন। আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে ভিজিট করুন ডেটালির ওয়েবসাইট : datally.google.com.
×