ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন এয়ারফোর্সে যোগদান করা হলো না বাঁধনের

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

মার্কিন এয়ারফোর্সে যোগদান করা হলো না বাঁধনের

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ আমেরিকান এয়ারফোর্সে যোগদান করা হলো না বিমান প্রকৌশলী বাংলাদেশের মেধাবী যুবক এম হাসান রহমান বাঁধনের (২৬)। গত রবিবার আমেরিকার কানসাসে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি নিহত হন। তার বাড়ি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের তেলীপাড়ায়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ঢাকার আবেদ হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রকৌশলী বাবা মজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) প্রিন্সিপাল অফিসার মা হাসানারা বেগম বাকরুদ্ধ। বাঁধনের বাবা মুজিবুর রহমান জানান, বাঁধন খুব মেধাবী ছিল। ছোটবেলা থেকেই পাইলট হওয়ার এবং বিমান বানানোর প্রতি আগ্রহী ছিল। সব সময় বিমান বানানোর কথা আলোচনা করত। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের রানী বিলাসমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ও পরে রাজধানীর উত্তরা হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় বাঁধন। সবশেষে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশে লেখাপড়া চুকিয়ে ফেলে। পরে বিমান প্রকৌশলী হওয়ার আশায় আমেরিকার কানসাসে উইচিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয় বাঁধন। সে পড়াশোনা চলাকালীন ক্যাম্পাসে চাকরি (ক্যাম্পাস জব) করে। দক্ষতার সঙ্গে ‘ক্যাম্পাস জব’ শেষ করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে ইরে’তে চাকরি করার অনুমতি দেয়। এর প্রেক্ষিতে আমেরিকান এয়ারফোর্সে যোগদানের উদ্দেশে বাঁধন কিছুদিন আগে ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয় (১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৭ নম্বর পেয়ে)। গত অক্টোবর মাসে সেখানে তার যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু সে দেশের সরকারী সিদ্ধান্তের যোগদান প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছিল। এদিকে সে ওই দেশের একটি কোম্পানিতে চাকরি করছিল। কিন্তু আমেরিকান এয়ারফোর্সে যোগদানের আশা তার আর পূরণ হলো না। রবিবার বেলা ১১টার দিকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। সোমবার রাতে ফোনে বাঁধনের বন্ধু নাঈম এ হত্যাকা-ের কথা জানায়। বাঁধনের বাবা মজিবুর রহমান আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা উচ্ছৃঙ্খল ছিল। তারা কোন লেখাপড়া বা কোন কাজ করত না। তারা বিশ্ববিদালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছিনতাই করত। বাঁধন বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসের বর্ণনা দিতে গিয়ে এসব কথা জানিয়েছে। বাঁধনের কোন শত্রু নেই, শত্রুতা হওয়ারও কথা নয়। তার সঙ্গে কারো শত্রুতা রয়েছে এমন কথা সে কখনও আমাদের বলেনি। বাঁধনের মা হাসনা আরা বেগম বলেন, প্রায় সাড়ে ৬ বছর আগে ২০১১ সালের জুনে আমেরিকায় যায় আদরের ধন বাঁধন। এরপর আর কোন ছুটি পায়নি, দেখাও হয়নি তার সঙ্গে। গত বৃহষ্পতিবার রাত ১২টার পর মোবাইলে ছেলের সঙ্গে প্রায় ৩১ মিনিট কথা হয়। এসময় ছেলের শরীর-স্বাস্থ্য, পড়াশোনা, চাকরি, থাকা-খাওয়া বিষয়ে কথা হয়। এ সময় বাঁধন জানায়, বিমান তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রথমে নিজেদেরকেই আকাশে উড়তে হয়। আকাশে ওড়ার অনুমতির পর আর ভিসার প্রয়োজন হয় না। তখন আমাকে আমেরিকা নিয়ে সেখানে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে সে। কিন্তু আজ সব শুধুই স্বপ্ন ও স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল। তিনি বলেন, বাঁধনের ও তার ছোটবেলার বন্ধু নাঈম আমেরিকার কানসাসে একই সঙ্গে থাকত। ছেলে নিহতের খবর সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রথম জানানো হয়। দুর্বত্তরা গুলি করে বাঁধনকে হত্যা করেছে বলে পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর তাকে জানানো হয়। বাঁধনের একমাত্র বোন মারজানা রহমান ভাবনা বলেন, ভাইয়ার সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য পাঁচ বছর। ভাইয়া আমাকে সন্তানের মতো দেখাশোনা করত। দেশে থাকতে কখন কি লাগবে সবকিছু ভাইয়া দেখত। আমার মাথায় চুল আঁচড়িয়ে দিয়ে ক্লিপ আটকিয়ে দিত। পড়াশোনার খোঁজখবর নিত।
×