ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবাসন প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের চরম ভীতি, অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় কয়েক হাজার

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রত্যাবাসন প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের চরম ভীতি, অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় কয়েক হাজার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ সামরিক অভিযান ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত আচরণ, গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার সহায় সম্পদ লুটে নেয়ার ঘটনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে ব্যাপক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে আছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক হওয়ার পর এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়ে আছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস সোমবার মিয়ানমার সফরে গেছেন। প্রধানত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে তার এ সফর বলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর আগামী ৩০ নবেম্বর ফ্রান্সিস বাংলাদেশ সফরের কর্মসূচী রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বিশেষজ্ঞ মহল। মিয়ানমার সফরের আগে পোপ ফ্রান্সিসকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি আগে থেকেই এটি বলে আসছেন। এখন দেখার বিষয় মিয়ানমার সফরকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে তার অবস্থান কি হচ্ছে। এদিকে, গত ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে প্রতিদিন দলে দলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার এ প্রথম ওপার থেকে এপারে কোন রোহিঙ্গা আসার তথ্য মিলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার থেকে কক্সবাজারে তিনদিনব্যাপী আইওএনএস মাল্টিলেটারাল মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সমুদ্র মহড়া শুরু হওয়ায় সাগর এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ কারণে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন এলাকা সন্নিহিত স্থানসমূহে কোন ধরনের নৌযান চলাচল করছে না। এছাড়া নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নজরদারি এবং বিজিবি’র তৎপরতা বহুগুণে জোরদার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ব্যাপক নিরাপত্তার বলয়ে থাকার কারণে কোন নৌযান না পেয়ে রোহিঙ্গারা সোমবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পায়নি। তবে সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর মংডুতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখনও অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়ে আছে। অপরদিকে, দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সোমবার উখিয়ার আশ্রিত ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তারা প্রাণে বেঁচে থাকতে পারবে কিনা এ প্রশ্নে বড় ধরনের উৎকণ্ঠায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিয়ানমার সরকার অতীতে কয়েক দফায় বহু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আবারও উৎপীড়ন নিপীড়ন বহুমুখী অত্যাচার এবং গণহত্যার কারণে তাদের অনেকেই পালিয়ে এসেছে। আবার ফিরে গেলে তাদের ভবিষ্যত কি হবে এই দুঃশ্চিন্তায় তাদের পেয়ে বসেছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই ফিরে যেতে চায়, আবার অনেকে চায় না। কেউ কেউ বলেছে, ফিরে গিয়ে কি লাভ। তাদের তো সেখানে কিছুই নেই। এছাড়া নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকার আগের অবস্থানেই রয়েছে। আবার রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ ফিরে যেতে আগ্রহী। তারা বলছে, সবকিছু হারানোর পরও সেদেশের সরকার যদি নির্যাতন না করে তাহলে তারা নতুন করে সেখানে জীবনকে চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাবে। আবার এমন রোহিঙ্গার সংখ্যাও কম নয় যারা এদেশে আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আশ্বস্ত হয়ে আছে। তারা থেকে যেতে আগ্রহী। রোহিঙ্গাদের আরেকটি অংশ আছে যাদের বক্তব্য হচ্ছেÑ তারা সেদেশে ছিল এমন কোন কাগজপত্র তাদের কাছে নেই। সুতরাং অনিশ্চিত অবস্থায় সেদেশে গিয়ে পুনরায় নির্যাতন, নিপীড়ন যে চালানো হবে না এমন নিশ্চয়তাও তাদের মাঝে নেই। নৌকা ও ট্রলারের অভাবে সোমবার মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রতিদিন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ চলতে থাকলেও ৯২দিনের মধ্যে মাত্র দুইদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেনি। তবে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে মংডুর দংখালী চরে অপেক্ষামান বলে জানা গেছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করার পর রাখাইনে খবর পাঠিয়ে সকল রোহিঙ্গাকে তাড়াতাড়ি ধেয়ে আসতে বলছে একটি মহল ও একাধিক এনজিও সংস্থা। রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য সকল রোহিঙ্গা এখানে এসে জড়ো হলে তাদের শক্তি সঞ্চার হবে। তারা যে কোন দাবি বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখী হতে সাহস পাবে। বিদেশীদের সাহায্য সহযোগিতা বৃদ্ধি হবে। আর কয়েকটি এনজিও সংস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা ফেরত দীর্ঘায়িত করতে পারলে তাদের দ্বিগুণ লাভ হবে। বিদেশী অর্থ এনে লুটেপুটে খেতে পারবে। তাদের চাকরিও দীর্ঘায়িত হবে। এ লক্ষ্যে একটি বিশেষ মহল ও এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নানা রকম উস্কানি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
×