ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী জটিলতায় চার বছর লাশ হিমঘরে

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

আইনী জটিলতায় চার বছর লাশ হিমঘরে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ আইনী জটিলতায় হিমঘরে পড়ে রয়েছে নিপার মরদেহ প্রায় চার বছর ধরে। ভালবেসে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার কারণে মরদেহ নিয়ে এমন আইনী লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের ছেলে ও মেয়ের পরিবার। মামলাটি বিচারিক আদালত ঘুরে দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে বিচারাধীন। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিপার মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। রবিবার লাইজুর বাবা ও নিপার বাবার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, উচ্চ আদালত যাকে মরদেহ দেবে সেটাই তারা মেনে নেবেন। তারা দ্রুত এর নিষ্পত্তি চান। জানা যায়, লিপা রানী রায়ের সঙ্গে একই উপজেলার ডোমার বোড়াগাড়ি ইউনিয়ন পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলামের প্রেমের স¤পর্ক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যায়। এরপর লিপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হোসনে আরা ইসলাম নাম ধারণ করে এবং নীলফামারী নোটারি পাবলিক ক্লাবের মাধ্যমে এফিডেভিটে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলামকে বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিল। এ অবস্থায় মেয়েটির পিতা অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় লাইজুকে নেয়া হয় কারাগারে। নিপাকে রাখা হয় নিরাপত্তা হেফাজতে রাজশাহীতে। পরে আদালতের আদেশে নিপাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয় তার পরিবার। লাইজুও জেল খেটে বের হন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হুমাউন ফরিদ ওরফে লাইজু ইসলাম বিষপান করে আত্মহত্যা করে। অপরদিকে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার বাড়ির থাকা অবস্থায় কীটনাশক পান করে নিপা। তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে মারা যায়। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। এরপরের দিন ১১মার্চ/২০১৪ নীলফামারী জেলার হাসপাতাল মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই দিন লাইজুর বাবা জহুরুল ইসলাম নিপাকে পুত্রবধূ দাবি করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দাফনের জন্য নীলফামারী আদালতে রিট করেন। একই দিন আবার নিপার বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটুট থাকায় ডোমার থানা পুলিশ আদালতে ১২ মার্চ/২০১৪ একটি প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত ঘটনা নিষ্পক্তি না হওয়া পর্যন্ত নিপার মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে সংরক্ষণের আদেশ প্রদান করে। ফলে সেই হতে মেয়েটির মরদেহ সেখানে রয়েছে।
×