ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লার হার ৩০ রানে ॥ তামিমের চার হাজার রান

মুস্তাফিজ ফেরায় জয়ের ধারায় রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

মুস্তাফিজ ফেরায় জয়ের ধারায় রাজশাহী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই দলের মধ্যকার লীগপর্বের প্রথম লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জিতেছিল। এবার কুমিল্লাকে হারিয়ে দিল রাজশাহী কিংস। শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম খেলায় কুমিল্লাকে ৩০ রানে হারিয়েছে রাজশাহী। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজের পর ইনজুরির জন্য সফর শেষ হয়ে যায় মুস্তাফিজের। এরপর আর খেলায় ফিরতে পারেননি। শনিবার রাজশাহীর হয়ে বিপিএলে ফিরেছেন মুস্তাফিজ। ফিরেই ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। মুস্তাফিজ ফিরতেই জয়ের ধারাতেও ফিরেছে রাজশাহী। মুস্তাফিজের এমন ফেরার দিনে অবশ্য কুমিল্লার অধিনায়ক ওপেনার তামিম ইকবাল ৬৩ রান করে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার রান করেছেন। এখন তার রান ১৪৯ ম্যাচে ৪০১৫ রান। ম্যাচটিতে টস জিতে রাজশাহী আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে সফলও হয়। অধিনায়ক ড্যারেন সামির অপরাজিত ৪৭ ও ইংল্যান্ডের লুক রাইটের ৪২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৫ রান করে রাজশাহী। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩ উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ সামির (৪/৯) দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে কুলিয়েই উঠতে পারেনি কুমিল্লা। সঙ্গে ২ উইকেট করে নেয়া স্মিথ ও মুস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিং যোগ হওয়ায় তামিমের ৬৩ ও শোয়েব মালিকের ৪৫ রানের পরও ১৯.১ ওভারে ১৫৫ রান করতেই গুটিয়ে যায় কুমিল্লা। এই জয়টি রাজশাহীর জন্য অনেক দরকার ছিল। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে ছিল দলটি। এই জয়টি না পেলে শীর্ষ চারে থাকার আশাই হয়তো শেষ হয়ে যেত। অপরদিকে কুমিল্লারও জয়টি দরকার ছিল। জিতলেই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকার সঙ্গে সেরা চারে থাকার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু কুমিল্লা এখনই সেই সম্ভাবনা তৈরি করতে পারেনি। এরপরও ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চার দলের একটিতেই আছে কুমিল্লা। আর রাজশাহীর অবস্থানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কুমিল্লা-রাজশাহী ম্যাচটি শেষে সাত দলের বিপিএলের পঞ্চম আসরে নিচ থেকে তিন দলের মধ্যে আছে রাজশাহী। রাজশাহীর বড় স্কোরকে টপকে জয় পেতে হলে শুরু থেকেই ধুন্ধুমার ব্যাটিং করা জরুরী ছিল। সেই কাজ করতে গিয়ে ৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে কুমিল্লা। তবে এরপর তামিম ইকবাল ও শোয়েব মালিক যে ব্যাটিং করেন তা অসাধারণ। দুইজন মিলে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। দলকে দ্রুত ৯১ রানেও নিয়ে যান। এমন সময়ে ২৬ বলেই ৪৫ রান করে ফেলা শোয়েব মালিক আউট হয়ে যান। তাতেও তামিম থামতে রাজি নন। ব্যাটিং ঝড় তুলতে থাকেন। তবে মালিক আউটের পর হাফসেঞ্চুরি করার পর বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টি২০তে ৪ হাজার রান করার পর ১২৫ রানেই সাজঘরে ফেরেন তামিম (৬৩)। তখন যেন কুমিল্লার জয়ের আলো নিভে যায়। এরপর কুমিল্লার বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যেন সামিল হন। ১৪৩ রানেই ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তবে রাজশাহী যেখানে ১৮ ওভারে ছিল ১৪১ রানে, কুমিল্লা সেখানে ১৭ ওভারেই ১৪৯ রান করে ফেলে। কিন্তু কুমিল্লার যে কোন সামির মতো ব্যাটসম্যান নেই। তাই হারতেই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি কুমিল্লা।চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে যে দলই ব্যাটিং করছে বিশাল রান গড়ছে। তাতে জয়ও মিলছে। রাজশাহীর ভাবনাতে সে রকমই কিছু ছিল। টস জিতলেই ব্যাটিং নিয়ে বড় স্কোর গড়ে প্রতিপক্ষকে শুরুতেই বিপাকে ফেলতে হবে। রাজশাহী তা করেও দেখিয়েছে। শুরুতেই ডোয়াইন স্মিথ ও মুমিনুল হক মিলে ৪৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এমন সময়ে স্মিথ (১৯) আউটের পর রাজশাহীর ইনিংসে ভাটা দেখা দেয়। ৮৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে রাজশাহী। ওভারও চলে যায় ১২টি। তবে এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। লুক রাইট ও জেমস ফ্রাঙ্কলিন মিলে দলকে সেখান থেকে ১২৩ রানে নিয়ে যান। সেখান থেকে আবারও রাজশাহীর ব্যাটিং ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। ১২৩ রানে গিয়ে ফ্রাঙ্কলিন আউটের পর আর ১০ রান যোগ হতেই রাইটও সাজঘরে ফেরেন। আর ৬ রান যোগ হতে মেহেদী হাসান মিরাজও একই পথের পথিক হলে বড় স্কোর গড়ার সম্ভাবনা যেন ভেস্তে যেতে থাকে। ১৮ ওভারে গিয়ে ১৪১ রান যোগ হয় রাজশাহীর স্কোরবোর্ডে। সঙ্গে উইকেট যায় ৭টি। এখান থেকে ২ ওভারে ১৬০ রানের মতোই হতে পারে। এমন যখন সবার ভেতর ধারণা হয়েছে তখনই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করতে শুরু করে দেন ড্যারেন সামি। মুহূর্তেই দলকে ১৮৫ রানে নিয়ে যান। নিজে ১৪ বলেই ৬ ছক্কা ও ১ চার মেরে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। আর একটি বল যদি পেতেন, আর বাউন্ডারি হাঁকাতে পারতেন তাহলে বিপিএলে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যেতেন সামি। ২০১২ সালে ১৬ বলে করা পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙ্গে দিতেন। কিন্তু বলই আর ছিল না। তাতে যেন কুমিল্লার বোলাররা জানপর নাই বাঁচেন। সবচেয়ে বেশি হাঁফ ছেড়েছেন যেন সাইফউদ্দিন। তার করা শেষ ওভারটিতে যে চার ছক্কা ও এক বাউন্ডারির সঙ্গে ২ রান নিয়ে ৩০ রান একাই নিয়েছেন সামি। এক ওভারেই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন সামি। তাতে করে রাজশাহীও বিশাল স্কোর গড়ে ফেলে। যে স্কোরটিই শেষ পর্যন্ত রাজশাহীকে জয় এনে দেয়। স্কোর ॥ রাজশাহী কিংস ইনিংস ১৮৫/৭; ২০ ওভার (সামি ৪৭*, রাইট ৪২, মুমিনুল ২৩, জাকির ২০; সাইফউদ্দিন ৩/৫০, হাসান আলী ২/৩৮)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস ১৫৫/১০; ১৯.১ ওভার (তামিম ৬৩, মালিক ৪৫, হাসান ১৬; সামি ৪/৯, স্মিথ ২/২৭, মুস্তাফিজ ২/৩২)। ফল ॥ রাজশাহী কিংস ৩০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ড্যারেন সামি (রাজশাহী কিংস)।
×